গয়েরকাটা: প্রেম করে পালিয়ে মন্দিরে বিয়ের অপরাধে ছেলের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠল মেয়ের বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে। সেই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ছেলের বাবা। বৃহস্পতিবার রাতে ধূপগুড়ি থানার সাঁকোয়াঝোরা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের আংরাভাসার সজনাপাড়া এলাকায় এমন ঘটনায় শুক্রবার তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। মৃত ব্যক্তির নাম মুরালী মজুমদার (৬০)।
দিন পনেরো আগে ছোট একটি সাইবার ক্যাফের মালিক সুমিত মজুমদারের সঙ্গে বিয়ে হয় পাশের আলিপুরদুয়ার জেলার ব্লক ফালাকাটা ব্লকের ধনীরামপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সোনালি রায়ের। সোনালির পরিবার অত্যন্ত বিত্তশালী হওয়ায় এই সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি। তাই সুমিত-সোনালি পালিয়ে মন্দিরে বিয়ে করেন।
সুমিতের পরিবারের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে বাড়িতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় সুমিতের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। মোটরবাইক এবং দুটি বড় গাড়িতে করে ২০-২৫ লোক এসে হামলা চালায়। হামলায় আহত হন বেশ কয়েকজন। হামলাকারীদের হাত থেকে নিজের বড় পুত্রবধূ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর জখম হন সুমিতের বাবা মুরালী মজুমদার। তাঁকে প্রথমে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা খারাপ থাকায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যু হয় মুরালীবাবুর। এদিকে, হামলার পর সোনালিকে নিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। সুমিতের বাড়ির তরফে শুক্রবার সোনালির বাড়ির ৯ জনের বিরুদ্ধে ধূপগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সুমিতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিতের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে মেনে নিতে না পেরে ধূপগুড়ি থানায় ছেলে ও ছেলের পরিবারের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেছিল সোনালির পরিবার। তবে ছেলে ও মেয়ে দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাঁরা বুধবার জলপাইগুড়ি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ও বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দিতে জানান যে, তাঁরা নিজেদের ইচ্ছায় এই বিয়ে করেছেন। এতে সুমিত ও তাঁর পরিবারের লোকেরা জামিন পেয়ে যান।
অভিযোগ, আদালত থেকেও দলবল নিয়ে সোনালিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল তাঁর পরিবার। শেষপর্যন্ত তা পারেনি আদালত চত্বরে থাকা আইনজীবী ও লোকজনের বাধায়। এতেই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মেয়ের পরিবার। বৃহস্পতিবার রাতে সুমিতের বাড়িতে গিয়ে তারা হামলা চালায়। সুমিত বলেন, ‘এক বছর ধরে আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুজনের সহমতেই বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার স্ত্রীর পরিবার তা মেনে নেয়নি। বারবার আমাকে হুমকি দিয়েছে। গত ১৬ তারিখও আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। গতকাল রাতে অনেকে এসে আমাদের এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে। তাদের হামলাতেই আমার বাবার মৃত্যু হয়। এরকম যে হবে, তা কোনওদিন ভাবিনি। আমি দোষীদের শাস্তি চাই।’ ঘটনায় অভিযুক্ত সোনালির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, হামলার ঘটনার অভিযোগ জানাতে বৃহস্পতিবার রাতে ধূপগুড়ি থানায় গেলে সুমিত ও তাঁর দাদা অমিত সহ ওই পরিবারের চারজনকে পুলিশ আটকে রাখে বলে অভিযোগ। ধূপগুড়ি থানার পুলিশের তরফে পালটা দাবি করা হয়েছে, সুমিতের বাড়িতে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গেলে ওই বাড়ির লোকেরা এক হোমগার্ড সহ এক পুলিশ অফিসারকে আটকে রেখেছিলেন। এদিকে, শুক্রবার সকালে হঠাৎই পুলিশ সুমিতের পরিবারের চারজনকে ছেড়ে দেয়। সুমিতের দাদা অমিত বলেন, পরিবারের বাকিরা বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিল। ধূপগুড়ি-বীরপাড়া হয়ে জলপাইগুড়িতে নিয়ে গেলে বাবার মৃত্যু হয়। বাবা মারা যাওয়ার খবর পেতেই পুলিশ আমাদের ছেড়ে দেয়। আমরা জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের অফিসেও অভিযোগ জানিয়েছি। ধূপগুড়ি থানার আইসি অনিন্দ্য ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।’