বাগডোগরা ও মাটিগাড়া: কারও খোয়া গিয়েছে দেড় লক্ষ, কারও ৭ লক্ষ, কারও বা তারও বেশি। রাঙ্গাপানির ওই কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (সিএসপি) অপারেটর যে কতজন গ্রাহককে প্রতারণা করেছে, তার হিসাবটা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই কত টাকা তছরুপ হয়েছে, সেকথাও স্পষ্ট করে এখনই বলতে পারছেন না কেউ। তবে অনুমান করা হচ্ছে, লুট হয়ে যাওয়া টাকার অঙ্কটা কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গতকাল রাঙ্গাপানির সিএসপির সামনে সকাল থেকেই তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রতারিত গ্রাহকরা লাইন দেন আবেদন জমা দেওয়ার জন্য। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিকরা সেখানে গেলে প্রতারিতরা তাঁদের উপর ক্ষোভ উগরে দেন। দুপুরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা রাঙ্গাপানি-ফাঁসিদেওয়া সড়ক অবরোধ করেন। পরে রাঙ্গাপানি ফাঁড়ি এবং বাগডোগরা থানার পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। গতকালের পর মঙ্গলবারও কয়েকশো প্রতারিত গ্রাহক উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ব্যাংকে বিক্ষোভ দেখান। তাদের অভিযোগ, প্রায় ১০ বছর থেকে ফাঁসিদেওয়া ব্লক রাঙ্গাপানি সিএসপি’তে তাঁরা টাকা জমা করতেন। তবে কখনও তাদের পাস বই দেওয়া হত না। এমনকি পাস বই চাইলে লিংক নেই, সার্ভার ডাউন বলে বিভিন্ন অজুহাত দেখানো হত। এরপর গ্রাহকরা ব্যাংকে কত টাকা আছে খোঁজ করতে শিবমন্দির ব্রাঞ্চে আসেন। ব্যাংক ম্যানেজার জানান, তাঁদের অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা নেই। এরপর সিএসপি’তে তাঁরা ফেরত গেলে পালিয়ে যায় দায়িত্বে থাকা যুবক। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতে এদিন উত্তপ্ত হয় শিবমন্দির এলাকা। ব্যাংকের সামনেই বিক্ষোভ দেখান গ্রাহকরা। এমনকি ব্যাংক ম্যানেজার সহ কর্মীদের ব্যাংকের ভেতরে বন্ধ করে শাটার নামিয়ে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় মাটিগাড়া থানার পুলিশ।
গত সপ্তাহ থেকেই নিখোঁজ অভিযুক্ত সিএসপি অপারেটর। সোমবার কয়েকশো প্রতারিত গ্রাহক রাঙ্গাপানির সিএসপিতে গিয়ে কার কত টাকা খোয়া গিয়েছে তা জানিয়ে আবেদন করেন। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিক সুমিতা লামা বলেন, ‘বহু কোটি টাকা প্রতারণা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে সঠিক পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়।’ রাঙ্গাপানির বাসিন্দা অঞ্জলি বিশ্বাস, নামে এক গ্রাহক এদিন বাগডোগরা থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর ৮ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা খোয়া গিয়েছে।
সরকারপাড়ার বাসিন্দা শিবনাথ সরকার মাছ বিক্রি করেন। তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়ের ৭ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা ওই সিএসপিতে জমা ও করেছিলেন। তাঁর সব টাকাই গায়েব। দারাবক্স গ্রামের মেরি রায়ের ৩ লক্ষ টাকা, খলিলজোতের ধীরেন সিংহর ৭ লক্ষ, নির্মলজোতের শেফালি চক্রবর্তীর ১ লক্ষ ৪০ হাজার, সিয়াভিটার ফুলমালা সিংহের ৫ লক্ষ- এমন তালিকা অনেক লম্বা।
ব্যাংকের নিয়ম হচ্ছে, সিএসপিতে ২০ হাজার টাকার বেশি জমা দেওয়া যায় না। ১০ হাজারের বেশি ফিক্সড ডিপোজিট করা যায় না। কিন্তু ওই সিএসপিতে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা জমা করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে ব্যাংকিং কনসালট্যান্ট সংস্থার মাধ্যমে ওই সিএসপি পরিচালিত হত, সেই সংস্থার তরফে গ্রাহকদের আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে।
বাগডোগরা থানার ওসি নির্মলকুমার দাস জানিয়েছেন, সিএসপি পরিচালক সংস্থার তরফে একটি প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে তাতে টাকার পরিমাণ বলা নেই। প্রায় ১২ বছর ধরে অভিযুক্ত ওই সিএসপি চালাচ্ছিল। কোনওরকম ঊর্ধ্বসীমা ছাড়াই ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফিক্সড ডিপোজিট করে সে নাকি সাদা কাগজে ব্যাংকের লোগো দেওয়া সার্টিফিকেট দিত।