রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

কবিতা

শেষ আপডেট:

লোকটা অদ্ভুত এক

রণজিৎ দেব

 

সব সম্ভ্রম তুচ্ছ করে পাতার আড়ালে যার বাস

সে তো রাখেনি কোনও স্মৃতিচিহ্ন অভিমানহত সে-

কখনও সাহসীরূপে কখনও প্রেমের সন্ধানে, একা একা

ভিতরে ভিতরে কাঁদে, অন্ধকারে ঝরনার ধারে বসে কাঁদে

 

লোকটা চা বাগানের দুঃখ-শ্রমিক, শিকড় উপড়ানো,

সারাদিন ভাঙতে দেখেছে গড়তে দেখেনি

তবুও এ ভাঙা অপরূপ গড়ার চেয়েও মূল্যবান-

বর্মে ঢাকা মগ্ন বক্ষে সাবধানি পদচারণা তার

অন্তর্গত ছেদ-চিহ্নে মিশ্রবৃত্তে বাঁচার স্পন্দন

 

লোকটা অদ্ভুত এক আবরণ হারা মুক্ত পাখির মতো

 

হাওয়ার ঝড়ে ভেসে উঠবে ভেবে

হৃদয়-জোড়া তার বিস্তৃত আকাশ

 

মেয়েজন্মের পথ

অদিতি বসুরায়

 

এই জন্মের পথে, যে সব পাহাড় এসেছিল

তাদের প্রতিটি পাথর, আমাদের  হাতিয়ারের খবর রাখে!

গার্হস্থ্যের সামনে মাথা নত করে আছি বলে, ভেবো না

অস্ত্রের ধার কমে গেছে!

লুকোনো ঝোরার উন্মাদে পা রাখতে ভালোবাসা, আদতে

আমাদের উত্তরাধিকার –

সেখানে রক্তের গন্ধহীন দিনে, চাঁদ নামে

দূর থেকে বাঘের ডাক শুনতে পাই

শুনতে পাই পরি এবং ভূমিকম্পের আগমনবার্তা

–   ভাত খেয়ে উঠে, দ্রুত ধনুকে জ্যা নির্মাণ করি

শয্যা থেকে তুলেনি পূর্বনারীদের বস্ত্রসমূহ!

গাছকৌটা মিথ্যে হওয়ার পর, উপত্যকা জেনে যায়,

রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘিনীর থেকে নিরাপদ

দূরত্বে থাকা দরকার!

 

পাখিরা জ্যামিতি জানে

অনুভা নাথ

 

অগণন দূরত্বের অযুত আকাশে ওরা

ভেসে থাকে স্থাণুর মতো

দৃষ্টির ফিতে ফাঁক গলে উড়ে যায়…।

আমি দেখি সে অনড়,

শুধু পাখি আর পৃথিবী জানে

গতিরহস্যের রূপরেখা।

বিভ্রম তৈরি হয় ডানার পালকে

সমীকরণ আর জীবনের বৃত্তে

নিখুঁত উড়ে ঘুরে আসে বিহঙ্গ।

মাইলের মাইলেজে কঠিন অঙ্ক কষে

উড়ালের আবেশে গন্তব্যে স্থির…।

তারা জানে জমিনের জ্যামিতি।

ওইখানে ওই গাছ আছে, তারা জানে

গোল চোখ চেনে পাতাদের নকশা-

আমি ওদের গ্রাহ্য করি না,

অহংকারী চোখ আমার,

আমি যে সবজান্তা।

পাখিরা জানে সব, তারা কলকল করে

ক্ষমা করে দেয় আমাকে।

 

আর কত কাঁদবে মানুষ

শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

 

আর কত বিনিদ্র রাত কেটে যাবে চোখ মুছে

দূরে ভেসে আসবে নির্ঘোষ

কোনও সেবাশ্রম বা ছোটদের স্কুলের ওপর

আছড়ে পড়ল থাবা। রক্তমাখা দলাপাকানো মাংসের পিণ্ড।

প্রার্থনা ভেসে আসে কান্নার মতো

ডুকরে কাঁদছে কেউ অসহায় স্বরে

আকাশে নাচছে সাপ। ফণার মতো এঁকেবেঁকে চলে যায় আলো

আর কত কাঁদবে মানুষ…

 

আরও কতবার ভেসে আসবে শমন

ছিনিয়ে নেবার খেলা দমবন্ধ করে দেবে পথ?

সন্তানহারা পিতা, মাতৃদুগ্ধ হারা সন্তান হেঁটে যাবে

তুলে নেবে বন্দুক প্রতিহিংসায়

ওদের ওপর বৃষ্টি পড়বে না এক ফোঁটা

তারার আলো এসে বলবে না কথা এতটুকু…

ওরাও আগুন হবে, আগুনে ঝলসে উঠবে শব

মাতোয়ারা উৎসবে কান্নার আজান ভেসে আসে

ভেসে আসে কাকুতিমিনতিভরা লীলাকীর্তন…

 

আর কত কাঁদবে মানুষ?

আর কত অন্ধকার বুক চিরে যাবে…

 

 

অসীম ও এক বুড়ো

 বিশ্বজিৎ রায়

 

মৃত্যুকে পিছনে ফেলে দৌড় লাগাল অসীম —

দৌড়াতে দৌড়াতে অসীমের হাত খসে গেল,

চুল খসে গেল, লেজ খসে গেল

মন থেকে মুছে গেল ভালোবাসা-মায়া, গ্রীষ্ম-বর্ষা-বসন্ত—

অনেকটা দৌড়ে একটা নদীর কাছে এসে বসল যখন

নিজেকে খুব ভারমুক্ত মনে হল,

আকাঙ্ক্ষা হল, আবার নতুন করে কিছু করার …

##

কীভাবে শুরু করবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ অসীম দেখল

সাধুবাবার মতো দেখতে একটা বুড়ো লোক

পুঁটুলি থেকে নানা ধরনের পোশাক বের করছে—

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ, সোলজার, মিস্ত্রি, ড্রাইভার,

উকিল, ফেরেববাজ, চাষি, গনতকার, বেলুনওয়ালা, বাঁশিওয়ালা,

মায় ভিখিরি পর্যন্ত,  বাদ রাখল না কিছুই —

পোশাকগুলো মাটিতে ছড়িয়ে রেখে

ওই বুড়ো অসীমকে বলল- “বল বেটা, তুই কোনটা নিবি?”

 

আকাশে আজ রঙের খেলা

প্রতাপ সিংহ

 

হাওয়া যেন কেমন উন্মনা আর বিবাগী –

পাতা ঝরার দিন ফুরিয়ে এল,

গাছ পুনর্জীবন পাচ্ছে,

শাখায় শাখায় উতরোল কচি পাতা,

আকাশ আজ বহু বিচিত্র সাজে সেজে উঠেছে,

যাকে বলে, আকাশে আজ রঙের খেলা –

চারদিকে রং আর রং,

আনন্দের সমারোহ।

 

এই আনন্দের টানে ভেসে যেতে

মনের আকাশে রং লাগাতে

মৌপিয়া-কিংশুক আজ বেরিয়ে পড়েছে

শান্তিনিকেতনে।

অপমৃত্যুর সন্ধিক্ষণ
আজিজুল হক

চোখ বুজে তাকালে দেখতে পাই
নিজস্ব স্বপ্নের ভালোবাসার অজস্র অপমৃত্যু,
দাস ব্রাদার্স মোড়ের মিছিল সরণিতে
কিংবা গোরস্থানের মোড়ে!

ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়!
হয় বিক্রি হয় নয়তো
বিকৃত হয়
সময়ে সময়ে প্রয়োজনে
খিদে মেটানোর আবদারে।
আমরা কেউ ভালো নেই আসলে,
সবাই ব্যস্ত নিজেদের অপমৃত্যু ঠেকাতে!

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...