অভিষেক ঘোষ, মালবাজার: মালবাজার (Malbazar) মহকুমায় মোট ২২টি বাংলা সহায়তা কেন্দ্র আছে। অথচ প্রচারের অভাবে মালের গ্রামাঞ্চলে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র বা বিএসকে-র (BSK) পরিষেবা শিকেয় উঠেছে। অনেক গ্রাম পঞ্চায়েতে আবার সহায়তা কেন্দ্রের পরিকাঠামোই তৈরি হয়নি। ফলে অনলাইন কাজের জন্য ভরসা সেই সাইবার ক্যাফে। এই পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি মাল মহকুমার রিভিউ মিটিংয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল বাংলা সহায়তা কেন্দ্র। কাঠগড়ায় তুলেছিলেন খোদ জেলা প্রশাসনের কর্তারাই।
মালবাজার শহরে পুরসভায়, মহকুমা শাসকের দপ্তরে, সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরে বিএসকে আছে। তবে পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে একমাত্র ওদলাবাড়ির মানুষই এই পরিষেবা পাচ্ছেন। মাল ব্লকের বাগ্রাকোট, রাঙ্গামাটি, তেশিমলা, কুমলাই পঞ্চায়েতে সহায়তা কেন্দ্র তৈরিই হয়নি। বাগ্রাকোটের মানুষকে যে কোনও অনলাইন কাজ করতে ওদলাবাড়ি অথবা মালবাজারের বিএসকে-তে আসতে হয়। ফলে যাতায়াতের জন্য ৫০-১০০ টাকা বেশি খরচ হয়। কুমলাই পঞ্চায়েতের নেওড়া চা বাগান থেকে অনলাইনের যে কোনও কাজ করতে ১৫-২০ কিমি পথ পেরিয়ে মাল শহরে আসতে হয়। একই অবস্থা ক্লান্তির। নাগরাকাটা ব্লকে ৫টি বিএসকে সক্রিয় আছে। তবে আংরাভাসা-১, চম্পাগুড়ি পঞ্চায়েতে এখনও বিএসকে-র পরিষেবা পৌঁছায়নি। বিনামূল্যে এই পরিষেবা নিতে তাঁদের নাগরাকাটা ব্লক অফিসে আসতে হয়। মেটেলিতে বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭। যার মধ্যে শুধুমাত্র মেটেলি হাট গ্রাম পঞ্চায়েতে বিএসকে নেই।
ক্রান্তির মৌলানি পঞ্চায়েত কার্যালয়ে চলা বাংলা সহায়তা কেন্দ্রটি সবথেকে পুরোনো। এছাড়া ক্রান্তি পঞ্চায়েত, ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতি ও ক্রান্তি স্কুল পরিদর্শক কার্যালয়ে এই কেন্দ্রগুলি চলছে। লাটাগুড়ির প্রধান কৃষ্ণা রায় বর্মন জানান, ‘মাস দুয়েক আগে বাংলা সহায়তা কেন্দ্র তৈরির জন্য গ্রাম পঞ্চায়েতে পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই কেন্দ্রটি চালু হবে।’ ক্রান্তি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পঞ্চানন রায়ের বক্তব্য, ‘চালু থাকা সহায়তা কেন্দ্রগুলি থেকে সব রকম সুযোগসুবিধাই পাচ্ছেন উপভোক্তারা। আগামীদিনে ব্লকের বাকি পঞ্চায়েতগুলিতেও এই পরিষেবা চালু হবে।’
আবার অনেক বিএসকে-র বিরুদ্ধেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। অভিযোগ, বিএসকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটররা অনেকে ১২টার আগে অফিসে আসেন না। আবার ৩টে বাজতেই বাড়ি চলে যান কেউ কেউ। কিছু কিছু অপারেটরের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও উঠছে। মাস তিনেক আগে মেটেলির দুই বিএসকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরকে শোকজ করেছিল জেলা প্রশাসন। একইভাবে ক্রান্তি ব্লকের দুজনকেও শোকজ করা হয়। তবে তাঁদের বেতন বন্ধ করা হয়নি।
অবশ্য মাল মহকুমার বিএসকে কোঅর্ডিনেটর লেমন ইসলামের কথায়, ‘বাংলা সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে অনলাইনে কিছু বিল পেমেন্ট করলে ১% রিবেট পাওয়া যায়। কিন্তু এ বিষয়ে সচেতন নন অনেকেই। এসব পরিষেবা নিয়ে প্রচার বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
তবে মাল মহকুমার মহকুমা শাসক শুভম কুন্ডলের বক্তব্য, ‘যে সব পঞ্চায়েতে বিএসকে তৈরি হয়নি, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিওদের সব তথ্য সহকারে জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে হবে।’
এ বিষয়ে সিপিএমের মাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্তের বক্তব্য, ‘রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে প্রচার করছে না। যাতে প্রকল্পের গুরুত্ব কমে যাবে এবং ধীরে ধীরে এই প্রকল্প তুলে নেবে।’ বিজেপির মাল বিধানসভার আহ্বায়ক রাকেশ নন্দীর মতে, ‘রাজ্য সরকার নামেই নতুন নতুন জনমুখী প্রকল্প চালু করে। কিছুদিন পরই সেটা মুখ থুবড়ে পড়ে।’