শিলিগুড়ি: রেড লাইট এলাকাকেও হার মানাবে মাটিগাড়ার একটি শপিং মল। মলের বেসমেন্ট যেন অন্ধকার জগতের আঁতুড়। যেখানে স্পায়ের আড়ালে চলছে দেহব্যবসা। এ যেন থাইল্যান্ডের পাটায়া শহরের দ্বিতীয় সংস্করণ। ভূগর্ভস্থ পার্কিং জোন থেকে প্রবেশপথ চলে গিয়েছে সোজা। এসকালেটারে না উঠে, সিঁড়ি বেয়ে নামলেই নাক বরাবর দুটি গলি। সামনের দিকে কিছু খাবারের দোকান। গলিপথটা খানিক নিঝুম। সেই নিঝুম গলিতেই যত ‘অন্ধকারের হাতছানি’।
গলিপথে প্রতিটি কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মহিলারা। একটু এগোতেই এক এক করে সকলেই নিজেদের বডি স্পা কাউন্টারের দরজা খুলে সামনে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। প্রতিটা ঘর থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে নিয়ন আলো। আর সকলের মুখে একটাই কথা, ‘আইয়ে না’। কেউ হিন্দিতে, কেউ নেপালি ভাষায় যেন নিশির ডাক ডাকছেন। যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আমাদের এখানে ভালো ব্যবহার পাবেন। ভেতরে আসুন।’ যাঁরাই এড়িয়ে চলে যাচ্ছেন ওই মহিলারা কার্যত তাঁদের পেছনে হাঁটা দিচ্ছেন। হাত ধরে টেনে ধরাটাই শুধু বাকি থাকছে। যত এগোনো যাচ্ছে, একই ছবি। কাউন্টারের সামনে ও ভেতর দেখা গেল, কয়েকজন ব্যক্তি মহিলাদের সঙ্গে কথা বলছেন। কাছে যেতেই বোঝা গেল, দরদাম চলছে তাদের মধ্যে। মহিলারা জানাচ্ছেন, ভেতরে গোপন ঘর রয়েছে। সেই ঘরে যেতে হলে গুনতে হবে বাড়তি টাকা। প্রতিটি কাউন্টারে থরেথরে দুধসাদা টাওয়েল আর প্রসাধনী সামগ্রী রাখা। কাউন্টারের দরজা খুলতেই ফুলের সুবাস ভরিয়ে দিচ্ছে।
প্রতিটি স্পা-এর সামনে নানা ধরনের বডি স্পায়ের দামের তালিকা লেখা রয়েছে। তবে সেই তালিকা কেবলই লোকদেখানো। আসল দামাদামি তো খদ্দেরদের সঙ্গে মুখে মুখে হচ্ছে। মলের বেসমেন্টের এক খাবারের দোকানের কর্মী সবিতা ছেত্রীর কথায়, ‘যাঁরা স্পা করাতে যান, তাঁদের সিংহভাগই শিলিগুড়ির বাইরে থেকে আসেন। বিশেষ করে বিহারের মানুষের এখানে আনাগোনা। শনি ও রবিবার সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। অনেক রাত পর্যন্ত মলে দেহব্যবসা চলে। বডি স্পা শুধু নামেই লেখা।’
শিলিগুড়ির সেবক রোডে আগে বিভিন্ন মলে দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু সেবক রোডের মলগুলিকে পেছনে ফেলে এখন দেহব্যবসায় রমরমা মাটিগাড়ার মলটিতে। অভিযোগ, স্পায়ের সঙ্গে যোগ রয়েছে মলের কয়েকটি পাবের। রাতে পাব থেকে বেরিয়ে অনেকে সোজা স্পা-তে চলে যাচ্ছে। এর আগেও একাধিকবার অভিযান চলেছে এখানকার স্পাগুলিতে। গ্রেপ্তারও হয়েছে বেশ কয়েকজন। কিন্তু তারপরও রমরমিয়ে চলছে ব্যবসা।
মলটিতে শপিং করতে আসা শিলিগুড়ির বাসিন্দা সঞ্চিতা সরকার, বিক্রম সরকারদের কথায়, ‘শহর যেন অবৈধ কারবারে ভরে গিয়েছে। এ জিনিস বন্ধ হওয়া দরকার।’ শহরের মধ্যে স্পায়ের আড়ালে এভাবে দেহব্যবসা চললেও কেন পুলিশ প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না? পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘অভিযোগ এলে সেক্ষেত্রে পদক্ষেপ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিতভাবে দেখা হবে।’ মলটির সিনিয়ার ম্যানেজার মহেশ গুরুংয়ের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।