অরুণ ঝা, ইসলামপুর: শহরের অলিগলিতে গজিয়ে উঠেছে ফাস্ট ফুডের দোকান। চাউমিন, মোমো, কাটলেট থেকে মোগলাই পরোটা- মিলছে মুখরোচক সব খাবার। নানা বয়সি খাদ্যপ্রেমীরা ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। অথচ স্বাস্থ্যবিধি যে লাটে উঠেছে, সেদিকে হুঁশ নেই কারও। অভিযোগ, অধিকাংশ দোকান চলছে বিনা ট্রেড লাইসেন্সে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)-এর শংসাপত্র পাওয়া সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত চিকিৎসকরা।
ইসলামপুর (Islampur) মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অমিতাভ কুণ্ডু বলছিলেন, ‘ফাস্ট ফুড কালচার ক্রমশ বিপজ্জনক দিকে এগোচ্ছে। অম্বল, কোলেস্টেরল, স্থূলতা, ভিটামিনের অভাব এবং লিভারের সমস্যার মতো রোগের অন্যতম কারণ এধরনের খাবার। কিশোর, তরুণরা প্রথম দিকে খারাপ প্রভাব বুঝতে পারে না কিংবা পাত্তা দেয় না। ভবিষ্যতে জটিল শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। লাইসেন্সবিহীন দোকান মানেই বিপদ আরও বেশি। সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নজর দেওয়া হয় না।’ প্রশাসনিক কড়াকড়ির পাশাপাশি মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে, পরমার্শ অমিতাভর।
বহু ফাস্ট ফুড স্টলের যে লাইসেন্স নেই, তা স্বীকার করে নিয়েছে পুরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দ্রুত অভিযানে নামার আশ্বাস দিয়েছেন পদাধিকারীরা। গাফিলতির প্রমাণ মিললে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। পুর চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল আগরওয়ালের প্রতিক্রিয়া, ‘সমস্যা অস্বীকার করার উপায় নেই। ফুড সেফটি ইনস্পেকটরের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হবে।’ প্রশ্ন উঠছে, খোঁজখবর করতেই চেয়ারম্যান কড়া বার্তা দিচ্ছেন বটে, তাহলে এতদিন কার্যত পুরসভার নাকের ডগায় কীভাবে রমরমিয়ে ব্যবসা করছেন অভিযুক্ত ব্যবসায়ীরা?
নিউটাউন রোডে টার্মিনাসের কাছ থেকে শুরু হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে একের পর এক ফাস্ট ফুডের দোকান বসে। সন্ধে নামতেই স্টলগুলোকে ঘিরে ভিড় বাড়তে থাকে। শহরের মাঝখান দিয়ে যাওয়া রাজ্য সড়কের ধারে অস্থায়ী দোকানের অভাব নেই। সরকারি জমি দখল করে ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কারবার জাঁকিয়ে বসেছে ১৭টি ওয়ার্ডেই। বিতর্ক নিয়ে পালটা যুক্তি দিচ্ছেন দোকানদাররা। এক স্টল মালিকের কথায়, ‘বেকার বসে থাকার চাইতে ব্যবসা করে সংসার চালাচ্ছি, এতে আপত্তি কোথায়? এভাবে তো কিছু কর্মসংস্থানও তৈরি হয়।’
ধীরে ধীরে গরম পড়তে শুরু করেছে। এইসময় খাওয়াদাওয়া নিয়ে বাড়তি সাবধানতার পরমার্শ দেন চিকিৎসকরা। তার আগে শহরের ‘ফুড সেফটি’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে। এমনকি ফলের রস, লস্যির দোকানগুলোতে নজর রাখার মতো কেউ নেই। নামীদামি হোটেল, রেস্তোরাঁ আর মিষ্টির দোকান চলছে আপন মেজাজে। রবিবার বিকেলে একটি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে চিকেন পকোড়া খাচ্ছিলেন মৌমিতা সরকার নামে এক স্থানীয়।
-যেটা খাচ্ছেন, সেটা কতটা স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে তৈরি, খোঁজ নিয়েছেন?
-সবটাই তো সকলের সামনে হয়। আমরা অর্ডার দিলে ওরা পরিবেশন করে। নিয়ম মেনে দোকান চলছে কি না, সেটা তো প্রশাসনের দেখার কথা। বাকি উপরওয়ালা ভরসা।
এ প্রসঙ্গে পুরসভার স্যানিটরি ইনস্পেকটর বাবলু নাথের বক্তব্য, ‘অধিকাংশ ফাস্ট ফুড স্টলের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুসারে পদক্ষেপ করা হবে।’ তাঁর আশ্বাস, খাবারের দোকানে অভিযান চালিয়ে নমুনা সংগ্রহের পর যাচাই করে দেখা হবে মান।