রায়গঞ্জঃ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে জেলা ভিত্তিক কাট অফ মার্কস প্রকাশ করতেই শোরগোল উত্তর দিনাজপুরে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ফেল করেও ২০১৭ সালে প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি পেয়েছেন কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা বরুন চন্দ্র রায়। এমনটাই নাকি দাবি পর্ষদের। দুইদিন আগে হাইকোর্টের নির্দেশে পর্ষদের তালিকা প্রকাশিত হতেই দেখা যায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ১০ শতাংশের কম নম্বর পেয়েও শিক্ষকের চাকরি পেয়েছে সে। যদিও পর্ষদের প্রকাশিত তালিকা মানতে চাননি শিক্ষক বরুন চন্দ্র রায়। তার দাবি, মাধ্যমিকে ৪৬৩ এবং উচ্চমাধ্যমিকে ৫৪৬ পেয়েছে। কিন্তু পর্ষদের তালিকায় দেখাচ্ছে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হইনি। আমার সব কিছু ঠিক আছে। আমি ডিএলএড করেছি ওডিএল মোডে। বাংলায় এমএ আছে। বরুন চন্দ্র রায় জানান, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী করনদিঘি ব্লকে প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরিতে যোগ দেই। দুই বছর পর দেওগাঁ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে আসি। এখন কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে মঙ্গলবার জেলা ভিত্তিক কাট অফ মার্কস প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। তারপরই শোরগোল পড়ে যায়। তালিকা খতিয়ে দেখে জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ফেল করেও প্রাথমিকে চাকরি মিলেছে। বহু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাকরি প্রাপকের উচ্চমাধ্যমিকের স্কোর শূন্য। আবার বহু প্রশিক্ষণহীন চাকরি প্রাপক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দশ শতাংশের নিচে নম্বর পেয়েও চাকরি পেয়েছেন। উত্তর দিনাজপুর জেলায় এমন শিক্ষকের নাম প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। প্রাথমিকের প্যানেল নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন যোগ্য ও বঞ্চিত প্রার্থীরা।
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকাভুক্ত শেষ প্রার্থীর কাট-অফ নম্বর প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। জেলা, ভাষা মাধ্যম, জাতি ও ক্যাটাগরিভিত্তিক কাট-অফ নম্বর প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ২৫ পাতার তালিকায় মেধাতালিকাভুক্ত হওয়া প্রার্থীর প্রাপ্ত টেট, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রশিক্ষণ, ইন্টারভিউ, অ্যাপ্টিটিউড, এক্সট্রা কারিকুলামে প্রাপ্ত নম্বর ও মোট নম্বর দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ মে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনে কাট-অফ মার্কসের তালিকা প্রকাশ করে পর্ষদ। বরুনের বাবা জয়দেব রায় জানান, ছেলের সার্টিফিকেট নিয়ে গন্ডগোল চলছে শুনেছি। কবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে জানিনা, কিন্তু এমএ পাস করেছে। ওর চাকরিটা চলে গেলে সমস্যায় পড়ে যাব। আমার সময়ে ঘুষ দিয়ে চাকরি হতো না। এখন এইসব শুনতে হচ্ছে।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) দুলাল সরকার বলেন, এর আগেও বরুনবাবু আমার কাছে এসেছিলেন। আমি ওনাকে বলেছিলাম বোর্ডে গিয়ে দেখা করতে, উনি গিয়েছিলেন। আজ শুনতে পেলাম এই জেলায় একজন শিক্ষকের নাম কাট অফ মার্কসে রয়েছে। কিন্তু যে মার্কসটা ওনার জমা হয়েছে সেটা যথাযথ নয়। বোর্ড কাট অফ মার্কসের তথ্য প্রকাশ করেছে। কিন্তু যেটা বাস্তব ওই শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো ঘাটতি নেই। আমি পর্ষদকে জানিয়েছি।