সানি সরকার, শিলিগুড়ি : কেন্দ্র অর্থবরাদ্দ করেছে ঠিকই। কিন্তু সেবকের এলিভেটেড করিডরে এখনও ছাড়পত্র দেয়নি বন ও পরিবেশমন্ত্রক। বন এবং বন্যপ্রাণের স্বার্থরক্ষায় এলিভেটেড করিডরের পক্ষে সায় দিলেও অনুমতি দেয়নি রাজ্যের বন দপ্তরও। ফলে সেবক সেনাছাউনি থেকে সেবক বাজার পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার ভবিষ্যৎ অনুমতির ফাঁসে আটকে। তবে সড়ক পরিবহণমন্ত্রক অর্থবরাদ্দ করতেই নতুন করে বনাঞ্চল ধ্বংসের উদ্বেগ শুরু হয়ে গিয়েছে। উন্নয়নে বৃক্ষচ্ছেদনে সায় থাকলেও কেন পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলি।
শিলিগুড়ির বালাসন সেতু থেকে সেবক সেনাছাউনি পর্যন্ত যে এলিভেটেড হাইওয়ের কাজ চলছে, তা সেবক বাজার পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অর্থবরাদ্দ করেছে নীতিন গড়করির মন্ত্রক। ১৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১,৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ফের হাজার হাজার গাছে কোপ পড়বে, যা নিয়ে আশঙ্কিত পরিবেশপ্রেমীরা। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের কোঅর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলছেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ে এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ন্যাশনাল হাইওয়ে তৈরির ক্ষেত্রে ৪০ হাজার বড় গাছ কাটা পড়েছে সাম্প্রতিককালে। সেবকেও প্রচুর গাছ কাটা পড়বে। পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের জঁাতাকলে।’
প্রথমে এলিভেটেড হাইওয়ে তৈরির ক্ষেত্রে সায় ছিল সড়ক পরিবহণমন্ত্রকের। কিন্তু মহানন্দা অভয়ারণ্য এবং বৈকুণ্ঠপুর বনাঞ্চল বাঁচাতে এলিভেটেড করিডরের পক্ষে মত দেয় বন দপ্তর। কেন না, এই ক্ষেত্রে রাস্তাটি হবে কার্যত উড়ালপুল এবং তা তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমান রাস্তার মাঝে পিলার বসবে। এই ক্ষেত্রে কম গাছ কাটা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি নীচ দিয়ে প্রয়োজনমতো বন্যপ্রাণী চলাচল করতে পারবে। কিন্তু সেবকে এলিভেটেড করিডরটি তৈরির ক্ষেত্রেও যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিতে এগোতে হবে, সেই রাস্তায় পা না দিয়েই অর্থবরাদ্দ করা হয়েছে।
কী কী কাজ বাকি? করিডর কীভাবে হবে, কত গাছ কাটা পড়তে পারে, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে যৌথ সমীক্ষা করার কথা বন দপ্তর এবং সড়ক পরিবহণমন্ত্রকের। কিন্তু তা হয়নি। সমীক্ষা না হওয়ায় গাছ কাটা পড়া সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের অঙ্ক কষতে পারছে না বন দপ্তর। ফলে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত টাকা দাবি করতে পারছে না সড়ক পরিবহণমন্ত্রক থেকে। ক্ষতিপূরণের টাকা জমা পড়লে বন দপ্তর অনুমতি চাইবে বন ও পরিবেশমন্ত্রক থেকে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া গেলে অনুমতি দেবে রাজ্য। বন দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘অনুমতির ক্ষেত্রে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেবক এলিভেটেড করিডরের ক্ষেত্রে সেই প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।’ অর্থাৎ তিন বছরের মধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ করার ব্যাপারে সাংসদ রাজু বিস্ট আশ্বাস দিলেও, সময়কাল নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও সাংসদের দাবি, ‘কোনও সমস্যা নেই। সমস্যা দেখাও দেবে না। সঠিক সময়ে অনুমতি পাওয়া যাবে।’
এরই মাঝে নতুন করে বৃক্ষচ্ছেদনের আশঙ্কায় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি। নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার সোসাইটির কোঅর্ডিনেটর নফসর আলির বক্তব্য, ‘যেভাবে জনসংখ্যা এবং যান বাড়ছে, তাতে রাস্তার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কেন বনাঞ্চলের ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানো হবে না?’