বিশ্বজিৎ সরকার, রায়গঞ্জ: দিনের আলোয় প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে চলছে জমি চুরি। রায়গঞ্জ শহর থেকে কর্ণজোড়া হয়ে হেমতাবাদ ও কালিয়াগঞ্জ যাওয়ার রাজ্য সড়কের দুই ধারের খাস জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে। প্রথমে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে বড় একটা জায়গা। তারপর ছোট ছোট প্লটে তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। এভাবেই হাপিস বিস্তীর্ণ খাসজমি।
বছরের পর বছর ধরে এটাই দস্তুর হয়ে উঠেছে রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। আর এর জেরেই ফুলেফেঁপে উঠছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী জমি মাফিয়ার। এই জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি চাইছেন কমলাবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজন। কমলাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাটি রায়গঞ্জ শহর লাগোয়া। এই পঞ্চায়েত এলাকাতেই রয়েছে খোদ জেলা শাসকের দপ্তর থেকে শুরু করে সমস্ত সরকারি দপ্তর ও প্রশাসনিক ভবন। রয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাদের আবাসন। এই পঞ্চায়েত এলাকাতেই তৈরি হয়েছে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্পিনিং মিলের জায়গায় তৈরি হচ্ছে টেক্সটাইল হাব। এছাড়াও কমলাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বিএসএফের প্রশাসনিক কার্যালয়। ফলে ধীরে ধীরে এই এলাকার ছবিটাই পালটে গিয়েছে। উন্নয়নের হাত ধরে ক্রমেই মহার্ঘ হয়েছে এই এলাকার জমি। তাই ফাঁকা পড়ে থাকা সরকারি জমিকেই টার্গেট করছে জমি মাফিয়ারা। রাতারাতি তা দখল করে চলছে বিক্রি করার পালা। একের পর এক সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করে দিচ্ছেন এলাকারই কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। সরকারি সংশ্লিষ্ট মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোনও লাভ হচ্ছে না বলে বাসিন্দাদের দাবি। ইতিমধ্যেই কমলাবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক সরকারি খাস জায়গা জমি মাফিয়াদের দখলে চলে গিয়েছে।
মাফিয়াদের হাত থেকে জমি রক্ষার জন্য একাধিক আন্দোলন করেছেন কমলাবাড়ি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সভানেত্রী সোনা টোপ্নো। তাঁর অভিযোগ, ‘বহু জমি এলাকার প্রভাবশালীরা দখল করে বড় বড় ইমারত তৈরি করেছেন। সরকারি জমি দখল করে প্রাচীর দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তৃণমূল নেত্রীর আরও অভিযোগ, ‘দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রাজ্য সড়কের দুই ধারে যে সমস্ত জলাশয় ছিলসেগুলিও বেআইনিভাবে ভরাট হয়ে এখন জমি মাফিয়াদের কবজায়।’ সোনা টোপ্নো বলেন, ‘সরকারি খাস জমি বিক্রি করে দিয়েছে জমি মাফিয়ারা। একাধিক জায়গায় অভিযোগ করেছি। সম্প্রতি একাধিক জায়গায় আন্দোলন হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’
রায়গঞ্জ জেলা আদালতের বিশিষ্ট আইনজীবী দেবব্রত সরকারের দাবি, ‘জমি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ। কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এমনও প্রভাবশালী রয়েছে যারা এই মুহূর্তে জমির অবৈধ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক। একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি। কেউ আবার পরিবহণ ব্যবসায়ীও।’
স্থানীয় বাসিন্দা শিখা মণ্ডল অভিযোগ বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালীরা বাড়ির সামনের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গেলে মস্তানদের দিয়ে খুন করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কখনও আবার মিথ্যে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুঁশিয়ারি দিচ্ছে।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে রায়গঞ্জের বিডিও সেরন তামাংয়ের মন্তব্য, ‘ওই এলাকায় জমি দখলকে কেন্দ্র করে একাধিক ঘটনা ঘটেছে। যে সমস্ত জায়গা বিতর্কিত সেগুলোর উপরে নজরদারি রাখা হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’