কোচবিহার: সেপ্টেম্বরে রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষার জন্য চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি। প্রস্তুতিতে সবার আগে প্রয়োজন পাঠ্যবই। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সেই পাঠ্যবই কোচবিহারে একটি বইয়ের দোকানে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এই বইগুলি গত বছর পর্যন্ত রাজ্য সরকারের সরকারি সিলেবাসে ছিল। সম্প্রতি এই বইগুলি খানিকটা পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন বই এসেছে। তবে জেলার বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে এখনও পুরোনো বইগুলি রয়ে গিয়েছে।
মঙ্গলবার কোচবিহার শহরের সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস সংলগ্ন রূপনারায়ণ রোডের ধারে একটি বড় বইয়ের দোকানে বিক্রি হতে দেখা গেল সেই বই। আরও অন্য দোকানে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এই বইগুলির একেবারে প্রথমে মলাটের উপরে লেখা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। মলাটের পেছনে লেখা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আর্থিক আনুকূল্যে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। বিক্রয়যোগ্য নয়।
যেখানে বইয়ে পরিষ্কারভাবে লেখা রয়েছে এই বই ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য। তাহলে বইয়ের দোকানে কীভাবে এই বইগুলি বিক্রি হচ্ছে? বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা বা কাজকর্মে প্রশাসনকে তৎপর ভূমিকা নিতে দেখা গেলেও এক্ষেত্রে প্রশাসন কেন চোখ বুজে রয়েছে?
বিষয়টি নিয়ে কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সমরচন্দ্র মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সরকারি বই স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। এটা বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
কিছুদিন ধরেই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল যে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়ার সরকারি বই কোচবিহারে একটি বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার ক্রেতা সেজে সিপিএম পার্টি অফিস সংলগ্ন একটি বইয়ের দোকানে গিয়ে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সরকারি বই চাইলে দোকানদার কয়েকটি বই বের করে দেন। বইগুলির দাম জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান ১০০ টাকা। কিন্তু বইয়ে কোনও দাম লেখা নেই। লেখা রয়েছে এগুলি ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য। এই প্রশ্ন করতেই দোকান মালিক শ্যামল চন্দ বলেন, ‘বিনা পয়সায় বই নিতে চাইলে স্কুলে যান। এখান থেকে নিতে গেলে ১০০ টাকা দাম দিতে হবে। আমাদের কেউ বিনা পয়সায় এই বই দেয়নি।’
সরকারি বই আপনি কোথা থেকে কিনেছেন? শ্যামলের জবাব, ‘কলকাতার কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনে এনেছি। বেসরকারি স্কুলগুলিতেও এই বই পড়ানো হয়। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক ও চাকরির পরীক্ষার জন্য এই বই মানুষ কিনতে আসেন। সে জন্যই আমরা রেখেছি।’
সরকারি বই বিক্রি করেও ওই দোকান মালিক গলার জোরে এমন কথা বললেও শহরের সুনীতি রোডের ধারে জেলার বহু পুরোনো দুটি প্রতিষ্ঠিত বইয়ের দোকানে এই বই চাইলে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় এগুলো সরকারি বই। এখানে পাওয়া যাবে না। কোচবিহার ও কলকাতা থেকে সরকারি বইগুলি বিক্রির পেছনে বড়সড়ো চক্র জড়িত রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।