চন্দ্রনারায়ণ সাহা, রায়গঞ্জ: মিড-ডে মিল (Midday Meal) নিয়ে মাঝেমধ্যেই নানা অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন স্কুলের বিরুদ্ধে। কোথাও নিম্নমানের খাবার, তো কোথাও সঠিক মেনু নেই। আবার শহরের স্কুলগুলোতে মিড-ডে মিলের প্রতি আগ্রহই থাকে না অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর। কিন্তু অন্য ছবি দেখা গেল রায়গঞ্জ (Raiganj) ব্লকের রূপাহার প্রাথমিক স্কুলে। এই স্কুলে খুদে পড়ুয়াদের সঙ্গে মহানন্দে বসে মিড-ডে মিল খায় তাদের আরও খুদে ভাই-বোনরাও। তাতে অবশ্য বাধা দেন না শিক্ষকরা। বরং আরও আদরে-আপ্যায়নে স্বাগত জানিয়ে প্রশ্রয় দেন। শিক্ষকদের ভাবনা, যদি এভাবেই দাদা-দিদির হাত ধরে ওদের স্কুলে আসা অভ্যাসে পরিণত হয়, তো মন্দ কী?
বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দুপুরে মিড- ডে মিলের সময় হতেই তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী কোহিনুর খাতুনের সঙ্গে গুটিগুটি পায়ে এসে হাজির তার ছোট্ট ভাই সরফরাজ। দ্বিতীয় শ্রেণির মেরিনা খাতুনও নিয়ে এসেছে তার ছোট্ট বোনকে। শুধু কোহিনুর ও মেরিনার ভাই-বোনই নয়, এমন অন্তত জনা দশেক খুদে শিশু হাজির হয়েছে স্কুলে। প্রত্যেকের বয়স মেরেকেটে তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। থালা হাতে লাইনে দাঁড়াতেই শিক্ষক ও মিড- ডে মিলের কর্মীরাও হাসিমুখে তাদের পাতে তুলে দিচ্ছেন রান্না করা খাবার। তৃপ্তি করে সবটা খেয়েই যে যার বাড়িমুখো হল।
বীরঘই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার রূপাহার হাট লাগোয়া এই স্কুলে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১২৯ জন। শিক্ষক ৬ জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানিক নস্কর বলেন, ‘অনেক ছাত্রছাত্রী এমনকি কোনও কোনও অভিভাবকও মিড -ডে মিলের সময় নিজের খুদে শিশুদের এনে খাইয়ে দেন। আমরা বারণ করি না। রোজ ১৮-১৯ জন অতিরিক্ত বাচ্চা এভাবেই মিড- ডে মিল খায়।’
শিশুদের মুখে এভাবে খাবার তুলে দিতে পেরে খুশি স্কুলের শিক্ষক -শিক্ষিকারা। এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘আসলে আমরা মনে করি, এই মিড -ডে মিলের টানে খুব ছোট থেকেই ওদের স্কুলে আসার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। এটা তো ভালো লক্ষণ। গ্রামের বাচ্চারা স্কুলমুখী হচ্ছে। আপত্তি করব কেন ? পরবর্তীতে ওরা আমাদের স্কুলেই তো ভর্তি হবে।’
উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন আলি বলেন, ‘আমি আজ বিষয়টি শুনলাম। খুব শিগগিরই স্কুল ভিজিট করে এমন উদ্যোগ নিজের চোখে দেখে আসব।’