Thursday, June 1, 2023
Homeউত্তরবঙ্গআলিপুরদুয়ারজলদাপাড়া-বক্সা করিডরে হাতির তৃষ্ণা মেটাতে জলাশয়

জলদাপাড়া-বক্সা করিডরে হাতির তৃষ্ণা মেটাতে জলাশয়

পূর্ণেন্দু সরকার, জলপাইগুড়ি : লোকালয়ে হাতি মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়াটা উত্তরবঙ্গে নতুন কিছু নয়। এখানকার বিস্তীর্ণ প্রান্তের কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই এই ঘটনা ঘটে চলেছে। কী কারণে এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে মানুষের গাফিলতির বিষয়টিই সামনে আসে। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার বিস্তীর্ণ প্রান্তে থাকা হাতি চলাচলের ১৬টি করিডরের কোথাও চাষবাসের জমি তৈরি হয়েছে, কোথাও বা চা বাগানের বিভিন্ন আবাসন গড়ে উঠেছে। চলাচলের করিডর এভাবে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় হাতি মাঝেমধ্যেই বিভ্রান্ত হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। সমস্যা মেটাতে বন দপ্তর প্রাথমিকভাবে এই করিডরগুলির সাতটিকে পুরোনো চেহারায় ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে। এই উদ্যোগেরই অঙ্গ হিসেবে ভার্নোবাড়ি চা বাগানের মধ্যে দিয়ে জলদাপাড়া থেকে বক্সার জঙ্গল পর্যন্ত করিডরটির পুনর্গঠন করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে তো বটেই, হাতি চলাচলের জন্য গোটা রাজ্যে করিডর পুনর্গঠন এই প্রথম।

যেভাবে করিডর পুনর্গঠনের পকিল্পনা করা হয়েছে তাতে হাতির অনেকটাই সুবিধা হবে। বন দপ্তর সূত্রে খবর, ভার্নোবাড়ি চা বাগানের মধ্যে দিয়ে জলদাপাড়া থেকে বক্সার জঙ্গল পর্যন্ত করিডরটি আগে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের থাকলেও সেটিকে বাড়িয়ে এখন পাঁচ কিলোমিটার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। করিডরটি চওড়ায় ৩০০-৩৫০ মিটার পর্যন্ত হবে। করিডরের দুপাশে ব্যাটারিচালিত বেড়া থাকবে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল রাজেন্দ্র জাখর বললেন, হাতি যাতে স্বাভাবিকভাবে এই করিডরে চলাচল করতে পারে সেজন্য এখানে জলাশয়, শেড ট্রিরও বন্দোবস্ত থাকবে।

শিলিগুড়ির একটি অংশ সহ জলপাইগুড়ি জেলা ও আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে হাতি চলাচলের ১৬টি করিডর রয়েছে। কিন্তু বহুদিন ধরেই এই করিডরগুলি সমানে দখল হয়েছে।  পরিণতিতে চলাচলের ক্ষেত্রে দুই-আড়াই কিলোমিটার পরপর বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হাতি বিকল্প পথে চলাচল করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এর জেরে সমানে মানুষ ও বন্যপ্রাণের সংঘাত বেড়েছে। সমস্যা মেটাতে বনমন্ত্রী জোতিপ্রিয় মল্লিক চলতি বছর জলপাইগুড়ি ও মাদারিহাটে জলপাইগুড়ির পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন ও বন দপ্তরকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। পরে তিনি চা বাগান কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গেও আলাদা করে বৈঠক করেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, হাতি চলাচলের অধিকাংশ করিডরে চা বাগান পড়েছে। জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, এই করিডরগুলি পুনর্গঠন করতে গেলে চা বাগানের চাষ ও অচাষযোগ্য জমি ব্যবহার করতে হবে। ইতিমধ্যে চা বাগানের বেশ কিছু অচাষযোগ্য জমি চিহ্নিতও করা হয়েছে। চা বাগানের বেশ কিছু আবাসন অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। গোটা বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে তা ইতিমধ্যে বন দপ্তরের কাছে পাঠানোও হয়েছে।

বন দপ্তর সূত্রে খবর, প্রাথমিকভাবে হাতি চলাচলের আরও যে কটি করিডরকে পুরোনো চেহারায় ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেগুলির মধ্যে জলদাপাড়া থেকে ডায়না, গরুমারা থেকে ডায়নার জঙ্গল, সেন্ট্রাল ডায়না থেকে মোরাঘাট, মোরাঘাট থেকে রেতির জঙ্গল, গরুমারা থেকে বক্সা এবং চাপড়ামারি থেকে আপালচাঁদ ফরেস্ট পর্যন্ত এলিফ্যান্ট করিডরগুলিও রয়েছে। এদিকে ডুয়ার্সের বানারহাট, নাগরাকাটা, বোদাগঞ্জ, ওদলাবাড়ির মতো নানা জায়গায় হাতির হানাদারির ঘটনা বাড়ছে। সমস্যা মেটাতে এই জায়গাগুলিতেও করিডর পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments