‘বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে…।’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছোটনদী’র বর্ণনায় যেসমস্ত নদীর উল্লেখ করা চলে তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রাহ্মণী নদী৷ ‘নদীর পাড়ে বাস, ভাবনা বারো মাস৷’—নদী সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণার উলটো স্রোতে বয় ব্রাহ্মণী৷ শান্ত একটি নদী। লোকমুখে ‘গৃহপালিত নদী’ নামেও পরিচিত৷
পুনর্ভবা নদীর শাখানদী ও টাঙ্গনের উপনদী ব্রাহ্মণী। গঙ্গারামপুর থানার সুকদেবপুর পঞ্চায়েতের দেবীপুরে পুনর্ভবা নদী থেকে উৎপত্তি। গঙ্গারামপুরের বুক চিরে বেলবাড়ি অঞ্চলের জয়পুর, সয়রাপুর, তিলনা হয়ে তপন ব্লকের হিরণ্যবাটি, চন্দ্রাইল, মুক্তারামপুর পেরিয়ে মালদা জেলার নালাগোলার কাছে খোকশন গ্রামে টাঙ্গনে মিশেছে। ছত্রিশ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীর সিংহভাগ দক্ষিণ দিনাজপুরে৷
যমুনা, আত্রেয়ী, শ্রীমতী, ইছামতি, পুনর্ভবা, টাঙ্গনের মতো জেলার দাপুটে নদীর সংসারে ব্রাহ্মণী নিতান্তই এক মন্দভাগ্যের স্রোতস্বিনী৷ অথচ প্রচলিত মিথ অনুসারে আদি ঐতিহাসিক সময় থেকে মধ্যযুগ পর্যন্ত মানব বসতির চিহ্ন বহনকারী নদী৷ যার সৃষ্টি হয়েছিল বাণরাজার উদ্দেশ্য পূরণে৷ কী সেই উদ্দেশ্য? শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধ প্রস্তুতি তখন তুঙ্গে৷ বাণরাজধানী পরিখা পরিবেষ্টিত৷ সমস্যা হল ঊষারানির প্রাসাদ নিয়ে! বাণরাজা শিবের শরণাপন্ন৷ পুনর্ভবা পেরিয়ে ঊষারানির প্রাসাদকে পরিখা বেষ্টনী করতে জন্ম হল ব্রাহ্মণী নদীর৷ তাছাড়া বাণরাজা ভেবেছিলেন দুটো নদী পেরিয়ে শ্রীকৃষ্ণ সৈন্যরা আক্রমণ করতে সাহস দেখাবে না৷ যদিও ইতিহাস উলটপুরাণ গায়৷ এক ব্রাহ্মণীর জেদের কাহিনীও প্রচলিত ব্রাহ্মণীর নামকরণে৷
উলটপুরাণই যেন ভবিতব্য ব্রাহ্মণীর৷ গভীরতা হারিয়ে মৃতপ্রায়৷ নদী না মাঠ বোঝার উপায় নেই৷ সংবৎসর প্রবাহিণী নদীতে এখন বর্ষাতেই জলের দেখা মেলে৷ পান্ডেপাড়া, জয়পুর, বিজলিঘাটের মাঠে নদীর জলে পুষ্ট সবজি এখন দূর অতীত৷ নদীয়ালি মাছ, ট্যাংরা, স্যারনপুঁটি, বোয়াল, তিনকাঁটা, দাঁড়কা, মৌরলার প্রাচুর্য কেবলমাত্র স্মৃতির পাতায়৷ কালীতলায় ব্রাহ্মণী যেন আবর্জনার স্তূপ! নদী ভরিয়ে মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির অভিযোগও উঠেছে৷ চওড়া নদীর দু’পাশ দখলে নিয়েছে কংক্রিটের সাম্রাজ্য৷ গতিহীন এঁদো ডোবার আকারের ব্রাহ্মণী যেন বুকে পাথরচাপা গান্ধারীর প্রতীক৷ দুজনেই নারী৷ একজন হারিয়েছে শতপুত্র৷ অন্যজন শত সম্ভাবনা৷
পরিচ্ছন্ন তবে চোখে কাপড় সেঁটে নেই নদীপ্রেমী থেকে সমাজপ্রেমীরা৷ সমাজের দ্যোতক নদী- স্লোগান হয়েছে গান৷ চোখের সামনেই যে ব্রাহ্মণী নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে তাকে পুনরুদ্ধার করে গতিপথ ফেরানোর দাবি তুলেছে নানা সংগঠন। নদী সংস্কারের দাবিতে, ‘ব্রাহ্মণী অন হুইলস’ হচ্ছে৷ ব্রাহ্মণীর উৎস থেকে সংগমস্থল পর্যন্ত সাইকেল যাত্রায় সচেতনতার বার্তা দিয়েছে। সংস্কার ও সমীক্ষার দাবিও উঠছে৷
তবুও তো প্যাঁচা জাগে-শিয়রে লোকসভা ভোট৷ প্রতিক্ষণেই চলছে প্রচার৷ প্রচারের প্রতিশ্রুতিতে উঠে আসছে বিলুপ্তপ্রায় তাঁতশিল্প, নীলডাঙ্গার সেতু সংস্কার, এইমস হাসপাতাল প্রসঙ্গ৷ শুনতে শুনতে ব্রাহ্মণী যেন তলিয়ে যাচ্ছে অভিমানের অতলে৷ ব্রাহ্মণী নদীর প্রতিশ্রুতিতে সবাই নিশ্চুপ কেন? সব প্রতিশ্রুতি উড়ো খই নয়, সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে বাণগড়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব নির্ণয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পদক্ষেপে৷ তেমন পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি কী ব্রাহ্মণী নদী সংস্কারে দেওয়া যেতে পারে না! ব্রাহ্মণী যে বাঁচতে চাইছে৷
(লেখক গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা। প্রবন্ধকার)
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: একে তো ঘরের মাঠে লখনউ সুপার জায়ান্টসের (Lucknow Super Giants) কাছে…
কানকি: মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনায় (Bus Accident) মৃত্যু হল ২ জনের। আহত চার বাংলাদেশি সহ ১৩…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: যাত্রীবোঝাই চলন্ত বাসে আগুন (Bus catches fire) লেগে মৃত্যু হল ৮…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: মাঝে ক’দিন স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে বঙ্গে। ফলে তীব্র গরম থেকে কিছুটা…
শিলিগুড়িঃ মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে ১৫০০ টাকা দিতে হল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। যে পরিবার…
দার্জিলিংঃ পর্যটকদের অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে শনিবার থেকে বাড়তি দুটি জয়রাইড টয়ট্রেন চালাবে দার্জিলিং হিমালয়ান…
This website uses cookies.