সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫

স্বাধীনতার সপ্তসিন্ধু

শেষ আপডেট:

স্বাধীনতার বকুলতলা

সুবোধ সরকার

অতর্কিতে আসে না কোনও সোনালি দেবদূত

অন্ধকারে যখন বিদ্যুৎ

ঝলসে ওঠে দ্বিখণ্ডিত নদীর নীচে নদী

ঝলসে ওঠে দ্বিখণ্ডিত

যতীন দাস রোড

তোমাকে আমি একশোবার করেছি অবরোধ।

নাহলে আমি

পেতাম স্বাধীনতা?

না হলে আমি পেতাম কোনও নারীর ভালোবাসা

পেতাম কোনও উপত্যকা, জল?

একটা কথা আমাকে বলো

ঝিনুক ভরা যদি না থাকে প্রেম

কারও দু’চোখ করে কি ছলছল?

তুমি আমার যতীন দাস রোড

তোমাকে আমি একশোবার করেছি অবরোধ।

নাহলে আমি কথা বলার

পেতাম স্বাধীনতা?

বকুলতলা, বলেছি যত গোপন কথা ততো

আমি তোমার নাভির কাছে গলার কাছে

ঘাসের মতো ওতপ্রোত

বলো তো

তুমি

আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারো কিনা?

কোনও পাথর পারেনি আজও থামাতে ঝর্ণাকে

ভালোবেসেছি যাকে

তাকেই বলো, আমাকে চায় কিনা?

ভালোবাসাই বাজাতে পারে স্বাধীনতার বীণা।

বকুল ফুল, তোমাকে কথা দিলাম, শেষ কথা

তোমাকে ছাড়া হয় না স্বাধীনতা।

 

স্বাধীনতার জন্য গান  

অনিতা অগ্নিহোত্রী 

স্বাধীনতা তুমি বুকের ভিতর থাকো,

হৃৎশব্দের মতন আপনজন

কোনওদিন যদি আলো চলে যায় দেহ থেকে

থেমে যায় স্পন্দন

তুমি আঁকা থেকো ক্যাসিওপিয়ার

দীপ্র অট্টহাস

ক্ষমতার সাথে জ্বলা-নেভা খেলা

গেরিলার ইতিহাস

স্বাধীনতা তুমি আমার সকল ব্যর্থ আকিঞ্চন

দেহের অতীত প্রেমের স্লোগান-ধ্বনি

তুমি বিপ্লব ঝড়ের রাত্রে  খিল-ভাঙা দরজায়

বৃক্ষ-অশ্মে প্রাগৈতিহাসিক খনি

স্বাধীনতা আমি তোমাকে দিলাম দোয়াত-কলম-মন

সমর্পণের নিষ্কর পরগনা

সব হারিয়েছি ভিটেমাটি প্রেম বন্ধু আত্মজন

স্বাধীনতা আমি তোর  হাত ছাড়ব না।

 

যদি পুনরায় স্বাধীনতা চাই

রণজিৎ দেব

রাত্তির হয়েছে অনেক ক্ষয়ে গেছে চাঁদ

ধুঁকে ধুঁকে জ্বলা-কাঠ এখনও জ্বলছেই

সবাই নিশ্চুপ, ‘থামো, ওখানে যাবে না’-

মায়াপরবশে বারবার একথাটি বলছেই।

 

ঝোপের আড়ালে এখনও শেয়ালের হা-মুখ,

স্বভাবজ, নাকি ক্ষুধায়? আঁতকে ওঠে প্রবাহ সম্বল

ক্ষীণ স্রোত ফাঁদ পাতে লুপ্ত নদী ভিতরে দুর্বল-

আগুন আগলে রাখে ভালোবাসা এক -বুক!

 

অকস্মাৎ অন্ধকারে বিদ্রূপ জাগে অসহনীয় রোষে,

দল বেঁধে ওরা কারা উলঙ্গ অদ্ভুত

এপাড়া ওপাড়ায় ঘোরে যেন ছায়াভূত

স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীনতা পোড়ে আমাদের দোষে।

ভুলে সব ভুল, যদি পুনরায় স্বাধীনতা পাই

 

শৃঙ্খলের ছলে,

নিতান্ত সাবধানে পারিব রাখিতে কি

এই ভূমণ্ডলে?

স্বাধীনতা সাতশো সত্য জল পড়ে পাতা নড়ে অবিরত

বিজয় দে

আমি যেমন সকালে লিখি তুমি লেখো রাতে। কারোর কিন্তু মুখ দেখাদেখি নেই। একদিন

হোলো কি, তোমার ভেতর থেকে একটা রঙিন পতাকা আমার ভেতরে ঢুকে

হঠাৎ দাউদাউ  চোখের জল

কান্না লিখবে শুধু খবরের কাগজ

কথা বলো কথা আমার স্বাধীন অক্ষর

আমরা লিখব কচি কলাপাতা তোমার এক ফোঁটা স্বাধীনতা

কলাবাগানে ঢুকে যেদিন মনে পড়বে জমায়েতে আমাদের সমস্ত সাহস

সেদিনই একমাত্র স্বাধীনতা দিবস

আমি তোমার হাতে-লেখা একটা স্বাধীন চিঠি হয়ে

বেঁচে থাকতে চেয়েছি

চোখ বুজলে দেখব আমার ভেতরে কলাবাগানের সবুজ পতাকা

তোমার মুখ উড়ছে সকল সুখ উড়ছে

ভীষণ কষ্টের আগস্ট মাসে আমরা যেন কোন দেশে ছিলাম?

শুধু মনে পড়ে, একটা পাখির নাম পনেরো তারিখ

একটা কলাবাগানের নাম পনেরো তারিখ

সব উলুধ্বনির নাম পনেরো তারিখ

তারপর থেকে আমাদের আর মৃত্যুর নাম নেই


স্বাধীনতা তুই পাখি

যশোধরা রায়চৌধুরী

স্বাধীনতা তুই পাখির মতন একা

ডানাভাঙা আর কাতর। কে তোকে বুকে তুলে নেয়, দ্যাখা!

স্বাধীনতা তুই শাসনের আগে  মুখ খুলেছিলি নাকি?

বুক পেতেছিলি গুলির সামনে, তারপর থেকে খাঁচাছাড়া সেই  পাখি!

 

পাখি ও আমার পাখি!

প্রাক স্বাধীনতা কান্নার রঙে তোকে যে আমরা লিখি।

বুকের মধ্যে অনেক যত্নে রাখি।

 

স্বাধীনতা আজ ভয়ের মধ্যে বনে

উড়ে উড়ে যায়, আপাতত তার নীরব থাকাই বিধি

স্বাধীনতা আজ অন্যের কথা শোনে

‘স্বতঃস্ফূর্ত, আবেগী’ বলেছে তাকে গালি দিয়ে লোকে

স্বাধীনতাটিকে সামনে রেখে তো ধান্ধাবাজেরা ঢোকে

রক্তগন্ধ শোঁকে

টাকার পাহাড় গোনে

 

স্বাধীনতা তুই আমার বুকের নিধি

স্বাধীনতা আয়, প্রাক স্বাধীনের স্বপ্ন দিয়েই শিখি

স্বাধীনতা তোর স্বাধীন হবার পরের গল্প থাক!!!

নিয়মকানুনে ফের খাঁচা দিয়ে ঘিরে দিই তোকে

নিন্দার তিরে বিঁধি!

 

স্বাধীনতা

বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

স্বাধীনতা মানে শুধু ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়

স্বাধীনতা মানে, যেন কাউকেই পালাতে না হয়

কোথাও, কখনও আর,  ভিটেমাটি ছেড়ে

জননী আবারও ভাত বেড়ে

দিতে পারে, দুপুরে-রাত্তিরে

দম আটকানো ভিড়ে

নদীর বাতাস এসে বলে যায়, ‘নিরাপদ তুই’

মাথার বালিশে মাথা রেখে যেন দুশ্চিন্তা না হয়

ঘর, সত্যি ঘর নাকি বিজন-বিভুঁই

অন্ধকারে আত্মার ভিতরে যেন

জ্বলে থাকে আলো

মৃত্যুর মুহূর্তে যেন ভরসা থাকে

স্বাধীনতা আমাকে বাঁচাল

 

স্বাধীনতা দিবসে দু’চার কথা

সেবন্তী ঘোষ

বক্সা পাহাড়ের দিকে উঠছিল মেঘ,

বক্সা পাহাড় মানে প্রজাপতি বুনোলতা চড়াই উতরাই,

আর  ব্রিটিশের জেলখানা,

জেলখানা মানে কারাগার

যেখানে কংস মামা কৃষ্ণের সন্ধানে কন্যাদের আছড়ে ফেলছিল

আর তারা মায়া হয়ে, কন্যা ভ্রূণ হয়ে

পুরুষ শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার অঙ্গীকার নিয়ে

স্বর্গের দেবীর মতো বাধ্যত উড়ে যাচ্ছিল,

এত মায়া আমি কোথায় রাখি বলো?

যখন রবিবাবু  চিঠি পাঠালেন বক্সার বন্দিদের

ওই যারা ভারত স্বাধীন করেছিল একদা,

তারা আবার বক্সা ফোর্টে,

স্বাধীন দেশে ফের বন্দি হবে বলে

সেই একঘেয়ে পথে ফিরে গেছিল।

দেশ স্বাধীন হলেও প্রকৃত স্বাধীনতা থাকে না

এমনও কখনও!

স্বাধীনতা বড় মায়া!

আঁচল থেকে বুক পকেটের ভিতর-

তাকে আমি যত্নে রেখে বলি, বাঁচো,

তুমি আছো বলে এখনও

গল্পগুলি বেঁচে থাকে যেন

পতাকা উড়ছিল

রঙিন ফুল বেলুন চকোলেট আর

ভারত মাতার ছবি বিক্রি হচ্ছিল খুব

শুধু সেলুলার জেলে একটা ঘর জুড়ে

অনামা বিপ্লবীদের ছবি মালা পায়নি এদিনও,

প্রাদেশিকতার লজ্জায় তাদের নাম মুখেও আনি না ভুলে!

স্বাধীন দেশে উল্লাসকর এক জেল ফেরত পাগল ও অভিমানী

বারীন্দ্রকুমার এক সম্ভ্রান্ত, প্রৌঢ় সাংবাদিক

শহিদ শের আলি এখন অন্য দেশের ভাগে,

ইতিহাস এমনই এক রুবিক কিউব,

চাইলেই তুমি তাকে যে কোনও দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারো

Sabyasachi Bhattacharya
Sabyasachi Bhattacharyahttps://uttarbangasambad.com/
Sabbyasachi Bhattacharjee Reporter based in Darjeeling district of West bengal. He Worked in Various media houses for the last 23 years, presently working in Uttarbanga Sambad as Sr Sub Editor.

Share post:

Popular

More like this
Related

সরকারি চাকরি মানেই শান্তির জীবন নয়

মানসী কবিরাজ অ্যালবামের পাতা ওলটালেই দেখা যাবে  আমাদের প্রায় ...

কবিতা

১ অ-কৃতজ্ঞ সোমা দে সভ্যতার ভেতরে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বর্বরতা শরীর থেকে...

সোনার সংসার, যুদ্ধের সংসার

অরিন্দম ঘোষ বাংলায় ‘সোনার-সংসার’ বলে একটা শব্দবন্ধ আছে। এই...

গুজরাট যখন বাংলাকে মনে করায়

দেবদূত ঘোষঠাকুর  সম্প্রতি গুজরাটের পশ্চিম উপকূল ধরে ঘুরে একটা...