মালবাজার: ‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ডাক জীবনে চলার পথে পাথেয় রুবি সাহার। রুবির বয়স মোটে ৩০ বছর। মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ রুবি চার দেওয়ালের সাংসারিক চৌহদ্দিতে আটকে না থেকে তৈরি করেছেন দৃষ্টান্ত। পশ্চিম ডুয়ার্সের বাগানগুলো থেকে নারী পাচার রোধে সক্রিয় একজন মহিলা সমাজসেবী রুবি। এছাড়া বাগানে কর্মরত মহিলা শ্রমিকদের মজুরি কিংবা পিএফ সংক্রান্ত সমস্যা, বাগানের বাসিন্দা স্কুলছুট নাবালক-নাবালিকাদের ফের স্কুলে ভর্তির কাজে ২০১৬ সাল থেকে তৎপর তিনি। এভাবে অভাবী, বিপন্ন মানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছেন। কেবল নারী নয়, ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ পুরুষদের উদ্ধারেও রুবি সফল।
কলা বিভাগে লেখাপড়ার পরে নেতাজি সুভাষচন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অফ সোশ্যাল ওয়ার্ক নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কয়েক বছর হাতে-কলমে কাজ করার পরে রুবি নিজেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। রুবি বললেন, ‘কাজ চালাতে আমায় সহযোগিতা করছেন ১০-১২ জন। এঁদের ভিতর নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল পুরুষরাও রয়েছেন। আমার মূল লক্ষ্য দরিদ্র পরিবারের পাচার হওয়া মেয়েদের ফের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।’
নিজে কাজ আরম্ভ করার পর বছর দুই আগে একাই চাবাগানগুলোতে ঘুরে ঘুরে পাচার হওয়া মেয়েদের সম্পর্কে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এরপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে তা স্থানীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেন। ওই তথ্যচিত্র খতিয়ে দেখে রাঙ্গামাটি চা বাগান থেকে পঞ্জাবে পাচার হওয়া একটি মেয়েকে উদ্ধার করে পুলিশ। কেবল বাংলা নয়, দিল্লির যৌনপল্লি থেকে নাবালিকা উদ্ধারেও সক্রিয় ভূমিকা ছিল তাঁর।
ওদলাবাড়ির বাসিন্দা রুবি বিবাহিত। স্বামী বিকাশ মাল সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। রুবি বললেন, ‘আমার স্বামী এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা সবসময়েই সমাজসেবার কাজে উৎসাহ জুগিয়েছেন। ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা আমার জীবনের লক্ষ্য। কারণ আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ সমাজ গড়ে উঠবে নারীর নেতৃত্বে।’
সেবামূলক কাজের প্রতি রুবির নিষ্ঠা ও সততাকে কুর্নিশ জানিয়েছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। স্বেচ্ছাসেবী বিকাশদেব রায় বলেন, ‘রুবি আমার ছোট বোনের মতো। ওঁর কাজকে অভিনন্দন জানাই।’ আর স্বেচ্ছাসেবী আনোয়ার হোসেনের কথায়, ‘অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত গড়েছেন রুবি।’