শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

বিন্নাগুড়িতে এলে কচি পাঁঠার মাংস খাওয়ানোর আবদার করতেন সমরেশ

শেষ আপডেট:

নাগরাকাটা: বিন্নাগুড়িতে এলে কচি পাঁঠার মাংস খাওয়ানোর আবদার করতেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। এমনটাই জানিয়েছেন ডিবিআইটিএ-র সম্পাদক সঞ্জয় বাগচি। তাঁর থেকে বয়সে বড় হলেও দুজনের সম্পর্ক ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। জলপাইগুড়ির জেলা স্কুলে পড়তেন তাঁরা। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার জন্য সমরেশ কলকাতা চলে গেলেও যোগাযোগটা ঠিকই ছিল। গয়েরকাটা লাগোয়া বিন্নাগুড়িতে এলে তিনি সময় করে দেখা করে যেতেন সঞ্জয়ের সঙ্গে। বর্তমানে চা মালিকদের সংগঠন ডিবিআইটিএ-র সম্পাদক পদে রয়েছেন সঞ্জয়বাবু। সাহিত্যিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেই সমস্ত দিনের টুকরো টুকরো স্মৃতিই এখন উঁকি দিচ্ছে তাঁর মনে। তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে ওঁর (সমরেশ মজুমদার) একাধিকবার দেখা হয়েছে। এলেই ঘুরে ফিরে বাগান ও আরও নানা বিষয়ে কথা হত। চা বাগানকে ভাবতেন নিজের আত্মার আত্মীয়। এলেই আবদার করতেন কচি পাঁঠার মাংস খাওয়ানোর।’

এছাড়া ডুয়ার্সে এলে সুভাষিণী চা বাগানেও থাকতেন সমরেশ মজুমদার। অংশ নিতেন সাহিত্য আসরেও। সুভাষিণীর বর্তমান ম্যানেজার অনিন্দ্যবিহারী রায়ের সঙ্গে সাহিত্যিকের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। ‘কালবেলা’ স্রষ্টার প্রয়াণে তাই শোকস্তব্ধ অনিন্দ্যবাবুও। তিনি বলেন, ‘শেষ এসেছিলেন লক ডাউনের আগে। বাংলোর একটি ঘরই বরাদ্দ থাকত তাঁর জন্য। একবার তিনি বাংলাদেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিক আনিসুজ্জামানকেও এখানে নিয়ে এসেছিলেন। হাসপাতালে ভরতির আগের দিনও ওঁর ফোন এসেছিল।’

প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে সমরেশ মজুমদারের। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। ২৫ এপ্রিল শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। টানা দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। খুব একটা চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিলেন না বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। আগে থেকে তাঁর সিওপিডি-র সমস্যা ছিল।

১৯৪৪ সালের ১০ মার্চ উত্তরবঙ্গের গয়েরকাটায় জন্ম সমরেশের। এখানেই কেটেছে ছেলেবেলা। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে। তারপর ১৯৬০ সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন। মাস্টার্স করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কাজ করতেন সংবাদমাধ্যমে। সাহিত্যের পাশাপাশি গ্রুপ থিয়েটারের প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনকথা ঠাঁই পেয়েছে তাঁর লেখায়। তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাঁর ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাঁকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। অনিমেষ-মাধবীলতার মতো একাধিক বহু চর্চিত চরিত্র প্রাণ পেয়েছে তাঁর কলমে। সাহিত্য জগতে অবদানের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে। এছাড়াও বঙ্কিম পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারের মতো পুরস্কারও ছিল তাঁর ঝুলিতে।

উত্তরবঙ্গের এই ভূমিপুত্রের প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য মহলে। সাহিত্যিকের প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Web Desk
Web Deskhttps://uttarbangasambad.com/
Uttarbanga Sambad is leading online news publisher in West Bengal. Every single article post checked after verify and fact checking by our own staff.

Share post:

Popular

More like this
Related

Mainaguri | দাম তলানিতে, টমেটো যাচ্ছে গোরুর পেটে

অভিরূপ দে, ময়নাগুড়ি: গত কয়েকদিন ধরে ময়নাগুড়ির (Mainaguri) বিভিন্ন...

Jalpaiguri | পণ্যবোঝাই বাইকে বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা

অনীক চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: যাত্রীবাহী টোটোতে বোঝাই করা যাবে না...

Jalpaiguri | বেহাল দশা রাজবাড়ি সিংহদুয়ারের

অনসূয়া চৌধুরী, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শহরের কথা উঠলে প্রথমেই মনে...

Dhupguri | কবে হবে সেতু, প্রশ্ন দুই এলাকাবাসীর

শুভাশিস বসাক, ধূপগুড়ি: নামেই সেতু। অস্থায়ীভাবে তৈরি কাঠের নড়বড়ে...