পুনেঃ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জোড়া টেস্ট ও সিরিজ হারের লজ্জা নিয়ে শেষ বিকেলে যখন সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির হলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল দিকশূন্যপুরের বাসিন্দা। কেন এভাবে দল ব্যর্থ হল, কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না তিনি। মানতেও পারছিলেন না।
কিউয়িদের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজের এখনও একটি টেস্ট বাকি। মুম্বইয়ে শেষ টেস্টের পরই সতীর্থদের নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিমানে উঠতে হবে হিটম্যানকে। কিন্তু তার আগে তাঁর সামনে এখন চ্যালেঞ্জের এভারেস্ট। দলের ব্যাটাররা নিজেদের প্রয়োগ করতে পারছেন না। শট বাছাইয়ে ভুল হচ্ছে নিয়মিত। পেসের বিরুদ্ধে দুর্বলতার পাশে মিচেল স্যান্টনারদের বিরুদ্ধে স্পিন খেলার স্কিল নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সঙ্গে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের রাস্তাও কঠিন হয়ে গিয়েছে টিম ইন্ডিয়ার জন্য।
কীভাবে ড্যামেজ কন্ট্রোল করবেন ভারত অধিনায়ক? অস্ট্রেলিয়া সফরে কি ভারতীয় দলের জন্য আরও বড় লজ্জা অপেক্ষা করে রয়েছে? ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত কি শুরু হয়েছে? সাংবাদিক সম্মেলনে ভারত অধিনায়কের জন্য ছিল এমনই নানা প্রশ্নের পসরা। মাঠে না পারলেও সাংবাদিক সম্মেলনে সোজা ব্যাটে খেললেন ভারত অধিনায়ক। জানিয়ে দিলেন, ব্যর্থতার ময়নাতদন্তের কথা ভাবছেনই না তিনি। ভারত অধিনায়কের কথায়, ‘যখন আমরা ম্যাচ বা সিরিজ জিতি, তখন সেই কৃতিত্ব পুরো দলেরই হয়। তাই দল ব্যর্থ হলে তার দায়ও দলের সকলকেই নিতে হবে। তবে বেশি ভাবতে রাজি নই আমি। মাত্র দুটো টেস্ট হেরেছি। তার জন্য এখনই এত উতলা হওয়ার দরকার নেই। ব্যর্থতার ময়নাতদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে হয় না।’
বর্তমান দলের ব্যাটাররা অতীতে টিম ইন্ডিয়াকে বহু ম্যাচে জিতিয়েছেন। সেই ব্যাটাররাই এখন কাঠগড়ায়। যার মধ্যে অধিনায়ক রোহিতও রয়েছেন। তাই ব্যাটারদের যেমন সমালোচনা করেছেন হিটম্যান, তেমনই তাঁদের আড়াল করার চেষ্টাও করেছেন তিনি। রোহিতের কথায়, ‘টেস্ট ম্যাচ জয়ের জন্য ব্যাটারদের রান করাটা খুব জরুরি। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা পারলেও আমরা সেটা পারিনি। খারাপ ব্যাটিংয়ের পাশে শট নির্বাচনও ভালো হয়নি। অবশ্যই এব্যাপারে সতর্ক হতে হবে আমাদের। সকলেই নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। কিন্তু তারপরও ব্যর্থতার ময়নাতদন্ত নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নই আমি।’ মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত ২০১২ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ হেরেছিল। মাঝে দীর্ঘসময় পার। ধোনির পর এবার রোহিতের ভারতকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারতে হল নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় দলের পারফরমেন্স নিয়ে হতাশা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। ভারত অধিনায়ক অবশ্য কাউকে আলাদাভাবে ব্যর্থতার কাঠগড়ায় তুলতে চাইছেন না। বলছেন, ‘অতীতে আমরা ভালো খেলেছি বলেই আমাদের নিয়ে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সবাই ধরেই নিয়েছে, মাঠে নামলেই ভারত সব ম্যাচে জিতে যাবে। কিন্তু কেউ মনে রাখে না, খারাপ সময় আমাদেরও আসতে পারে। যদি টানা ম্যাচ হারতাম, তাহলে উদ্বেগের বিষয় হত। কিন্তু সেটা হয়নি। শেষ দুটো টেস্টে সত্যিই প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারিনি আমরা।’
সামনেই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ। যেখানে পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। তার আগে টিম ইন্ডিয়ার পারফরমেন্স ক্রিকেটমহলে উদ্বেগ তৈরি করলেও ভারত অধিনায়ক সেই দলে নেই। নিউজিল্যান্ডের দাপটের কথা স্বীকার করে নিয়ে ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড দুটো টেস্টেই আমাদের চেয়ে ভালো খেলেছে। আমাদের পরিকল্পনা কাজে আসেনি। আগামীদিনে অবশ্যই ভুল শুধরে খেলতে নামব আমরা।’ কিউয়ি স্পিনাররা যেখানে ভারতের মাটিতে বল হাতে ম্যাজিক দেখাচ্ছেন, স্যান্টনার ১৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হচ্ছেন। সেখানে রবিচন্দ্রন অশ্বীন, রবীন্দ্র জাদেজারা বেশ ম্লান। কেন এমন অবস্থা ভারতীয় স্পিনারদের? রোহিতের কথায়, ‘ওদের উপরও প্রত্যাশার বিশাল চাপ রয়েছে। সব বলে অশ্বীনরা উইকেট পাবে, এমনটা হয় না।’
রোহিত যতই অজুহাতের পথে গিয়ে সতীর্থদের আড়াল করুন না কেন, মিশন অস্ট্রেলিয়ার আগে টিম ইন্ডিয়াকে নিয়ে অশনিসংকেত দেখছে ক্রিকেটমহল।