আলিপুরদুয়ার: শহরের এক ব্যবসায়ীর দুই বছরের শিশু মা-বাবা বলতে পারলেও আর কোনও শব্দ উচ্চারণ করতে পারে না। ব্যবসায়ী কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন। একইরকমভাবে তাঁর স্ত্রী সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। শিশুটিকে মোবাইল দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। ঘটনা ২ : শহরের আরেক চাকরিজীবীর আড়াই বছরের শিশু মোবাইল ব্যবহার করতে পারলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি শব্দ ছাড়া আর কিছু বলতে পারে না। পরিবারের লোকজন চিকিৎসকের পরামর্শে শিশুটির স্পিচ থেরাপি করাচ্ছেন। ঘটনা ৩ : শহরের এক ওষুধ ব্যবসায়ীর সন্তানের কথা বলার সমস্যা ছিল। দীর্ঘদিন ধরে স্পিচ থেরাপির পর কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।
শুধু এই তিনটি ঘটনা নয়, দেরিতে কথা বলতে শেখা বা কথা বলতে না পারা শিশুদের তালিকাটা ক্রমশ বাড়ছে। আর এর পেছনে শিশুদের ছোট থেকে মোবাইলে আসক্তি কারণ বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। মোবাইলে অতিরিক্ত আসক্তি শিশুদের মুখের ভাষা কেড়ে নিচ্ছে। এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা নির্দিষ্ট বয়সের সীমা পেরিয়ে গেলেও কথা বলছে না বা কথা বলতে চাইছে না। শিশুদের একাংশের দেরিতে কথা বলা নতুন কিছু নয়। তবে করোনা পরিস্থিতিতে এই প্রবণতা বেড়েছে। লকডাউনের সময় অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার এবং সামাজিক মেলামেশা না করতে পারায় প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর।
এখনকার বেশিরভাগ পরিবারই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। ফলে সেখানে শিশুদের সঙ্গে কথা বলা বা খেলাধুলো করার কেউ থাকছে না। দিনের বেশিরভাগ সময়টা মোবাইল দেখে কেটে যাচ্ছে। বিপদটা ঘটছে এখানেই। শিশুদের কথা বলার বা ভাষা শেখার অভ্যাস কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই সংখ্যাটা ২০-৩০ শতাংশের মতো বেড়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রণদীপ রায়ের কথায়, ‘অন্যান্য সমস্যা না থাকলে দেরিতে কথা বলার সমস্যাকে ‘আইসোলেটেড ল্যাঙ্গুয়েজ ডিলে’ বলা হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুর কানের জন্মগত সমস্যা থাকলে কথা শিখতে দেরি হবে। থাইরয়েডজনিত সমস্যা থাকলেও একই সমস্যা হতে পারে। মোবাইলের আসক্তিজনিত কারণে কথা দেরি করে শেখে বা কথা বলতে চায় না অনেক শিশু।’
তাঁর সংযোজন, বাচ্চা দেরি করে কথা বলছে কি না বা কয়েকটা নির্দিষ্ট শব্দ বলছে কি না, সেটা বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এলে জন্মগত কোনও ত্রুটি রয়েছে কি না তা দেখার পর শিশুটিকে স্পিচ থেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়। স্পিচ থেরাপিতে অনেকের সমস্যা মিটেছে। শিশু কানে স্পষ্ট করে শুনতে না পেলেও কথা শিখতে দেরি হয়। তবে শিশুদের জন্য আধুনিক কানের যন্ত্র রয়েছে। শিশুদের জন্য বিভিন্ন জায়গাতে বেসরকারি স্পিচ থেরাপি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে অবশ্য স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার পরিতোষ মণ্ডল বলেন, ‘স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফে স্পিচ থেরাপির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আরেক শিশু বিশেষজ্ঞ সুনীল পান্না জানান, এখন শিশুদের খেলাধুেলা, মেলামেশা এবং কথা বলার লোকজন কম দেখা যায়। পরিবর্তে মোবাইলে আসক্তি বাড়ছে। সে কারণে কমছে কথা বলার প্রবণতা। অন্যান্য শারীরিক সমস্যা কারণ হলেও মোবাইলে আসক্তি অবশ্যই বড় কারণ। আর দিনে দিনে এই সমস্যা বাড়ছে।