সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: সরকারি কোয়ারান্টিন সেন্টারের অব্যবস্থা ও খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এলাকাবাসীই কোয়ারান্টিন সেন্টার খুললেন। পঞ্চায়েত প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বুধবার আলিপুরদুয়ার-১ ব্লকের সিরুবাড়ি গ্রামে প্রাইমারি স্কুলে কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলেন এলাকার মানুষ।
সূত্রের খবর, এই গ্রামের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক কেরল থেকে ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তাঁরা দু-একদিনের মধ্যে এলাকায় পৌঁছবেন। তাঁদের জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকার মানুষ। এলাকাবাসীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে ব্লকের পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ।
এদিন সিরুবাড়ি ২ নম্বর বিএফপি স্কুলের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, কয়েকদিন আগে এলাকার মানুষ পঞ্চায়েত, স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বৈঠক করে কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলার সিদ্ধান্ত নেন। স্থির হয়েছে, কম ঝুঁকিপূর্ণ যেসব রাজ্য থেকে এই গ্রামের বাসিন্দারা আসবেন, তাঁদেরকেই গ্রামের পাশের এই কোয়ারান্টিন সেন্টারে রাখা হবে। গ্রামের পরিযায়ীরা নিজ খরচেই এখানে থাকবেন। পরিজনরা সামাজিক দূরত্ব মেনে খাবার সরবরাহ করবেন। এলাকার মানুষ সংশ্লিষ্ট স্কুল ও গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্তের কথা জানান। সব মহল থেকে সবুজ সংকেত মেলায় এদিন ওই স্কুলে কোয়ারান্টিন সেন্টারের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়।
এই বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা প্রেমানন্দ বর্মন বলেন, ‘সিরুবাড়ি গ্রামেরই যাঁরা বাইরে থেকে ফিরবেন তাঁদের জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ রাজ্য থেকে ফিরলে এখানে রাখা হবে না। কেরল থেকে কয়েকজন রওনা দিয়েছেন। তাঁরা এখানে থাকবেন। পরিজনরা সামাজিক দূরত্ব মেনে খাবার সরবরাহ করবেন।’
জানা গিয়েছে, আলিপুরদুয়ার জেলার প্রতিটি ব্লকে সরকারি কোয়ারান্টিন সেন্টার রয়েছে। আবার প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়ও কোয়ারান্টিন সেন্টার খোলা হয়েছে। এইসব সেন্টারের আবাসিকদের নানা অভিযোগ ও চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত পরিচালিত যোগেন্দ্রনগর হাইস্কুলের কোয়ারান্টিন সেন্টার থাকা সত্ত্বেও সিরুবাড়িতে এলাকাবাসীর এই উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিরা।
এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার-১-এর বিএমওএইচ ডাঃ ভাস্কর সেন বলেন, ‘এরকম উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। স্থানীয়রা আমাকেও বিষয়টি জানিয়েছেন। সিরুবাড়ির ওই কোয়ারান্টিন সেন্টারে পরিযায়ী শ্রমিকরা আসলে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত সেখানে গিয়ে খোঁজ নেবেন। কারও উপসর্গ দেখা দিলে লালার নমুনা পরীক্ষা করা হবে।’
পূর্ব কাঁঠালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সরোদিনি বর্মন বলেন, ‘সিরুবাড়িতে এলাকাবাসী ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন। আবাসিকরা আসলে আমাদের তরফেও ওই কোয়ারান্টিন সেন্টারে নজর রাখা হবে।’ সিরুবাড়ি ২ নম্বর বিএফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবলু ওরাওঁ বলেন, ‘স্কুলের একটা দিক কোয়ারান্টিন সেন্টারের জন্য দেওয়া হয়েছে। স্কুল খোলার আগে ভালোভাবে স্যানিটাইজ করা হবে।’