দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: ‘আরে ধ্যাৎ শেয়াল কোথা? ভেলোটা দাঁড়িয়ে হোথা!’ প্রথম প্রথম হঠাৎ চোখে পড়লে এভাবেই কুকুর ভেবে এড়িয়ে যেতেন অনেকে। কিন্তু পরে সবাই বুঝলেন, রায়গঞ্জ (Raiganj) শহরের বুকে সত্যিই শিয়ালের হুক্কাহুয়া! সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের উপদ্রব হচ্ছে শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে। চারপাশে বাড়িঘর। পাড়ার মধ্যিখানে একটি পরিত্যক্ত ঝোপজঙ্গলে ঘেরা জায়গা। সেখানেই আস্তানা গেড়েছে শিয়ালপণ্ডিতের দল। সন্ধ্যায় বা রাতে তো বটেই, কখনও দিনের বেলাতেও রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছে শিয়াল, ঢুকে পড়ছে এ বাড়ি সে বাড়ি। একরকম আতঙ্কে চলাফেরা করতে হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
শহরের দেবীনগর গয়লাল রামহরি উচ্চবিদ্যাপীঠ সংলগ্ন একফালি পরিত্যক্ত জঙ্গলঘেরা জায়গাতেই শিয়ালের আস্তানা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গভীররাতে মাঝেমধ্যেই শিয়ালের ডাকে ঘুম ভেঙে যায়। শিয়ালের দাপাদাপিতে ছোট বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়রাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। সন্ধ্যার পরে একটু অসতর্ক হলেই বাড়ির পোষ্যদের ওপর হামলা চালাচ্ছে শিয়াল। তাছাড়া পাড়ার রাস্তাঘাটে চলতে গিয়েও অনেক সময় সামনে চলে আসছে ধূর্ত প্রাণীটি।
স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক সুবীর ধর বলেন, ‘শহরে বাস করেও শিয়ালের আতঙ্কে থাকতে হয়! ভাবতেই পারছি না। রাতে ওদের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়।’ অপর এক বাসিন্দা সুজিত বিশ্বাসের কথায়, ‘সন্ধ্যা হলে যেভাবে ওই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তাঘাটে শিয়াল ছোটাছুটি করে তাতে বাড়ির ছোটদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়।’ ওই এলাকায় মোমো বিক্রি করেন সঞ্জিত পাল। তিনি জানালেন, শিয়ালের ভয়েই নাকি সন্ধ্যার পর তাঁর দোকানে ছোটদের ভিড় কমে গিয়েছে।
শহরে কেন এই শিয়ালের উৎপাত? পশুপ্রেমী সংস্থার সদস্যদের মতে, শহরে জলাভূমি বুজিয়ে ও জঙ্গল কেটে গড়ে উঠছে বড় বড় বিল্ডিং। বিপাকে পড়তে হয়েছে শিয়াল, সাপ আর বেজির মতো প্রাণীদের। ক্রমশ কমছে শিয়ালের খাবার ও বাসস্থান। তাই পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে খাবারের খোঁজে শিয়াল ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে।
সমস্যার কথা স্বীকার করেন পুরসভার স্থানীয় কোঅর্ডিনেটর অভিজিৎ সাহা। বলেন, ‘লোকালয়ে কীভাবে এত শিয়াল এল, বুঝতে পারছি না। বন দপ্তরকে জানিয়েছি, শিয়ালগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’ রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক ভূপেন বিশ্বকর্মা অবশ্য বলছেন, ‘শিয়াল ধরার কোনও নিয়ম নেই। ওদের ওই এলাকায় প্রাকৃতিক আবাসস্থল রয়েছে। তাই এলাকার মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। কোনও কিছুর সাহায্যে আওয়াজ করলে ওরা চলে যাবে।’