গাজোলঃ এবার শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় নাম জড়ালো তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের। টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও যে নিয়োগপত্রটি তিনি দিয়েছিলেন সেটি জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এরপর প্রতারিত ব্যক্তি বারবার তাঁর কাছে টাকা ফেরত এর আবেদন জানালে সেই ব্যক্তিকে একটি চেক দেওয়া হয়। কিন্তু সেই চেকটি বাউন্স করে। এরপরই আদালত পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরেও টাকা ফেরত দিচ্ছেন না পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। এমনটাই অভিযোগ করেছেন ওই প্রতারিত ব্যক্তি। আগামীদিনে আবার আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন।
অভিযোগকারী সুকুমার বালো জানান, তাঁর বাড়ি গাজোলের শংকরপুর এলাকায়। ২০১৬ সালে তাঁর স্ত্রীকে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন তাঁর কাছ থেকে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। এরপর তাঁর স্ত্রীকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। সেই নিয়োগপত্র নিয়ে গাজোলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস থেকে নিয়োগ পত্রটি দেখতে চাওয়া হয়। সেখানেই এসআই জানিয়ে দেন তাঁকে যে নিয়োগপত্রটি দেওয়া হয়েছে সেটি জাল। এরপরই টাকা ফেরতের জন্য গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের কাছে যান তাঁরা। প্রথমে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তিনি একটি চেক তাঁকে দেন। কিন্তু চেক ব্যাংকে জমা দিলে সেই চেক বাউন্স করে। এরপর তৃণমূল নেতা মোজাম্মেলের কাছে বারবার টাকা ফেরতের আবেদন জানালেও তিনি কোনও কথার কর্ণপাত করেননি বলে অভিযোগ। এরপরই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। আদালত মোজাম্মেল হোসেনকে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেও, আদালতের সেই নির্দেশ মানছেন না মোজাম্মেল বলে অভিযোগ। আগামীদিনে আবারও আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুকুমারবাবু।
যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন গাজোল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, “সুকুমার বালো নামে কোন ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না। এটি বিরোধীদের একটি চক্রান্ত বলে মনে করেন তিনি। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সেটি ২০১৬ সাল। সেই সময় কোনও পদে ছিলেন না তিনি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছেন ২০২৩ সালে। তাঁর এই সময়কালের মধ্যে গাজোলে তৃণমূলের সংগঠন অনেক মজবুত হয়েছে। তাই তাঁর নামে কুৎসা রটিয়ে এই ধরনের কাজ করছে বিজেপি। তাছাড়া অভিযোগকারী সুকুমার বালো বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সক্রিয় কর্মী। দরকার হলে তিনিও আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
এই বিষয়ে বিজেপি বিধায়ক চিন্ময় দেব বর্মন জানান, “তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন এটি এই রাজ্যের একটি পরিচিত ঘটনা। টাকা দিয়ে অনেকে শিক্ষকের পদে চাকরি করছেন আবার অনেককে জাল নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। আদালতে এটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। গাজোলের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেনের নামেও এরকম অভিযোগ উঠেছে। চাকরি দেওয়ার নামে ১২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু যে নিয়োগপত্রটি দেওয়া হয়েছিল সেটি নাকি জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি সত্যিই একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আমরা চাই অবিলম্বে ওই চাকরি প্রার্থীর টাকা ফেরত দেওয়া হোক। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে।”