শিবশংকর পাল: ২০১৯ সালে প্রথম রিচাকে দেখেছিলাম। আমি তখন বাংলার মহিলা দলের কোচ। প্রথম আলাপেই রিচাকে বাকিদের চেয়ে আলাদা বলে মনে হয়েছিল। মনে হয়েছিল, এই মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত একটা জোশ রয়েছে। মনের জোরও সাংঘাতিক। সঙ্গে রয়েছে বিশ্বজয়ের মশলা।
গতরাতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতীয় মহিলা দলের ক্রিকেটাররা যখন উৎসবে মজে, তখন আমার মধ্যেও অদ্ভুত একটা আবেগ কাজ করছিল। মনে পড়ছিল অনেক কথা। আসলে ২০১৯ সাল থেকে ২০২৫, মাঝের সময়ে রিচা ক্রিকেটার হিসেবে যেমন এগিয়ে গিয়েছে, ঠিক তেমনই ও আমার মেয়ে হয়ে উঠেছে। বেলেঘাটায় আমার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত রিচার। আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ওর দারুণ বন্ধুত্ব। একটা সময় সকালে বাংলা দলের সঙ্গে অনুশীলন শেষ করে আমার গাড়িতেই চলে যে দক্ষিণ কলকাতার পাটুলিতে আমার অ্যাকাডেমিতে। সামান্য সময় বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে অ্যাকাডেমির ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়ত।
রিচাকে নিয়ে আজ সারাদিন ধরে অনেকেই আমার কাছে নানা প্রশ্ন করেছেন। বাংলা বনাম ত্রিপুরার রনজি ট্রফি ম্যাচ চলার কারণে অনেকের প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনি। রিচার ইউএসপি কী? এমন প্রশ্নও অনেকে করেছেন। স্পষ্ট বলছি, রিচার মধ্যে অদ্ভুত ভয়ডরহীন মানসিকতার পাশে বাইশ গজে ব্যাট হাতে বড় ছক্কা হাঁকানোর বিরল গুণ ছিলই। অনেকেই জানেন না, রিচা যখন ক্রিকেট শুরু করেছিল, ইনিংস ওপেন করত ও। সময়ের সঙ্গে আমিই ওকে পরামর্শ দিয়েছিলাম মিডল অর্ডারে খেলার। দেশের হয়ে বিশ্বকাপের আসরে মিডলঅর্ডারে ব্যাটিং করেই একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়েছে ও। গতরাতে চাপের মুখেও দীপ্তি শর্মাকে নিয়ে ২৪ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে ভারতের স্কোর ২৯৮-এ পৌঁছে দিয়েছিল রিচাই।
আগে বলিনি, আজ একটা রহস্য ফাঁস করছি। সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল, শেষ দুই ম্যাচ ভাঙা আঙুল নিয়ে খেলেছে রিচা। নিউজিল্যান্ড ম্যাচে কিপিংয়ের সময় বাঁ হাতের আঙুলে চোট পেয়েছিল ও। পরে জানা যায়, আঙুল ভেঙেছে। সেই কারণে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলেনি ও। সেমিফাইনাল ও ফাইনালে রিচার ব্যাটে ছক্কা দেখে ওর সতীর্থরাই মজা করে জানতে চেয়েছে, ভাঙা আঙুলে এমন ভেলকি কীভাবে সম্ভব হল। আজ বিকেলের পরে রিচার সঙ্গে যখন আমার কথা হচ্ছিল, একই কথা আমিও জিজ্ঞাসা করি। জবাবে ও বলে, স্যর আপনি তো জানেনই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করি। আসলে বিশ্বজয়ের স্বাদটা প্রবলভাবে পেতে চেয়েছিল ও। রিচার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আরও একটি বিষয় অনুভব করলাম আজ। অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে ও। এমন ঘোরে ওকে থাকতে আগে দেখিনি। আসলে বিশ্বজয়ের মঞ্চটাই এমন। আমি নিশ্চিত, রিচা এখানেই থামবে না। আরও সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবে।

