রায়গঞ্জ: তিলোত্তমার সুবিচার চেয়ে দেশ-বিদেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। শত কাজের মধ্যে থেকেও প্রতিবাদ থেকে সরে আসছেন না সাধারণ মানুষ। এর আগে জাস্টিস চেয়ে চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশন এবং ব্যবসায়ীরা ক্যাশ মেমো নতুন করে ছাপিয়েছেন। এবার রায়গঞ্জের এক পরিবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রেও উই ওয়ান্ট জাস্টিসের বার্তা।
আমন্ত্রণপত্রে লেখা রয়েছে, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস।” এই আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে বলেই ধারণা রায়গঞ্জের নেতাজী পল্লীর বাসিন্দা শুভ্রজ্যোতি দত্তের। তাঁর মতে, সকলের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় না-উঠলে সুবিচার পাবে না নির্যাতিতা৷ পরিবারের সর্বময় কর্তা মাকে হারিয়ে দত্ত পরিবার শোকাহত হলেও আরজি করে তিলোত্তমার খুন ও ধর্ষণের ঘটনা তারা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই তারা শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ চেয়ে অভিনব ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই অভিনব প্রতিবাদকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন পাড়া পড়শিরাও।
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জ শহরের নেতাজীপল্লীর বাসিন্দা প্রতিমা দত্ত বয়সজনিত কারণে প্রয়াত হন। মঙ্গলবার তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র খুলতেই পাড়াপড়শিরা দেখেন বড় বড় করে লেখা রয়েছে উই ওয়ান্ট জাস্টিস। প্রথমে তারা কিছুটা বিস্মিত হলেও পরে বুঝতে পারেন আরজি করের তিলোত্তমার ন্যায়বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন শোকাহত পরিবার। ইতিমধ্যে আত্মীয়-পরিজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে আমন্ত্রণপত্র। প্রয়াত প্রতিমা দত্তের পুত্র শুভ্রজ্যোতি দত্ত জানান, “আমার মা এই এলাকার একটি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা ছিলেন। মা নিজে উদ্যোগ নিয়ে স্কুলের অনুমোদন নিয়ে এসেছিলেন, গ্রান্ট এনেছিলেন এবং শ্রেণীকক্ষ তৈরি করেছেন। উনি চেয়েছিলেন ছেলে মেয়েরা শিক্ষিত হোক এবং নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হোক। তবে মা কোনও দিন মিটিং মিছিলে না গেলেও কেউ সমস্যায় পড়লে সহযোগিতা করতেন।” শুভ্রজ্যোতি আরও বলেন, “প্রায় ৩৬ দিন হল জুনিয়র ডাক্তাররা আন্দোলন করছেন। কিন্তু আমি প্রতিবাদে শামিল হতে পারছি না। তবে মা প্রয়াত হওয়ার আগে আমি এবং আমার পরিবার রাত দখলে অংশ নিয়েছি। তাই আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে আমন্ত্রিতদের এই বার্তা দিতে চাই, সবাই যেন তিলোত্তমার বিচারের জন্য এগিয়ে আসেন। তাড়াতাড়ি ও যেন বিচার পায় এবং দোষীরা যেন শাস্তি পায়।”
দত্ত পরিবারের বৌমা পূর্বাশা দত্ত দে, বড় মেয়ে মৌসুমী দেব দত্ত, ছোটো মেয়ে অরুন্ধতী মজুমদার দত্ত, নাতি দেবদত্ত দেব সহ প্রত্যেকেই একই দাবি জানিয়েছেন। তাদের কথায়, “আমাদের পরিবারের অভিভাবিকা প্রয়াত হওয়ায় যতটা শোকাহত, ঠিক ততটাই শোকাহত তিলোত্তমার জন্য। তাই ন্যায় বিচার চাই।”
নেতাজীপল্লীর বাসিন্দা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দত্ত পরিবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে উই ওয়ান্ট জাস্টিসের বার্তা দিয়েছেন। আমাদের সকলেরই এই একটাই দাবি। কারণ ৩৬ দিন হয়ে গেল এখনও সব দোষীরা ধরা পড়ল না। এত বড় মর্মান্তিক ঘটনা আরজি করে ঘটেছে তার প্রতিবাদ করতেই হবে। দত্ত পরিবারের সদস্যরা মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে সঠিক কাজ করেছেন।”