বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: পানীয় জলে মারণ বিষ। রায়গঞ্জ (Raiganj) ব্লকের গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়ি বাড়ি টিউবওয়েলের জলের নমুনা পরীক্ষায় ‘ফিক্যাল কলিফর্ম’ ব্যাকটিরিয়ার হদিস মিলতেই জাঁকিয়ে বসেছে আতঙ্ক। যে ব্যাকটিরিয়া মানুষের মলে থাকার কথা, তা পানীয় জলে এল কেমন করে? কারণ জানতে গিয়ে হাতে এসেছে শিউড়ে ওঠার মতো তথ্য। পিএইচই কর্তাদের সন্দেহ, উন্মুক্ত শৌচালয়ের মলমূত্রের সঙ্গে নলকূপের জলস্তর মিলে যাওয়াতেই ভয়াবহ এই বিপত্তি। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, নির্মল মিশন বাংলা প্রকল্পের কাজ কেন শুরু হয়নি এলাকায়?
রায়গঞ্জ শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরেই গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। রয়েছে পাকা রাস্তা, হাইস্কুল। দীর্ঘদিন ধরেই গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোয়ালদহ,অনন্তপুর, ভিটিহার, দুপদুয়ার, রহমতপুর, বিষাহার এলাকার বাসিন্দাদের পেটের রোগ লেগেই রয়েছে। এরপর গ্রাম পঞ্চায়েতের জলবন্ধু বিশু মহম্মদ প্রতিটি সংসদের জলের নমুনা সংগ্রহ করে কর্ণজোড়ায় পরীক্ষাগারে পাঠান। সেই জলের পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট জমা দেন পঞ্চায়েত দপ্তরে। তাতেই দেখা যায়, প্রতি ১০০ মিলিমিটার জলে ২০-৬০টি ব্যাকটিরিয়া রয়েছে। এতেই চিন্তা বেড়েছে পঞ্চায়েত কর্তাদের।
জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদেরও দাবি, এই ধরনের ব্যাকটিরিয়া জলে থাকলেই বিপদ। সংগ্রহ করা জলের নমুনায় যে মাত্রায় ব্যাকটিরিয়ার হদিস মিলেছে, তা অত্যন্ত মারাত্মক। কি হতে পারে এই ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণে? জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, ‘ফিক্যাল কলিফর্ম’ ব্যাকটিরিয়া বিপজ্জনক। এটি থেকে কলেরা, ডায়ারিয়া, জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার বিপদ বাড়ে।
পিএইচই কর্তারা জানিয়েছেন, নলকূপের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০০ ফুট গভীর এলাকা থেকে জল তোলা উচিত। কিন্তু ওই এলাকার নলকূপগুলির গভীরতা সর্বোচ্চ ৩০ ফুট। কাঁচা শৌচালয়ের মলমূত্রের সঙ্গে নলকূপের জল মিলে যাওয়াতে বিপত্তি ঘটেছে। পিএইচই দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হেমন্ত কুমার রায়ের বক্তব্য, ‘দীর্ঘদিন আগে উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামাপুর মহকুমা এলাকায় জলের মধ্যে ক্যালিফরম ব্যাকটিরিয়া পাওয়া গিয়েছিল। কোনও একটি অনুষ্ঠানবাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়ে প্রায় ৬০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের এখানে জলের পরীক্ষার জন্য যাবতীয় যন্ত্র দিয়ে ঘর তৈরি হয়েছে। ফলে সহজেই জলবন্ধুদের মারফত জলের রিপোর্ট পেয়ে যাই।’
গৌরী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রুমা পারভিনের বক্তব্য, ‘এলাকার সবকটি গ্রামের টিউবওয়েলের জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্টেই কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া ও দুই খনিজের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মেলে। তারপর দূষিত জল খেতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামবাসী সেই জল পান করছেন।’ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কমল সিংহ বলেন, ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে একটি করে মার্ক-টু টিউবওয়েল লাগানো হয়েছে। জল দূষণের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিছু কিছু সংসদে নির্মল বাংলা গড়ার কাজ হয়েছিল।’
ওই এলাকার পানীয় জলে আয়রনের পরিমাণ ৪.৯ পিপিএম এবং ম্যাঙ্গানিজের পরিমাণ ৯.৭ পিপিএম, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।