বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫

নীতিপুলিশদের না থামালেই যত সমস্যা

শেষ আপডেট:

 

  • অভিজিৎ পাল

আজ আমরা প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বহু এগিয়ে গেলেও আজও পাড়ায় পাড়ায় দেখা মেলে তথাকথিত সমাজের ‘হোতাদের’। তাদের প্রতিভা বিশাল! তারা একাধারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ। তারা রাজনীতি বোঝে রাজনীতিকদের থেকেও বেশি! এদেরই একটি শাখা হল নীতিপুলিশ।

এরা যে শুধু আমাদের বাংলায় আছে তা নয়। এদের প্রসার, প্রভাব কমবেশি দেশজুড়েই নাকি বিস্তৃত। এরা কান পেতে থাকে সমাজে কোথায় কী ‘ন্যায়-অন্যায়’ হচ্ছে। কোথায় এদের খবরদারি করতে হবে সেটাও এরা ভালোমতোই জানে। এরাই হল মোরাল পুলিশ বা নীতিপুলিশ।

এরা গ্রামেও আছে, শহরেও আছে। এমনকি কোথাও কোথাও পরিবারের মধ্যেও আছে। কার বাড়ির ছেলে কার সঙ্গে ঘুরছে, কোন বাড়ির মেয়ে কত রাতে বাড়ি ফিরল, এর বাড়িতে এত বন্ধুবান্ধব কেন আসে ইত্যাদি ইত্যাদি, এরা সব জানে। আর এদের সফট টার্গেট হল নারীরা। এরা জানে না, কলকাতা, নয়াদিল্লির মতো শহরে মেয়েরাও নাইট শিফটে কাজ করতে পারে, কাজের ক্ষেত্রে দুজন সহকর্মীর মধ্যে একটি পেশাদার সম্পর্ক থাকতে পারে। সমকামিতা এদেশে আর অপরাধ নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিকঠাক সুযোগ পেলে এরা এক-একজন ভালো গোয়েন্দা হতেই পারত। কিন্তু বাধা পড়েছে শিক্ষায়। এদের শিক্ষায় হয়তো সেই চেতনা নেই। কারণ চেতনা থাকলে তারা এভাবে মানুষের সমস্যায় খবরদারি করত না। হয়তো তারা নিজের জীবনে চরম অসুখী বা হতাশাগ্রস্ত। তাদের জীবনে মনোরঞ্জনের অভাবও একটা কারণ হতে পারে। সেই কারণে তারা বাইরে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয় রসদ খুঁজে বেড়ায়। হয়তো তারা নিজের পরিবারে চরম অসুখী।

নীতিপুলিশের বাড়বাড়ন্তর সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট জড়িয়ে। তাদের হয়তো দেশের আইন ব্যবস্থার প্রতি পুরো আস্থাও নেই। তাই তারা নিজেরাই নিজেদের মতো নিদান দেয়। কোথাও কোথাও আবার সালিশি বসায়। এই নীতিপুলিশরা এতই ক্ষমতাবান, এরা নাকি কোথাও কোথাও আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তথাকথিত ‘সম্পদ’। এর ‘ডানহাত’ অমুকের ‘বামহাত’। এর পর যদি কোনও ধর্মের ট্যাগ এদের ওপর পড়ে যায়, তাহলে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

সাধারণ ছাপোষা বাঙালিরা আবার একটু ঘরকুনো। আবার শুধু বাঙালিদের দোষ দেওয়া যায় না। মানুষের একটা বৈশিষ্ট্য এই যে, যতদিন কোনও ব্যাপার নিজের ওপর না আসে, ততদিন সব ব্যাপারে এক আশ্চর্য শীতঘুম দেয়। শহরাঞ্চল অপেক্ষা গ্রামাঞ্চলে এদের দাপট কিঞ্চিৎ বেশি হতে পারে। প্রশ্ন হল, এমন আর কতদিন চলবে?

আজকের যুগ ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততম হয়ে চলেছে। মানুষের দরকার অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সহ জীবনধারণের সব সুযোগসুবিধা। তাই এটাই ভেবে আশ্চর্য লাগে যে, নীতিপুলিশগিরি করার এত সময় ওরা কীভাবে পাচ্ছে! কোথাও কোথাও নাকি আবার গালভরা নাম দিয়ে নানা সংগঠনও করা আছে।

আজ আমরা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি যেখানে আমরা আমাদের প্রাচীনত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারছি না পুরোপুরি, অথচ আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। এই সময়ে এগিয়ে যাবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সমাজের কিছু বস্তাপচা সংস্কার ও নামধারী কিছু কর্ণধার। এসব থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে সমাজের অগ্রগতি ঘটবে না। তাই নীতিপুলিশদের থামাতেই হবে।

(লেখক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। শিক্ষক)

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

সন্ন্যাসীর ভিক্ষে চাওয়া সহজ, কিন্তু বিদেশে!

শেখর বসু শিকাগো আর্ট ইনস্টিটিউটের সিঁড়িতে বসে আছি। বেলাশেষের আলো...

উত্তরে কৃষি বিপ্লব ভুট্টার হাত ধরে

  ময়ুখ ভট্টাচার্য্য এক নীরব বিপ্লব যেন। মাঠপর্যায়ে কাজ করা...

শুধু বিরিয়ানি? শুধু একদিনের পরীক্ষা?  

  রম্যাণী গোস্বামী কলেজের সিক্সথ সিমেস্টারের পডুয়াদের ছিমছাম ফেয়ারওয়েল...

বাংলায় ‘উনিশে মে’ মর্যাদা পায় না কেন

পার্থ চৌধুরী বাংলা ভাষার জন্য আত্মবলিদানে’র সূত্রে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক...