শুভজিৎ দত্ত, নাগরাকাটা: ঝান্ডিতে দেখা মিলল ক্রমশ দুষ্প্রাপ্য হয়ে আসা রুফাস নেকড হর্নবিলের (Rufous-Necked Hornbill)। সম্প্রতি অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় নামে এক পাখিপ্রেমী এই প্রজাতির ৫টি পাখি লেন্সবন্দি করেছেন। অনিন্দিতা জানিয়েছেন, রুফাস নেকড হর্নবিল সাধারণত উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়াও ভুটান, মায়ানমার, দক্ষিণ চিন, লাওস, ভিয়েতনামের মতো দেশে দেখা যায়। পাখির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত কার্সিয়াংয়ের লাটপাঞ্চারে কেবল দুটি রুফাস নেকড হর্নবিল রয়েছে। সব মিলিয়ে ঝান্ডিতেও (Jhandi) রুফাসের দর্শন পেয়ে দারুণ খুশি গত ২০ বছর ধরে পাখি সংরক্ষণের ওপর কাজ চালিয়ে যাওয়া অনিন্দিতা।
বর্তমানে হায়দরাবাদের বাসিন্দা কলকাতার কন্যা বলেন, ‘ঝান্ডি ও লাগোয়া দূরখোলা সহ আশপাশের একাধিক স্থান প্রকৃত অর্থেই পাখিরালয়। পাহাড়ের এই মণিমাণিক্য শুধু যাঁরা পাখি ভালোবাসেন বা পাখি নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের জন্যই নয়। পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। দরকার শুধু সঠিকভাবে প্রচারের আলোয় তুলে ধরা।’
রুফাস নেকড হর্নবিল ছাড়াও ঝান্ডিতে আরও নানা প্রজাতির পাখিও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো অর্নিথোফিলস-এর লেন্সে ধরা পড়েছে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেড ফেসড লিওচিচিলা, হিমালয়ান কিউটিয়া, পেল হেডেড উড পেকার, ব্ল্যাক থ্রোট প্যারটবিল, রিউফাস ভেন্ডেট ইউহিনা, হিমালয়ান ব্লুটেইল, স্কারলেট ফিঞ্চ। তাঁর লেন্সে ধরা পড়েছে বার্ডারদের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত সাত রঙে রঞ্জিত মিসেস গোউল্ড নামে আরেক প্রজাতির পাখিও।
পাখি দেখার জন্য পাহাড়ের লাটপঞ্চার, ঋষভ, রংটংয়ের মতো স্থানগুলি সুপরিচিত। ফি বছর শীত পড়তেই কাতারে কাতারে পাখিপ্রেমীরা সেখানে ভিড় জমান। ছুটে আসেন বিদেশিরাও। তবে ঝান্ডি বা মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের দূরখোলায় প্রচুর জানা-অজানা পাখি রয়েছে বলে অনিন্দিতা জানিয়েছেন। দার্জিলিং উড পেকার বা হিমালয়ান উড পেকারদের কাছে এইসব স্থান যেন শান্তির নীড়। দূরখোলাতে চেরি গাছের ফুলের মধু খেতে মিসেস গোউল্ড পাখি ছুটে আসে। অনিন্দিতা বলছেন, ‘বহুদিন ধরেই ঝান্ডি আমাকে পাখির জন্য টানে। অন্যরাও এসে তাদের দু’চোখ ভরে দেখুক। কোনও সমস্যা নেই। তবে কখনোই যেন তাদের বিরক্ত না করা হয়। এই সব সম্পদ উত্তরবঙ্গের অহংকার।’
যে ৫টি রুফাস নেকড হর্নবিল ঝান্ডিতে রয়েছে সেগুলির মধ্যে দুটি ছানা। বাকিগুলি পরিণত। রুফাসের প্রিয় খাবার অ্যাভোকাডো ও ডুমুরের মতো ফল। স্থানীয়রা যাতে পাখিগুলিকে আগলে রাখেন সেজন্য অনিন্দিতা ও তাঁর টিম বর্তমানে সেখানে ধারাবাহিকভাবে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।