চেন্নাই: যখন ব্যাট হাতে বাইশ গজে হাজির হয়েছিলেন, দল ছিল প্রবল চাপে। টিম ইন্ডিয়ার স্কোর ২০০ পার হওয়া নিয়ে ছিল সংশয়।
তিনি এলেন। দেখলেন। জয় করলেন। দলকে স্বস্তি দিলেন। আর তার মাঝেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম দিনের শেষে দলের রানটা পৌঁছে দিলেন ৩৩৯/৬-এর নিরাপদ আশ্রয়ে।
তিনি রবিচন্দ্রন অশ্বীন। ঘরের মাঠ এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামের প্রতিটা ঘাসকে চেনেন তিনি। সম্প্রতি তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচও খেলেছেন এই মাঠেই। যদিও সেটা ছিল কুড়ির ক্রিকেট। কিন্তু আজ চিপকে টি২০ ও টেস্ট ম্যাচকে এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিলেন তিনি। টেস্ট ম্যাচে টি২০-র আগ্রাসন নিয়ে ব্যাটিং করলেন। করলেন অপরাজিত শতরান। সঙ্গে পেলেন রবীন্দ্র জাদেজাকে। যিনি দারুণভাবে তাঁর সতীর্থকে পরামর্শ দিয়ে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা সারলেন। অশ্বীন-জাদেজার ১৯৫ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটির প্রশংসা ক্রিকেটমহলের সর্বত্র।
যাঁকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা, সেই অশ্বীন প্রথম দিনের খেলার শেষে সম্প্রচারকারী চ্যানেলে হাজির হয়ে তাঁর শতরানের রহস্য ফাঁস করলেন। বলে দিলেন, ‘ঘরের মাঠে ফের শতরান করতে পারার তৃপ্তিটা একটু অন্যরকম। এই মাঠে প্রচুর স্মৃতি রয়েছে আমার। খুব ভালো করে জানি এখানকার পরিবেশ, পিচ। সম্প্রতি ব্যাটিং নিয়ে নেটে বিস্তর সময় কাটিয়েছি আমি। তার ফলও পাচ্ছি।’ অশ্বীনের টেস্ট কেরিয়ারের সপ্তম শতরানের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে টি২০ চার-ছক্কার বিনোদনও। অশ্বীনের কথায়, ‘সম্প্রতি এই মাঠে তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগের বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি। ফলে পিচ কেমন হতে পারে, ধারণা আগেই ছিল। চিপকের এমন পিচে শট খেলা খুব জরুরি। আমি সেটাই করেছি।’ আগে অশ্বীন শুধু অফস্টাম্প লাইনের বলেই চালাতেন। সম্প্রতি নিজের ব্যাটিংয়ের গিয়ার বদল করেছেন। সতীর্থ ঋষভ পন্থের স্টাইলে ব্যাট চালাচ্ছেন তিনি। মজা করে ভারতীয় অফস্পিনার বলেছেন, ‘এখন আমি ব্যাট চালালে ঋষভ পন্থের মতো চালাই। না হলে চালাই না।’
অশ্বীনের শতরানের নেপথ্যে বিশাল অবদান রয়েছে সতীর্থ জাদেজারও। ইনিংস গড়ার মাঝে একটা সময় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঘামছিলেন। এমন সময় জাড্ডু তাঁকে পরামর্শ দেন, একটু ধরে খেলার। দুই রানকে তিনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করার। প্রথম দিনের খেলার শেষে জাড্ডুকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে অশ্বীন বলেছেন, ‘জাদেজা খুব সাহায্য করেছে আমায়। একটা সময় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ঘামছিলামও। ও সেটা দেখে সিঙ্গলস রান নেওয়ার চেষ্টা কমিয়ে দিতে বলে। ওর পরামর্শ কাজে লেগেছে আমার।’ ১১২ বলে অপরাজিত ১০২ রান করার পথে কিংবদন্তি স্যর গ্যারি সোবার্স, কপিল দেবদের এলিট ক্লাবে ঢুকে পড়েছেন অশ্বীন।
তাঁকে নিয়ে টিম ইন্ডিয়ার অন্দরেও প্রশংসা ও অভিনন্দনের বন্যা বইছে। কোচ গৌতম গম্ভীর থেকে শুরু করে অধিনায়ক রোহিত শর্মা- সকলেই অশ্বীনকে সাজঘরে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রথম দিনের খেলার শেষে যশস্বী জয়সওয়াল সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হয়ে অশ্বীন বন্দনায় মজেছেন। বলেছেন, ‘দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলল অ্যাশভাই। চাপের পরিস্থিতিতে এমন ইনিংসের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। চিপকের পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য খুব সহজ ছিল না।’