ফাঁসিদেওয়া: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ছোট্ট গ্রাম থেকে কত ধরনের অপরাধচক্রের জাল বিছিয়েছিল মহম্মদ সইদুল, তা খুঁজতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ পুলিশের। তদন্তে উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণাচক্রের কিংপিন চটহাটের বাসিন্দা মহম্মদ সইদুল মধুচক্রেও জড়িত ছিল। সেজন্য শিলিগুড়ির (Siliguri) বিভিন্ন বারে এবং পাবে কমবয়সি কিছু তরুণীর সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
তরুণীদের সঙ্গে সইদুলের সম্পর্কের বিষয়টি থেকেই পুলিশ আন্দাজ করছে তার চালানো মধুচক্রের কারবারে এই তরুণীদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। বিভিন্ন সময় তাদের পিছনে মোটা টাকাও খরচ করত সইদুল। আর বিভিন্ন পুরুষকে যৌন চাহিদা মেটানোর লোভ দেখিয়ে ফঁাদ পাতত তার এই চক্র। ইতিমধ্যেই, শিলিগুড়ির বিভিন্ন পাবে ও বারে সইদুলের সঙ্গে যোগ থাকা তরুণীদের খোঁজ করছে ফাঁসিদেওয়া থানা।
সূত্রের খবর, শহরের পাবে এবং বারে নিজেরা না গিয়ে সোর্স পাঠিয়ে সইদুলের সঙ্গে যোগ থাকা তরুণীদের খোঁজ করবে পুলিশ। মধুচক্র ছাড়া আর কোনওভাবে তাদের কেউ সইদুলের সহযোগী ছিল কি না তাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, একসময় গ্রামীণ এলাকার ফড়েদের সরকারি মূল্যে ধান বিক্রির টাকা তোলার জন্য অন্যের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জোগান দিত সইদুল। পরবর্তীতে সেই অ্যাকাউন্টই ভাড়া দিয়ে বড় প্রতারণাচক্র গড়ে তুলেছিল সে। অ্যাকাউন্ট জালিয়াতিতে হাত পাকানোর পর সে ব্যাংকের কিছু কর্মীর সঙ্গে আঁতাত করে বিভিন্ন ব্যাংকে ভুয়ো কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। কোটি কোটি টাকা দুবাইয়ে পাঠানোর জন্য সইদুল ও তার সঙ্গীরা এই কারেন্ট অ্যাকাউন্টগুলি ব্যবহার করত। বেটিং এবং অনলাইন লোন অ্যাপের মাধ্যমে সাইবার প্রতারণার টাকা আন্তর্জাতিক স্তরে লেনদেন হত।
সম্প্রতি, ফাঁসিদেওয়ায় সাংবাদিক বৈঠক করে দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ জানিয়েছিলেন, চটহাটের বাসিন্দা মহম্মদ সইদুল তার নিকটাত্মীয়ের ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৩৫ কোটি টাকা লেনদেন করেছিল। সাধারণ সেভিংস অ্যাকাউন্ট দিয়ে এত টাকা লেনদেনের করলে সইদুলদের আগেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল। সেই বিপদ এড়াতে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছিল তারা। পুলিশের দাবি, ব্যাংকের অসহযোগিতার কারণে তথ্য না মিললেও, সইদুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্তত এমনটাই জানা গিয়েছে।
এই আর্থিক লেনদেনে দিল্লি, মুম্বই এবং গুজরাটের যোগ পেয়ে সেখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে ফাঁসিদেওয়া থানা। কারণ ইতিমধ্যেই, সইদুলদের এই চক্রটি দেশের ৩৪০টি আলাদা আলাদা প্রতারণার ঘটনায় জড়িত থাকার যোগ পেয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েকজন প্রতারিতের অনলাইনে অভিযোগ ভিডিও রেকির্ডং করেছে পুলিশ।
ফাঁসিদেওয়ার ওসি চিরঞ্জিত ঘোষ বলেন, ‘তদন্ত যেভাবে এগোচ্ছে তাতে আমরা আশাবাদী, চক্রে জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’ এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া সইদুল সহ চারজনের মধ্যে দুজন জামিন পেয়েছে। গত ৪ মার্চ ধৃত সইদুল এবং তার সহকারী তপন গোপকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে প্রচুর তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।