জটেশ্বর: মেয়ে ভালো করে কথা বলতে পারে না। বাড়ির কাছাকাছি জুনিয়ার হাইস্কুলে ভর্তি করালে তাই সুবিধা হবে। এমনটাই ভেবেছিলেন জটেশ্বর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা এক কিশোরীর বাবা-মা। আর বাড়ি থেকে মাত্র শ’পাঁচেক মিটার দূরে, সেই স্কুল চত্বরেই থাকা একটি প্রাথমিক স্কুলের শৌচাগারে টেনে নিয়ে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির সেই নাবালিকাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠল। অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতও নাবালক। আর সেও ওই স্কুলেরই পড়ুয়া। ঘটনাটি রবিবারের।
প্রাথমিকের ফালাকাটা উত্তর মণ্ডলের জটেশ্বর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি বেসরকারি বিএড কলেজ লাগোয়া রয়েছে একটি জুনিয়ার হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুল। একই মাঠে অবস্থিত দুটি স্কুলেরই পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সমস্যা রয়েছে নিরাপত্তা নিয়েও। সীমানা প্রাচীরের কোনও বালাই নেই। আশপাশে কোনও ঘরবাড়িও নেই। নির্জন জায়গা। তবে সেসবের সুযোগ নিয়ে এধরনের ঘটনা যে ঘটে যাবে, তা ভাবতেই পারেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বিএড কলেজ লাগোয়া ওই জুনিয়ার হাইস্কুলেরই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সেই নাবালিকা। পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সে বাড়ির সামনে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছিল। তখনই প্রতিবেশী সেই নাবালক তাকে জোর করে নিয়ে যায় প্রাথমিক স্কুল চত্বরে। সেই স্কুলের শৌচালয়ের মধ্যে ঢুকে মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পর তাকে সেখানে ছেড়ে অভিযুক্ত চলে যায়। কিশোরী বাড়ি ফিরে আসে। বাবা-মাকে সব কথা জানায়। ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়তেই জটেশ্বর-২ এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রবিবারই জটেশ্বর ফাঁড়ির পুলিশের দ্বারস্থ হয় নাবালিকার পরিবার। অভিযোগ পেয়ে সোমবার সকালে অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জটেশ্বর ফাঁড়ির ওসি জগৎজ্যোতি রায় বলেন, ‘এক বিশেষভাবে সক্ষম নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সোমবার অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি।’একজন বিশেষভাবে সক্ষম নাবালিকাকে স্কুল চত্বরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করার ঘটনায় স্কুলের নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। ওই স্কুল দুটি রাতবিরেতে দুষ্কৃতী ও সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানান, রাত বাড়লেই স্কুলের মাঠে চিৎকার চ্যাঁচামেচি ও হইহুল্লোড় চলে। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত মদ-জুয়ার আসরও চলে বলে অভিযোগ। ওই স্কুলের ভেতরে অষ্টমের পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠতেই স্কুলের পরিকাঠামোগত সমস্যা এবং সমাজবিরোধীদের আনাগোনার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রঞ্জিত রায় বলেন, ‘স্কুলের তালা ভেঙে মাঝে মাঝে সমাজবিরোধীরা ঢুকে পড়ে। শৌচাগারের দরজায় তালা ঝোলানো থাকলে ভেঙে ফেলে। তবে এধরনের ঘটনা একেবারেই অনভিপ্রেত।’
ঘটনার পর নির্যাতিতার পরিবার সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে নারাজ। এদিকে, আলিপুরদুয়ার সিডব্লিউসি’র চেয়ারম্যান অসীম বসু ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ আর ঘটনার নিন্দা করে আলিপুরদুয়ারের সমাজসেবী রাতুল বিশ্বাস বলেন, ‘জঘন্য ঘটনা। শিউড়ে উঠছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের দ্রুত ও কঠিন সাজার দাবি জানাই।’