মানিকচক: বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা আগেই ছিল। শুক্রবার গভীর রাতে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। মানিকচকের গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হুকুমতটোলা, কামালতিপুর ও ঈশ্বরটোলায় হুহু করে ঢুকে পড়ল গঙ্গার জল। তিন গ্রামের বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন। স্থানীয়দের দাবি, এতে তিনটি গ্রামের প্রায় ৯০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। জল জমে রয়েছে প্রাথমিক স্কুলের সামনেও। ফলে বন্ধ পঠনপাঠন। প্রশাসনের তরফে এলাকা পরিদর্শন করে তড়িঘড়ি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
শনিবার দক্ষিণ হুকুমতটোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এসসি প্রাথমিক স্কুলের চারদিকে জল জমে রয়েছে। স্কুল বন্ধ। নদীর জল অসংরক্ষিত এলাকা ছাপিয়ে পৌঁছেছে মূল বাঁধের ধারে। গৃহবধূ সিরাতুন বিবি জানালেন, ‘গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক স্কুল জলমগ্ন। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। প্রশাসনকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’
আরেক গ্রামবাসী মহম্মদ আইয়ুব আলির বক্তব্য, ‘গত এক মাস ধরে ভাঙন চলছে। এবার বন্যা শুরু হল। গতকাল রাতে জলমগ্ন হয়েছে এলাকা। তবে আমরা ভাঙন রোধের জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি। জানি না কবে এর সমাধান মিলবে।’
তবে মানিকচক(Manikchak) পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শেখ সাকিরউদ্দিন বলছেন, ‘স্কুলের পঠনপাঠন সচল রাখতে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। আগামী সোমবার থেকে গোপালপুর হাইস্কুলে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করছি।’
মানিকচকের বিডিও অনুপ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘গোপালপুরের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ওখানে শতাধিক পরিবার জলমগ্ন। আমরা বেশ কিছু জায়গায় ফ্লাড সেন্টার খুলেছি। গ্রামবাসীরা চাইলে সেখানে থাকতে পারেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
সবেমাত্র বর্ষা শুরু হয়েছে মালদা জেলায়। সাধারণত অগাস্ট থেকেই এই জেলায় বৃষ্টি নামে। চলবে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত। কোনও কোনও বছর বৃষ্টি অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে। গত তিন দশকের পরিসংখ্যান বলছে, অগাস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যেই মূলত এই জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এবার মানিকচকের গোপালপুর থেকে সেই পরিস্থিতি শুরু হল বলে মনে করছেন জেলাবাসী। তবে এখনও জেলার প্রধান তিন নদী গঙ্গা, ফুলহর ও মহানন্দার জলস্তর বিপদসীমার অনেক নীচে রয়েছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই তিন নদীরই জলস্তর বৃদ্ধির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ফুলেফেঁপে উঠবে অন্যান্য নদীগুলিও। তার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রশাসন।