কোচবিহার: বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকি। জাপানি প্রজাতির এই আমের দাম ভারতীয় টাকায় প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। এবার উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের মাটিতে এই বহুমূল্য মিয়াজাকি আম ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক দম্পতি। অভিজিৎ সরকার ও রাখি সরকার নামে উত্তর খাগড়াবাড়ির বাসিন্দা ওই দম্পতি নিজের বাড়ির বাগানে আপেল, আঙুর, হরেক রকমের ফল-ফুলের পাশাপাশি জাপানি প্রজাতির মিয়াজাকি আম ফলিয়েছেন। যা দেখতে ভিড় করছেন অনেকেই।
ছোট থেকেই বাগানের শখ অভিজিৎবাবুর। পেশায় কোতোয়ালি থানার পুলিশ এই আধিকারিক ও তাঁর স্ত্রী রাখিদেবী মিলে বাড়িতেই বাগান তৈরি করেছেন। প্রায় ৪০০ গাছ রয়েছে। বাগানের কোথাও ধরে রয়েছে আপেল আবার কোথাও আঙুর। এলাচ, স্ট্রবেরি, সবেদা, বেল, কমলা, মোসাম্বি সহ বহু প্রজাতির ফুলের গাছও রয়েছে। তবে সবচেয়ে নজর কেড়েছে মিয়াজাকি আম। বছরখানেক আগে টাকাগছের এক নার্সারির মালিক পঙ্কজ দে সরকারের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকায় একটি মিয়াজাকি আমের চারা এনে লাগান। পঙ্কজবাবু জানান, জাপানি প্রজাতির এই আম আগে ভারতের একমাত্র মধ্যপ্রদেশে পাওয়া যেত। এখন সেখান থেকে কিছু জায়গায় চারা পাঠানো হয়। তাঁরা নদিয়া থেকে চারা এনে অভিজিৎবাবুর বাগানে বুনেছিলেন। বর্তমানে অবশ্য বাংলাদেশের কিছু জায়গাতেও এই আম পাওয়া যায়।
বাগানে চারা রোপণের পর বছরখানেক ধরে তার পরিচর্যা শেষে গাছে মুকুল আসে। রাসায়নিক সার সেখানে ব্যবহার করা হয়নি। গোবর সার, খইল ভেজানো জল ও সবজি পচা জল দেওয়া হয় গাছের গোড়ায়। দু’দিন পর পর গোটা গাছকে জল দিয়ে স্নান করানো হয়। কিছু মুকুল ও ছোট আম ঝরে পড়লেও বর্তমানে গাছে তিনটি আম রয়েছে। এই আমের আঁটি খুবই ছোট। শাঁস থাকে বেশি। বেগুনি, কালচে ও সবুজের সংমিশ্রণের এই আমের এক-একটির ওজন ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। কিছুদিন আগে বীরভূমের একটি মসজিদে মিয়াজাকি প্রজাতির আম হয়েছিল। ১০ হাজার ৬০০টাকায় একটি আম বিক্রি হয়। সাধারণত এধরণের আম নিলামেই বিক্রি হয়। তবে নিজেদের শখে চাষ করা আম নিলাম করতে চান না সরকার দম্পতি। গাছ পরিচর্যার ফাঁকে রাখী সরকার বলেছেন, তারা শখের জন্যই বাগানে গাছ লাগিয়েছেন। তবে এটি বিক্রি করবেন না। আম পাকার পর পরিবার, প্রতিবেশীদের নিয়ে আমটি অল্প অল্প করে খাবেন বলেই আশায় রয়েছেন তাঁরা।
বর্তমানে আমের মরশুম চলছে। বাজারজুড়ে বাহারি ধরণের আম। তার মাঝেই কোচবিহারের মাটিতে জাপানি আমের চাষের খবরে কৃষকমহলেও যথেষ্ট আলোড়ন পড়েছে। জেলা উদ্যান ও পালন বিভাগের আধিকারিক বিপ্লব সরকার বলেন, ‘এই প্রজাতির আমে কপার, সালফার সহ পুষ্টিগুণ অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া এই প্রজাতির আম দুষ্পাপ্য হওয়ায় এর দাম এতো বেশি।’