রাহুল দেব, রায়গঞ্জ: বুধবার দুপুরে রায়গঞ্জের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। কোমর বেঁধে নর্দমা সাফাইয়ে নেমে পড়েছেন উকিলপাড়ার এক বধূ সাথি দাস। তবে তাঁর বাড়ির নয়, রাস্তার সরকারি নর্দমা। স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে একাধিকবার জানিয়েও সাফাই হয়নি। সেই ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে তিনি নিজেই নেমে পড়েছেন এই কাজে। শুধু তাই নয়, বিগত দিনে স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের কাছে লিখিতভাবে সাফাইয়ের বিষয়ে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে দাবি তাঁর।
অভিযোগ, রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার অনেক অংশই ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার করা হয় না। ছোট ছোট নর্দমাগুলোও সারাবছর জলে ভর্তি থাকে। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, নর্দমার জল সাথিদেবীর বাড়ির বেসিন পর্যন্ত চলে যায়। ফলে তার বাড়ির বেসিনের জল নিকাশি হয় না। তাঁর বক্তব্য, ‘একাধিকবার স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে নর্দমা সাফাইয়ের বিষয়ে বলেছি। কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি। এলাকার মহিলারা লিখিতভাবে ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরের কাছে জানিয়েছিলাম সাফাইয়ের বিষয়ে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এর আগে দুদিন নর্দমা সাফাইয়ে নেমেছিলাম। এদিন তৃতীয়বার নর্দমা সাফাই করছি।’
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা যমুনা প্রামাণিক জানান, ‘নর্দমা, রাস্তা কিছুই সাফাই করে না পুরসভা। স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটরকে জানালে তিনি ‘পাঠাচ্ছি’ বলে আর লোক পাঠান না। ভীষণ সমস্যা হয়।’
এই ঘটনা নিয়ে শহরে শুরু হয়েছে ব্যাপক রাজনৈতিক তর্জা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্ত ওই মহিলাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এদিন তিনি বলেন, ‘রায়গঞ্জ পুরসভার কাছ থেকে কেউ কাজের আশা করে না বলেই বাধ্য হয়ে ভদ্রমহিলা নিজেই হাতে কোদাল তুলে নর্দমা সাফাইয়ে নেমেছেন। কিন্তু তিনি নিজে কতটাই বা করবেন! পুরসভা নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। এরকম আরও মানুষ এগিয়ে আসলে যদি পুরসভার ঘুম ভাঙে।’
বিজেপির জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারের মতে, ‘পুরসভা নিকাশি ব্যবস্থা, সৌন্দর্যায়ন ইত্যাদির নামে বছরের বিভিন্ন সময়ে সুন্দর ফোটোশপ করে থাকে। সেখান থেকে সরকারি টাকা পকেটস্থ হয়। নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই হাতে কোদাল তুলে নর্দমা সাফাইয়ে নেমেছেন মহিলারা।’
এর উত্তরে রায়গঞ্জ পুরসভার উপ পুর প্রশাসক অরিন্দম সরকারের সাফাই, ‘পুরসভার প্রত্যেক ওয়ার্ডের নর্দমা সহ অন্য সাফাইয়ের জন্য লোক নিয়োগ করা আছে। সাফাইয়ের কাজের জন্যই তাঁদের বেতন দেওয়া হয়। যদি এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কাজে গাফিলতি রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’