রতুয়া: আবার কংগ্রেস ও তৃণমূলের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল রতুয়া-১ (Ratua) ব্লকের ভাদো গ্রাম পঞ্চায়েতের রামপুর গ্রাম৷ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে ব্যাপক বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে৷ এই ঘটনায় ছ’জন আহত হয়েছেন৷ আহতদের স্থানীয় রতুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দু’জনকে মালদা মেডিকেলে (Malda Medical College And Hospital) রেফার করা হয়েছে৷ সংঘর্ষের খবর পেয়ে গ্রামে ছুটে যায় রতুয়া থানার পুলিশ (Ratua Police)৷ এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে দু’পক্ষের দু’জনকে৷ বর্তমানে গ্রামের পরিস্থিতি থমথমে৷ চলছে পুলিশি টহল৷
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামপুরে জয় পায় কংগ্রেস৷ সেই সময় কংগ্রেসের বিজয় মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে৷ সংঘর্ষে ফটিকুল হক নামে এক কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়৷ ওই ঘটনায় দু’পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে৷ পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা পালিয়ে যায়৷ ওই মামলার বেশিরভাগ আসামি জামিন পেয়ে গ্রামে ফিরে এসেছে৷ তখন থেকে ফের শুরু হয়েছে দু’পক্ষের বিবাদ৷ পুরোনো সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এদিন সকালে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের তরফে ২১ জনের বিরুদ্ধে রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷
তৃণমূল কর্মী নাইম শেখ বলেন, ‘আজ সকালে কংগ্রেসের সাদিকুল আমাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ আমাকে বাঁচাতে কাকারা বেরিয়ে এলেই মারামারি শুরু হয়ে যায়৷ ওরা কাকাদের লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে, গুলিও চালায়৷ কাকা আর কাকাতো ভাইয়ের গুলি লেগেছে৷ ওদের মালদা নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সাদিকুলের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে৷’ অন্যদিকে, কংগ্রেস কর্মী সাবিনা খাতুনের দাবি, ‘আজ সকালে আমার দেওর পাট বিক্রি করতে যাচ্ছিল৷ সেই সময় তৃণমূলের মোস্তাফা আর মালেক তার সামনে বোমা ফাটাতে শুরু করে৷ ভয়ে দেওর বাড়ি ফিরে আসে৷ ওরা ইট মেরে আমাদের বাড়ি ভাঙচুরও করেছে৷ গ্রামে পুলিশ এসেছে৷ পুলিশ সব দেখুক৷’
স্থানীয় কংগ্রেস নেতা সাদিকুল ইসলাম বলছেন, ‘গতকাল থেকে ওরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে৷ আমার এক কাকাতো ভাইকে হাঁসুয়া দিয়ে কুপিয়েছে৷ রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ তদন্ত করেনি৷ আজ ওরা আমার বাড়ির গলির সামনে বোমাবাজি শুরু করে৷ ওরা সবসময় হুমকি দিচ্ছে, ভাইকে খুনের মামলা না তুললে আমাদের মেরে ফেলবে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমার ভাই ফটিকুল হককে খুন করেছে৷ আরও দু’জনকে আধমরা করেছে৷ অথচ পুলিশ ওদের সাহায্য করছে৷ আজ সকালে ভাইয়ের খুনের আসামি মোস্তাফার বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার হয়েছে৷ রতুয়া থানার পুলিশ এখন সেই বোমা লুকোনোর চেষ্টা করছে৷’
তবে তৃণমূলের ভাদো অঞ্চল চেয়ারম্যান নাসিম আখতার জানান, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজয় মিছিলে দু’পক্ষের বিবাদে কয়েকজন আহত হয়, একজন মারা যায়৷ ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন জেলে ছিল৷ কিছুদিন আগে জামিন পেয়ে তারা পুলিশ ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় গ্রামে ফিরে আসে৷ আজ সকালে তাদের কয়েকজন ফজরের নমাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিল৷ তখনই কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা আমাদের কর্মীদের উপর হামলা চালায়৷ ওদের হাতে বোমা, বন্দুক ছিল৷ ওরা আমাদের এক কর্মীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল৷ পরিবারের লোকজন বাধা দিলে ওরা হামলা চালায়৷ ওদের হামলায় আমাদের ছ’জন আহত৷ দু’জনকে মালদা মেডিকেলে ভর্তি৷ এই ঘটনায় ওদের ২১ জনের নামে রতুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷’
রতুয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, ভাদো রামপুর গ্রামে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের মধ্যে গন্ডগোল হয়েছে। এই গন্ডগোলের জেরে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। গুলি এবং বোমা চালানোর কোন ঘটনা ঘটেনি। এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের পক্ষ থেকে মোট ২১ জনের নামে অভিযোগ জানানো হয়েছে। দুই পক্ষের দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ রয়েছে।