সামসীঃ কন্যা সন্তানের বয়স মাত্র ৫ দিন। আর সেই সদ্যজাতকে সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির প্রসূতি। মেয়েকে কোলে নিয়েই ইতিমধ্যেই তিনি দিয়ে দিয়েছেন দুটি পরীক্ষা। শারীরিক প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এবছর আলিম দিচ্ছেন রতুয়া-১ ব্লকের বাটনা রামপুরের বাসিন্দা নাসিমা খাতুন। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি বাপের বাড়িতে এসেছেন। মেয়েকে কোলে নিয়েই বাড়িতে তিনি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রতুয়া-১ ব্লকের বাটনা জেএমও সিনিয়ার মাদ্রাসার ছাত্রী। তার পরীক্ষার সিট পড়েছিল চাঁন্দুয়া দামাইপুর হাই মাদ্রাসা। নাসিমার আবেদন অনুযায়ী চাঁন্দুয়া দামাইপুর হাই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তার জন্য সিক বেডের ব্যবস্থা করে। পরীক্ষার মাত্র দুদিন আগে ফুটফুটে কন্যা সন্তান প্রসবের পরও দমে যায়নি সে। প্রসবের যন্ত্রণা সহ্য করেই সিক বেডে ইতিমধ্যেই সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন পরীক্ষা দেয় নাসিমা। নাসিমা খাতুন জানায়, আগামী শনিবার ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা রয়েছে। কয়েক দিন ছুটি থাকায় কিছুটা সময় পাওয়া গেল। তিনি বলেন, ‘মেয়ের জন্মের পর পড়াশোনায় অনেক ব্যাঘাত ঘটছে ঠিকই, তবে সকাল সন্ধ্যায় সময় বের করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার স্বামী আমির হামজা আমাকে সর্বক্ষণ পড়াশুনার জন্য উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছেন।’ তার বক্তব্য, ‘শুধু আলিম পরীক্ষা নয়, সে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে চাই।’
নাসিমা খাতুনের বাবার বাড়ি রতুয়া-১ ব্লকের বাটনা রামপুরে। বাবা শিশ মহম্মদ পেশায় দিন মজুর। নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থা। তারা তিন ভাই ও তিন বোন। পরিবারের সবার ছোট নাসিমা। নাসিমার পরিবারের দাবি, অভাবের সংসার। মেয়ের জন্য ভালো পাত্রের খোঁজ আসায় সামাজিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রতুয়া-২ ব্লকের সম্বলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আমির হামজা নামের এক যুবকের সঙ্গে এক বছর আগে বিয়ে দেওয়া হয়। তার বাবার দাবি, ‘নাসিমাকে অনেকদূর অবধি পড়াশুনা করানোর ইচ্ছে ছিল কিন্তু পরে যদি বিয়ের জন্য ভালো ছেলে আর না জুটে সেজন্যই তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দিই।’
বাটনা জেএমও সিনিয়ার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার গোলাম রসুল জানান, ‘নাসিমা লেখা পড়ায় খুব ভালো ছিল। এবার আলিম দিচ্ছে। আলিম পাস করে ও পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফাজিল(HS সমতুল),কামিল(BA সমতুল), এমএম(MA সমতুল)অবধি পড়াশুনা করবে বলে জানিয়েছে নাসিমা।’
চাঁন্দুয়া দামাইপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা বেগম জানান, ‘নাসিমা খাতুনের আবেদন অনুযায়ী ওর জন্য সিক বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ও ভালোই পরীক্ষা দিচ্ছে।’