সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫

বঙ্গে কংগ্রেসের বাস্তবতা

শেষ আপডেট:

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভোটপ্রাপ্তির হারের যৎসামান্য বৃদ্ধিই যেন অক্সিজেন জোগাচ্ছে কংগ্রেসকে। সাংগঠনিকভাবে দুর্বল রাজ্যগুলিতে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে একলা চলার ইঙ্গিত দিতে শুরু করেছে। অবশ্য বিহার, তামিলনাডু, কেরলের মতো রাজ্য, যেখানে কংগ্রেস জোটে আছে বা জোটকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেগুলি ব্যতিক্রম। তবে দলীয় সংগঠনে পশ্চিমবঙ্গের মতো কার্যত সাইনবোর্ড সর্বস্ব রাজ্যে একার জোরে শক্তি যাচাই করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ১৪০ বছরের পুরোনো দলটি।

যদিও কংগ্রেস এখনও সাংগঠনিক ভুলত্রুটিগুলি শুধরে নিতে পারেনি। গত লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে থাকার কারণে কংগ্রেস বহুদিন বাদে আসনসংখ্যার নিরিখে সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলেও সমস্যা থেকে গিয়েছে। ১০ বছর বাদে লোকসভার বিরোধী দলনেতার পদটি দলের হাতে এলেও হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি বিধানসভা ভোটে সেই সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি।

শরিকদের সঙ্গে মতবিরোধে ওই রাজ্যগুলিতে ‘ইন্ডিয়া’ জোট মুখ থুবড়ে পড়েছে। জোটের ছবিটা খানিকটা হলেও ভালো ঝাড়খণ্ড এবং জম্মু ও কাশ্মীরে। এরকম পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের একলা চলার ইচ্ছা তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতিটি রাজ্যে কংগ্রেস পায়ের তলার মাটি শক্ত করুক- ইচ্ছাটা রাহুল গান্ধিরও। কেননা, শক্তি বাড়লে জোটের অন্য শরিকদের কাছে কংগ্রেসের গুরুত্ব বাড়ে।

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার দলকে শক্তিশালী করাই তাঁর প্রধান কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। কংগ্রেস দুর্বল থাকলে জোট গড়ে লাভ হবে না বলে তাঁর স্পষ্ট মত। রাহুলের নির্দেশে দলের নেতাদের এ রকম কথা কর্মীদের উজ্জীবিত করে ঠিকই, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন কঠিন। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই। যদিও এটা ঠিক যে, শুভঙ্কর প্রদেশ সভাপতি হওয়ার পর প্রায় সমস্ত বিষয়ে হাত শিবির আন্দোলনে থাকার চেষ্টা করছে।

আরজি করের প্রতিবাদ কিংবা স্যালাইনে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ, সবেতেই স্বয়ং প্রদেশ সভাপতি রাস্তায় নেমেছেন। দলকেও আন্দোলনমুখী করার চেষ্টা করছেন। নেতা হিসেবে এটা অবশ্যই সুলক্ষণ। কিন্তু কংগ্রেস তাতে পশ্চিমবঙ্গে কতটা শক্তি সঞ্চয় করতে পারবে, তা অনিশ্চিতই। এ রাজ্যে কংগ্রেস শেষবার একার ক্ষমতায় লড়েছিল ২০০৬ সালে। সেবার ২১টি আসন এবং ১৪.৭১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করে ৪২টি আসন এবং ৯.০৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

২০১৬ সালে কংগ্রেস জোটসঙ্গী বদলে একদা প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিএমের সঙ্গে আঁতাত করে ৪৪টি আসন এবং ১২.২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০২১ সালেও সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা বজায় রাখে। কিন্তু বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে সেবারই প্রথম কংগ্রেস-মুক্ত হয়ে যায় বিধানসভা। হাত শিবির পায় মাত্র ২.৯৩ শতাংশ ভোট। বাম জমানা থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের সেরা সাফল্য ছিল ১৯৯৬ সালের বিধানসভা ভোটে। তখন অবিভক্ত কংগ্রেস ৮২টি আসন এবং ৩৯.৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।

শুভঙ্কর এবং প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে এই ইতিহাস এবং পরিসংখ্যান অজানা নয়। কিন্তু এগিয়ে চলার প্রথম শর্ত হল অটল আত্মবিশ্বাস। রাহুলের মধ্যে নিশ্চিতভাবে সেই আত্মবিশ্বাস আছে। স্বাধীনোত্তর ভারতে তিনিই প্রথম কংগ্রেস নেতা, যিনি বৈঠকখানার রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে দলকে বের করে রাস্তায় নামিয়েছেন। যে কারণে তাঁর ভারত জোড়ো যাত্রা এবং ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সাফল্যের বড় কারণ হয়ে ওঠে।

তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী বিধানসভা ভোটে দল একাই লড়বে। রাজ্যে তৃণমূলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থায় জোটসঙ্গীর প্রয়োজনও নেই। কিন্তু কংগ্রেসের অবস্থা তা নয়। পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে যে বুথভিত্তিক সংগঠন দরকার, তা কংগ্রেসের নেই। তাছাড়া গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাও তৈরি হয়নি। একা লড়তে এখনও অনেক পথ হাঁটা বাকি।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

Share post:

Popular

More like this
Related

শুল্ক-জট

দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে বসার পরপরই শুল্ক-যুদ্ধের হুংকার দেন...

সংঘাতই যেন ভবিতব্য

ন যযৌ ন তস্থৌ! অমিত শা’র কড়া পদক্ষেপেও কাজ...

বঙ্গে বিপন্ন সম্প্রীতি

রাজ্যটির নাম কি পশ্চিমবঙ্গ? বিভ্রম জাগে। বিদ্বেষের বিষে যে...

ভুয়ো উচ্ছেদে মমতা

বামফ্রন্ট জমানায় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলে রাখতে ভোটে সিপিএমের কারচুপি...