সমস্যার শিকড় গভীরে

শেষ আপডেট:

প্রায় ২৬০০০ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের বিষয়টি ক্রমে চলে যাচ্ছে বিশবাঁও জলে।‌ অনেকে ভেবেছিলেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না তাঁর কর্মজীবনের শেষদিনে এই মামলায় এসএসসি’র রিভিউ পিটিশন শুনবেন। বাস্তবে তা হয়নি।‌ এরপর কোন বেঞ্চে ও কবে শুনানি হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার আবহেও চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা ফের সংবাদ শিরোনামে এসেছেন আন্দোলনে শামিল হওয়ায়।‌

বিকাশ ভবনের সামনে তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ হয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছে রাজপথ। যদিও তৃণমূলের ভাষায়, সেসব নাটক। সরকারি দলের এমন প্রতিক্রিয়ায় প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, ২০১৬ সালের প্যানেল বাতিল নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর এই বিক্ষোভ-আন্দোলনের শেষ কোথায়? প্রথমে আসে যোগ্যদের প্রসঙ্গ। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে শিক্ষকতার অনুমতি, বেতনের নিশ্চয়তা সত্ত্বেও ১৫৪০৩ যোগ্য শিক্ষক কেন আন্দোলনে?

প্রথম কারণ, তাঁদের শিক্ষকতার ছাড়পত্র ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দ্বিতীয় কারণ, ফের নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে হবে তাঁদের। শিক্ষকরা এর কোনওটিই চাইছেন না। তাঁরা সংগতভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন, এসএসসি’র ভুলের মাশুল তাঁরা কেন গুনবেন? বরং রিভিউ পিটিশন করার আগে তাঁদের সঙ্গে সরকার কথা বলুক- এটা তাঁদের দাবি। সেই দাবির নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এসএসসি’র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে আপত্তি আছে আদালতের রায়ে যোগ্য শিক্ষকদের।

চাকরির নিশ্চয়তা এবং ফের পরীক্ষা না দেওয়া- এই দুটো তাঁদের প্রধান দাবি। যদিও গত ৩ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট ২৫,৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বহাল রাখলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, একজনেরও চাকরি যাবে না। তা নিশ্চিত করতে তাঁর প্ল্যান এ, বি, সি, ডি, ই ইত্যাদি প্রস্তুত আছে। রাজ্য কিন্তু আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা না বলে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে।‌

আইনজ্ঞরা অবশ্য মনে করছেন, রিভিউ পিটিশন করে কিছু লাভ হবে না। যেখানে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই কারচুপিতে ভরা, সেখানে রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই।‌ অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। সুপ্রিম কোর্ট গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি শিক্ষাকর্মীদের বিষয়ে কিন্তু কোনও উচ্চবাচ্য করেনি, মুখ্যমন্ত্রী তাই চাকরিচ্যুত গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য মাসে ২৫০০০ এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য মাসে ২০০০০ টাকা ভাতা ঘোষণা করে দিয়েছেন।

তাঁর যুক্তি, ডানলপ বন্ধের পর থেকে রাজ্য যেমন কর্মীদের মাসে দশ হাজার টাকা করে দেয়, তেমনি সমস্যা না মেটা পর্যন্ত শিক্ষাকর্মীরা ভাতা পাবেন। মানবিকতার দৃষ্টি থেকে দেখলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।‌ কিন্তু দেশের আইনকানুন তো আছে। ১৭ এপ্রিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি’র ২০১৬ প্যানেলে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে আগাগোড়াই দুর্নীতি হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষাকর্মীদের জন্য মাসিক ভাতা ঘোষণা করেন কোন আইনে? সেটা আদালতের অবমাননা হবে না তো? আইনজ্ঞদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুতদের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এভাবে সরকারি অর্থ খরচ করতে পারেন না।‌ দ্বিতীয়ত, যদি একটি ক্ষেত্রে এমন মাসোহারার ব্যবস্থা হতে পারে, তাহলে বাকি চাকরিচ্যুতদের জন্য নয় কেন?

বস্তুত অযোগ্য চিহ্নিত শিক্ষকদের একাংশও ইতিমধ্যে দাবি তুলেছেন, তাঁদের জন্যও মুখ্যমন্ত্রী ভাতা ঘোষণা করুন। তাঁদের বক্তব্য, কীসের ভিত্তিতে তাঁদের দাগি তকমা দেওয়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। ওএমআর সংক্রান্ত যে সমস্যার কথা বলা হচ্ছে, তারও নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। আপাতত রিভিউ পিটিশনের দিকে তাকিয়ে সব পক্ষ। কিন্তু সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে।

মুখ্যমন্ত্রী চাইলেও চটজলদি কোনও সমাধান সম্ভব নয়। তাই ধরে নেওয়া যায়, ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রচারের বিষয় হয়ে উঠতে পারে ছাব্বিশ হাজার চাকরি বাতিল।

Uttarbanga Sambad
Uttarbanga Sambadhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad was started on 19 May 1980 in a small letterpress in Siliguri. Due to its huge popularity, in 1981 web offset press was installed. Computerized typesetting was introduced in the year 1985.

More like this
Related

টনক নড়ুক

ভারতে অসামরিক বিমান পরিবহণের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার অন্যতম নজির...

লন্ডনে নজর ঢাকার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশে...

সবেতেই ভোট-রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের এখনও এক বছর বাকি। কিন্তু স্লগওভারে...

ভাতায় খেসারত

টাকা তো খোলামকুচি নয়। বিশেষ করে যদি তা হয়...