সানি সরকার, শিলিগুড়ি: কয়েকদিন ধরে প্রবল বৃষ্টি (Heavy Rain)। তার জেরে তিস্তায় জলস্ফীতি (Teesta River Overflow), বিক্ষিপ্তভাবে বিরামহীন ধস নামা এবং ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক (NH 10 Landslide) বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বাঁচাতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন)।
জনমত গড়তে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি সেমিনারও করা হবে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন এইচএইচটিডিএনের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল। তিনি বলছেন, ‘রাস্তা কে তৈরি করবে, রাজ্যের পূর্ত দপ্তর না কেন্দ্রের এনএইচআইডিসিএল, তা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। আমরা চাই ১০ নম্বর জাতীয় সড়কটি সচল থাকুক। তিস্তার পুরোনো রূপ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেওয়া হোক। নদী বাঁচলে রাস্তা বাঁচবে।’
সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের পর নয় মাস কেটে গেলেও কেন জিওলজিক্যাল সার্ভে হল না, প্রশ্ন তুলেছেন সম্রাট। জিএসটি বাবদ কত টাকা সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে, তা নিয়ে এদিন শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তুলেছে এইচএইচটিডিএন। সামগ্রিক সমস্যার কথা জানিয়ে সংগঠনটি প্রধানমন্ত্রী এবং দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠাবে। সংগঠনের দুই সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট অভিজিৎ সেনগুপ্ত ও শুভাশিস চক্রবর্তী জানান, জাতীয় সড়ক বেহাল থাকায় পর্যটনের পাশাপাশি ব্যবসাও মার খাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সিকিম এবং কালিম্পংয়ের সঙ্গে শিলিগুড়ির সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বর্তমানে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেবক-গরুবাথান-লাভা-আলগাড়া রুটের ওপর। কিন্তু এই রাস্তার বেশ কয়েকটি জায়গায় ধস নামছে তাতে কতদিন রাস্তাটি সচল থাকবে, তা চিন্তার বিষয়। বিরামহীন বৃষ্টিতে সিকিমের পাশাপাশি দার্জিলিং পাহাড়েও একাধিক জায়গায় মঙ্গলবার ধস নেমেছে বলে খবর। এদিকে রোদের দেখা নেই। প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দপ্তর।
এদিকে, মালদা ও দুই দিনাজপুর বাদে উত্তরের পাঁচ জেলায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের উপর বিস্তৃত ঘূর্ণাবর্তটি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করায় আরও কয়েকদিন এমন বৃষ্টিপাত চলবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়া দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা।
এদিকে বিড়িকধারায় ভূমিধস, গেইলখোলায় পাহাড় ভেঙে পড়ার ফলে ঝুঁকি এড়াতে এদিনও ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখে প্রশাসন। কালিম্পংয়ের জেলা শাসক বালাসুব্রহ্মণিয়ান টি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি জায়গায় ধস নামায় এবং একইসঙ্গে মেরামতির কাজ চলায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হচ্ছে রাস্তাটি।’ কতদিনের জন্য বন্ধ থাকবে, তা এখনও অস্পষ্ট।
সেবক-গ্যাংটক রুট, যা ছিল ৮৯.৮ কিমি, তার পরিবর্তে সেবক-লাভা-আলগাড়া-গ্যাংটক হয়ে ১৬১.৭ কিমি ঘুরপথে গাড়ির চাকা গড়াচ্ছে। তবে এই রাস্তার ভবিষ্যৎ নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠছে। বৃষ্টির জেরে জল দাঁড়িয়ে থাকায় মংপং, গরুবাথান চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকা, আলগাড়া সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। দু’দিন ধরে ধস নামছে রংলি, অম্বিয়কেও।
জানা যাচ্ছে, এদিন পানিঘাটা-দুধিয়ার রাস্তার বেশ কয়েকটি জায়গা এবং মিরিক-শিলিগুড়ি বাইপাস রোডের দুটি জায়গায় ধস নেমেছে। গয়াবাড়িতে একটি বাড়ি ধসে গিয়েছে। ভূমিধসের জেরে রোহিণীতে একটি বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। তিস্তাবাজারে জলস্ফীতি ঘটায় দিনভর পেশক রোড বন্ধ থাকলেও বিকেলে যান চলাচল শুরু হয়। তবে যে কোনও সময় দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।