প্রায় প্রতিদিনই উৎসবের রাজ্যে ইদানীং মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকের ‘ফল’ নিঃসন্দেহে খানদানি ইভেন্ট। বিজয়ীদের নিয়ে বাবা, মা, বিদ্যালয়, পরিজন স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাসে মাতবে, কারও বা সীনা বেশি টান হবে।
নক্ষত্র ঝলমলে এই আকাশের নীচেই বিছিয়ে থাকে মন খারাপেরও গুমোট পৃথিবী।
মুখ ভার নামী শিক্ষায়তনের। মেধাতালিকায় ঠাঁই নেই। কারও ঘরে দাঁত ঘসটানো ‘দশজন মাস্টার। তাও এই রেজাল্ট? মুখ দেখাব কীভাবে?’ বাজারে ধাক্কার আতঙ্কে প্রাইভেট টিউটরেরও কপালে ভাঁজ।
বিজ্ঞাপনের শব্দ উলটিয়ে বলাই যায় –‘পড়শির গর্ব আমার ঈর্ষা!’
‘খারাপ কোথায়? প্রায় সবাই পাশ? অ্যাবাভ নাইন্টিও তো কতজন!’
‘তাতে কী? মেধাতালিকাতে তো নাম নেই।’
স্টার, ফার্স্ট ডিভিশনই যেখানে গুরুত্ব পায় না, যার তাও নেই, সে কীভাবে আড়াল খুঁজবে তার কূলকিনারা ভেবে অস্থির। শুধু রেগুলারদের দেখিয়ে ফ্র্যাকশনকে পরের পূর্ণমানে রাউন্ডেড করে ‘ফেস সেভিং’ কিছু একটা ব্যবস্থা অথবা আশার অবোধ সান্ত্বনা ‘এবারের ব্যাচটাই এরকম। পরেরবার দেখবেন…’
কয়েক বছর আগেও ফল প্রকাশের পরে কচি মুখের যে সরল উচ্ছ্বাস মাঠঘাটে দেখা যেত, এখন কি যায়? ভণিতা ছাড়াই বলা যায় ‘না’। কীভাবে থাকবে? সবখানেই তো তালিকার ছড়াছড়ি। জেলা, মহকুমা, ওয়ার্ড, পঞ্চায়েতে সরকারি বেসরকারি সিলিং-এ নাম যার আছে সেই তো প্রকৃত কৃতীজন- সংবর্ধনার গর্বিত ‘হকদার’। উত্তরীয় পাবে তারাই, ভাইরালও ওরাই হবে। বাকিরা যেন ছাপাখানার অন্ধকারের নিশ্চিত ভবিতব্যে বলিপ্রদত্ত অমলকান্তি।
একটা অবজেক্টিভ ভুল করে লিস্টের বাইরে যে জন, বিয়ের জন্য চলে গিয়েও সব নস্যাৎ করে ফিরে চারপাশের ফিসফাস এড়িয়ে পরীক্ষা দেওয়া মেয়েটা কিংবা সংসারের জোয়ালে ক্লান্ত ছেলেটির শুধু ‘পাশ’ কি নিছক সান্ত্বনার অভাজন ‘কাগজ’? প্রথম প্রজন্ম, বন্ধ চা বাগান, প্রান্তিক বনবস্তি, চুল্লু মাতোয়ারা মহল্লার উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েরা… ওদের ঘাম রক্তের কৃতিত্ব নেই?
প্রশ্ন, সিলেবাস, অনুদানের অভিন্নতাই কি প্লেইংফিল্ড লেভেল করে? কাল একই ‘রিং’-এ একইরকম বক্সিং গ্লাভস দিলে আমরা টাইসনের সঙ্গে লড়াইয়ে রাজি হব?
কিছুজনকে নিয়ে উচ্ছ্বাস অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে না তো অপরকে? প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো শিক্ষার্থীটির বিদ্যালয়ে খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, স্কুল সাজানো থেকে সাফাইয়ে আন্তরিকতা- সব মূল্যহীন- সত্য শুধু তালিকায় নাম।
তালিকায় যারা নেই, যাদের নাম সংবাদপত্র ছাপবে না, মার্কস বলতে যারা কুণ্ঠায় সকরুণ- এই ফলাফল তাদের গায়ে স্টিকার সেঁটে বলতে পারবে জীবনে তারা সাফল্যের দরিয়ায় পাল তুলতে পারবে না? বলা সম্ভব?
অন্যদের কথা থাক, আলোকপ্রাপ্তদেরও এই পক্ষপাত আচরণ সত্যিই পীড়াদায়ক। সাফল্য ব্যর্থতার ক্ষণে এঁরাই তো শেখাবেন ‘দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ। বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে৷।’ দাবি করবেন, তোতা কাহিনী নয়, পরীক্ষা হোক অন্তর্নিহিত গুণের প্রকাশের বিচ্ছুরণ। প্রতিযোগিতার আবহে প্রচুর চাপ ছেলেমেয়েদের। আরও বিমর্ষ করলে খাদের কিনারায় চলে যাবে ওরা। উন্নত দেশে মেধাতালিকা আছে? সর্বভারতীয় বোর্ডে? কর্কশ শোনালেও বলতে হবেই – বন্ধ হোক ‘মেরিট লিস্ট’ কালচার। সমাদর হোক সকলের।
(লেখক শিলিগুড়ির বাসিন্দা। শিক্ষক)
চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: কোচবিহারে (Cooch Behar) কৃষি ব্যবস্থায় নতুন দিক খুলতে চলেছে। এবার কৃষি দপ্তরের…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ রবিবার উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ায় এক মহিলাকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছিল এক কেন্দ্রীয়…
জয়ন্ত ঘোষাল কংগ্রেস কান্ডারি রাহুল গান্ধি একদা এক একান্ত সাক্ষাত্কারে আমাকে বলেছিলেন, ‘অধীর চৌধুরী একজন…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: আগে ছিলেন কানাডার (Canada) নাগরিক। ২০২৩ সালে ভারতের নাগরিকত্ব (Indian citizenship)…
তাপসী লাহা ছোটবেলায় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি কোনওদিন। ঝলমলে রাংতার শৈশব বড়জোর পুলিশ হওয়ার কথা…
This website uses cookies.