কানপুর: কানপুর টেস্ট ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচ বাংলাদেশ শিবিরের জন্য। গুরুত্বপূর্ণ যে দ্বৈরথের আগে টাইগার ক্রিকেটে বড় পালাবদল। সোনালি অধ্যায়ের যবনিকা পতনের ঘোষণা। টেস্ট এবং টি২০ ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়ে দিলেন দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।
সাংবাদিক সম্মেলনে এদিন কার্যত সাকিব বোমা ফাটান। জানান, আর নয়, নতুনদের সুযোগ দিতে এবার সরে দাঁড়াতে চান। তবে বিদায়ি টেস্ট কবে, কোথায় হবে তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা। দেশের মাটিতে মিরপুরে ফেয়ারওয়েল টেস্ট খেলতে চান সাকিব। কিন্তু দেশের অস্থির পরিস্থিতি, মাথার ওপর ঝুলতে থাকা খুনের অভিযোগের সাঁড়াশি চাপে সেই ইচ্ছে পূরণ হবে কি না, নিশ্চিত নন।
যদি না হয়, তাহলে আগামীকাল শুরু কানপুর টেস্টই হয়তো সাকিবের বিদায়ি টেস্ট হতে চলেছে। টেস্ট ও টি২০ অবসরের বিষয়টি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি, নির্বাচক কমিটির প্রধানকেও জানিয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পরই লাল বলের ফর্ম্যাটকে ‘আলবিদা’ জানাবেন।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে সাকিব বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে খেলার জন্য আমি প্রস্তুত। কিন্তু দেশে অনেক কিছু চলছে, যার ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশেষত, চলতি এই সিরিজ এবং আগামী হোম সিরিজ নিয়ে। ওটাই সম্ভবত আমার শেষ টেস্ট সিরিজ।’
সাকিব আরও বলেছেন, ‘ফারুকভাই (বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ) এবং নির্বাচকদের বলেছি, সুযোগ থাকলে মিরপুরে শেষ ম্যাচ খেলতে চাই। বোর্ডও সর্বতোভাবে চেষ্টা করছে, যাতে আমি নিরাপদে খেলতে পারি। পাশাপাশি দেশ থেকে বেরোনোর ক্ষেত্রেও যেন কোনও সমস্যা তৈরি না হয়।’
অবসর ঘোষণা করতে গিয়ে কিছুটা আবেগপ্রবণ সাকিব। জানান, নিজের সিদ্ধান্তে তিনি খুশি। এটাই সঠিক সময়। কেরিয়ার নিয়ে কোনও আক্ষেপ বা দুঃখ নেই। উপভোগ করেছেন প্রতিটি মুহূর্ত। নতুনদের সুযোগ দিতে টেস্টের পাশাপাশি টি২০ থেকেও সরে দাঁড়াচ্ছেন।চান নতুনরা খেলুক। ২০২৬ সালের টি২০ বিশ্বকাপের দল তৈরির কাজ শুরু করার এটাই সঠিক সময়, মঞ্চ। পরবর্তী ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি২০ সিরিজে খেলবেন না। অর্থাৎ, জুনের বিশ্বকাপেই শেষ টি২০ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।
নিশ্চয়তা যদি না পান কানপুরেই সাকিবের বর্ণময় টেস্ট কেরিয়ারে ইতি পড়বে। কানপুর টেস্টের পর দেশে না ফিরে ‘দ্বিতীয় ঘর’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়ে যাবেন। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা ফ্যাক্টরেই ঝুলে কার্যত সাকিবের বিদায়ি টেস্টের ভবিতব্য। পূর্বতন আওয়ামি সরকারের সাংসদ সাকিব আরও বলেছেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক আমি। দেশে ফিরতে কোনও অসুবিধা হওয়া উচিত নয়। তবে আমার চিন্তা নিরাপত্তা নিয়ে। আমার বন্ধুবান্ধব, পরিবারও চিন্তিত। আশা করি সমস্যা মিটবে এবং সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসবে।’
পদ্মাপারে অস্থির পরিস্থিতির মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ সফর নিয়েও অনিশ্চয়তা। শেষপর্যন্ত আইডেন মার্করামদের বাংলাদেশ সফর বাতিল হলে দেশের মাটিতে বিদায়ি টেস্টের ইচ্ছে অপূর্ণ থেকে যাবে সাকিবের। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পালাবদলের পর্বে সাকিবকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। দেশের জার্সিতে খেলা নিয়েও তৈরি হয়েছিল জটিলতা। প্রবল চাপ নিয়ে পাকিস্তান সিরিজে খেলতে নেমে সফলও হন।
কঠিন যে পরিস্থিতি সম্পর্কে সাকিব বলেছেন, ‘খুব কঠিন পরিস্থিতি। আল্লাহ জানে, কীভাবে খেলায় মনোনিবেশ করছি। আমি নিজেও জানি না। দেশে আমার বিরুদ্ধে কেস ঝুলছে। কী কেস সবাই জানে। আর আমি তখন কোথায় ছিলাম সেটাও সবাই জানে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ উল্লেখ্য, খুনের মামলায় ১৩৭ জনের তালিকায় নাম রয়েছে সাকিবের। যদিও তখন সাকিব কানাডায় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে ব্যস্ত ছিলেন।
এক ঝলকে সাকিব
টেস্ট
ব্যাটিং
ম্যাচ-৭০ রান-৪৬০০ সর্বাধিক-২১৭ গড়-৩৮.৩৩ ১০০-৫ ৫০-৩১
বোলিং
ম্যাচ—৭০ উইকেট-২৪২ সেরা-৩/৩৬ গড়-৩১.৮৫ ইনিংসে ৫-১৯ বার
টি২০
ব্যাটিং
ম্যাচ-১২৯ রান-২৫৫১ সর্বাধিক-৮৪ গড়-২৩.১৯ ৫০-১৩
বোলিং
ম্যাচ-১২৯ উইকেট-১৪৯ সেরা-৫/২০ গড়-২০৯১ ৫ উইকেট-২