গুজরাট টাইটান্স – ১৫৬/৯ (২০ ওভার)
কলকাতা নাইট রাইডার্স – ১৪৮/৮ (২০ ওভার)
মুম্বই : আলঝারি জোসেফের শর্ট বলটা শরীর বেঁকিয়ে পুল করলেন দ্রে রাস। ব্যাটের উপরের দিকে লেগে বল উঠে গেল আকাশে।
ফাইন লেগ থেকে ক্যাচের দৌড় শুরু করেছিলেন লকি ফার্গুসন। কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে তিনি অনুভব করলেন, ভুল লাইনে যাচ্ছেন। দ্রুত নিজের শরীর পিছন দিক করে শূন্যে ছুঁড়ে ধরলেন মায়াবী ক্যাচ। ডাগআউটে বসে হতাশায় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন নাইট ক্যাপ্টেন শ্রেয়স আইয়ার।
প্রবল হতাশায় দুদিকে মাথা নাড়াতে নাড়াতে হেলমেট খুলে ব্যাটটাকে গদার মতো ঘোরাতে ঘোরাতে প্যাভিলিয়ানের দিকে হাঁটা শুরু করলেন দ্রে রাস (২৫ বলে ৪৮ ও ৫/৪)। হতাশার সাগরে ডুবে গেল কেকেআর। তখনই স্পষ্ট হয়ে গেল ম্যাচের ভাগ্য। আন্দ্রে রাসেলের গড়ে দেওয়া মঞ্চে নাইটদের জয়ের খরা কাটছে না। কাটেওনি। নিট ফল, গুজরাটের কাছে ৮ রানে হেরে টানা চার ম্যাচ হারের যন্ত্রণায় ডুবে গেল নাইটরা।
কেকেআরের ক্যারিবিয়ান কিং রাসেল বল হাতে ইনিংসের শেষ ওভার করতে এলেন। মোট চার উইকেট নিয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার (৪৯ বলে ৬৭) দলকে ধাক্কা দিয়ে গেলেন। রাসেলের চমকপ্রদ শেষ ওভারের চার উইকেটের সুবাদেই নির্ধারিত ২০ ওভারে গুজরাট টাইটান্স ১৫৬/৯-এর বেশি করতে পারেনি। নভি মুম্বইয়ে ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামের বাইশ গজে খেলার শুরু থেকেই বল থমকে আসছিল। বড় শট খেলার সমস্যা হচ্ছিল। তাই মনে করা হয়েছিল, ১৫৬ রানটা নিরাপদ নয়।
কিন্তু তখন আর কে জানত, দলের প্রথম একাদশে অদ্ভুতুড়ে সব পরিবর্তন করে, ভুল শট খেলে নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়ে নেবেন শ্রেয়স (১২), নীতিশ রানা (২), ভেঙ্কটেশ আইয়ার (১৭), স্যাম বিলিংসরা (৪)। পরিস্থিতি এমনই জটিল, অখ্যাত রিঙ্কু সিং (২৮ বলে ৩৫), রাসেলদের মরিয়া চেষ্টার পরও জয়ে সরণিতে ফেরা হল না শাহরুখ খানের দলের। তাছাড়া ক্রিকেট তো বরাবরই দলগত খেলা। সেখানে রাসেল একা কীই বা করবেন! আর কী করলে তাঁর দল জিতবে?
বল করে উইকেট নিচ্ছেন। ব্যাট হাতে রান করছেন। হতে পারে যশ দয়ালের (৪২/২) শর্ট বলের ফাঁদে পা দিয়ে ব্যক্তিগত ৪ রানের মাথায় তিনি তিনি আউট হয়েছিলেন। কিন্তু বলটা ছিল নো। অভাবনীয়ভাবে জীবন পাওয়ার পরও দলকে ম্যাচ জেতাতে না পারার জ্বালা রাসেলকে দগ্ধ করবেই। উপহার দেবে নিদ্রাহীন রাতও। কিন্তু তিনি তো চেষ্টা করেছিলেন। দেখিয়েছিলেন অসম্ভবকে সম্ভব করার ইনটেন্ট। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা?
রাজস্থানের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে বড় রান পাওয়া অ্যারন ফিঞ্চ দলে নেই। অফ ফর্মের প্যাট কামিন্সকে বসিয়ে টিম সাউদিকে (২৪/৩) ফেরানোর সিদ্ধান্তে তবু যুক্তি রয়েছে। কিন্তু স্যামকে দিয়ে ওপেন করানোর যুক্তিটা কী? ভেঙ্কটেশ ফর্মে নেই বলেই কি ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন? কিন্তু কেন? সুনীল নারায়ণের (৫ ও ৩১/০) সঙ্গে ওপনিংয়ে ডান-বাঁহাতি কম্বিনেশন রাখা? নাকি অন্য কিছু ভাবনা ছিল কেকেআরের?
যদিও নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট ম্যাচের পরিস্থিতির বদলের সঙ্গে নিজেদের স্ট্র্যাটেজির বদলানোর স্কিলটা শিখতে পারেনি এখনও। আজ গুজরাট ম্যাচে বারবার তা প্রমাণ হয়েছে। তেমনই রহস্য হারিয়ে ফেলা বরুণ চক্রবর্তীর (২৬/০) উপর দলের অত্যধিক নির্ভরতা ভোগাচ্ছে শ্রেয়সদের। আর নাইট ব্যাটাররা বিপক্ষের ভালো মানের ফাস্ট বোলারের পেস ও গতির সামনে পড়লেই ব্যর্থ হচ্ছেন নিয়ম করে। শনিবারও সেটা হয়েছে। সোজাকথায়, মহম্মদ সামি (২০/২), দয়াল, ফার্গুসনদের (৩৩/১) গতির আগুনে পুড়ল আজ কেকেআর।
পঞ্চদশ আইপিএলের শুরু থেকে কেকেআরের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম বলে চলেছেন আগ্রাসী ক্রিকেটের কথা। কিন্তু সবসময় কী সেটা সম্ভব? আর আগ্রাসন মানেই কী দুমদাম ব্যাট চালানো? বিশেষ করে দলের ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতার রোগ সারার কোনও লক্ষণ নেই আপাতত। তাই ফের কেকেহার।
আরও পড়ুন : শ্রীনিধির সঙ্গে ড্র, আই লিগের আশা প্রায় শেষ মহমেডানের