মস্কো: ইউক্রেনের পর এবার রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতির জন্য রাজি করানোর চেষ্টা করছে ট্রাম্প সরকার। বুধবার মস্কোয় আমেরিকার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেই কথা জানিয়ে ট্রাম্পের দাবি, ইউক্রেনের সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এই ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে।’
তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে তিনি আমেরিকায় ক্ষমতায় আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করার যে দাবি করেছিলেন তা যে শুধু কথার কথা ছিল তা স্বীকার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘ঠাট্টার ছলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার কথা বলেছিলাম। বোঝাতে চেয়েছিলাম খুব তাড়াতাড়ি এই যুদ্ধ আমি শেষ করতে পারব।’ আমেরিকা মধ্যস্থতা করার পরেও ইউক্রেন ও রাশিয়া যে একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারছে না দু-দেশের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য থেকে সেটা বোঝা গিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি এক্স পোস্টে অভিযোগ করেছেন, ‘যুদ্ধবিরতির জন্য কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি কূটনৈতিক আলোচনাকে ধ্বংস করতে চাইছেন।’ ইউক্রেনের অভিযোগকে আমল দেননি পুতিন। কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনে বিমান হামলার ঝাঁঝ বাড়িয়েছে রাশিয়া। সমান্তরালে রাশিয়ার কুরস্ক দখল করে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রাশিয়ার বাহিনীর ঘেরাটোপে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। জেলেনস্কি সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসার শর্ত হিসাবে সেই ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়েছেন পুতিন।
শুক্রবার টিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আবেদনের প্রতি সহানুভূতিশীল। কুরস্কের ইউক্রেনীয় সেনারা যদি আত্মসমর্পণ করেন তাহলে আমরা তাঁদের জীবনের নিশ্চয়তা দেব এবং মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করব।’ গত সপ্তাহে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘কুরস্কে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় সেনাকে রুশবাহিনী পুরোপুরি ঘিরে ফেলেছে। ইউক্রেনের সেনাদের অবস্থা খুব খারাপ। তাঁরা দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। তাঁদের জীবন রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট পুতিনকে অনুরোধ জানাচ্ছি। নয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি ভয়াবহ গণহত্যা ঘটবে।’ ইউক্রেন অবশ্য ট্রাম্পের দাবি মানতে রাজি হয়নি। সেদেশের সেনার জেনারেল স্টাফ সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের ইউনিটগুলিকে ঘিরে ফেলার কোনও আশঙ্কা নেই।’ তবে পরিস্থিতির জটিলতার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘কুরস্কের পরিস্থিতি স্পষ্টতই খুব কঠিন। তবে অভিযানটি এখনও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনীয় বাহিনী ওই এলাকায় ঢুকে পড়ার পর রাশিয়া অন্যান্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে পূর্বাঞ্চলীয় লজিস্টিক হাব পোকরোভস্কের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার লড়াইয়ে শামিল ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর চাপ কমেছে।’