নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতা নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরের অবস্থান তাঁকে বিজেপি সরকারের ‘প্রধান মুখপাত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে- এমন মন্তব্য করছেন সমালোচকরা।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, পহলগামে হামলার পরে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর প্রতিক্রিয়ায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সময় নাকি আমেরিকা মধ্যস্থতার ভূমিকা নিয়েছিল। এই অভিযানে ভারত পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটির ওপর হামলা চালায়।
করণ থাপারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে থারুর স্পষ্টভাবে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবিকে নাকচ করে বলেন, ‘মধ্যস্থতা বলত যদি ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর আমেরিকানদের ফোন করে বলতেন- এই বিষয়ে আমাদের সহায়তা করুন, ওদের কাছে এই বার্তাগুলি পৌঁছে দিন।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ভারত এমনটা করেনি। যদি করেও থাকে, আমি বিস্মিত হব।’
সাক্ষাৎকারে করণ থাপার তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি তো বিরোধী দলের নেতা, আপনি নিশ্চিত হলেন কীভাবে?’ উত্তরে থারুর বলেন, ‘আমি এটা বলছি আমার বহু বছরের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে আর ভারতীয় বিদেশনীতি যেভাবে চলে তা জানার ভিত্তিতে। জয়শংকর একজন প্রাক্তন পেশাদার কূটনীতিক এবং তাঁর কাজের ধরন থেকেই আমি একথা বলছি। আমার মতামত একটি ‘সুশিক্ষিত অনুমান’, গোপন কোনও তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নয়।’
কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, সংঘর্ষ বিরতির সিদ্ধান্ত ভারত-পাকিস্তানের দুই দেশের সামরিক অপারেশন ডিরেক্টর জেনারেলদের মধ্যে যোগাযোগের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ডিজিএমও-ই প্রথম ভারতের দিকে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব পাঠান- এমনটাই জানিয়েছে ভারত।
এক্স-এ পোস্ট করে থারুর ব্যাখ্যা করেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের পক্ষে একাধিক দিক থেকে ‘হতাশাজনক’। তিনি বলেন, এই মন্তব্য ‘কাশ্মীর ইস্যুকে আন্তর্জাতিকীকরণ’ করেছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ফের ভারত-পাকিস্তানকে একই সূত্রে ফেলেছে।
সাক্ষাৎকারে থারুর বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ছিল অত্যন্ত ক্যালিব্রেটেড ও দায়িত্বশীল। ভারত প্রথম থেকেই জানিয়ে দেয়, এটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ নয়, বরং সুনির্দিষ্ট জবাব। ‘আমরা জানিয়ে দিয়েছিলাম, পাকিস্তান প্রতিক্রিয়া দিলে আমরা জবাব দেব, না দিলে আর কিছু করব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘৭ মে-র প্রথম দিনেই আমরা অত্যন্ত নির্দিষ্টভাবে পাকিস্তানকে বার্তা দিয়েছি-ভারত আর পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাস সহ্য করবে না। নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হেনে এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করে আমরা এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি।’
থারুর ২০১৬-র সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, ২০১৯-এর বালাকোট স্ট্রাইক এবং এবার অপারেশন সিঁদুরের কথা তুলে ধরে বলেন, এটি সম্ভবত গত এক দশকে পাকিস্তান নীতি নিয়ে মোদি সরকারের ধারাবাহিক অবস্থানেরই প্রমাণ।
কংগ্রেসের আর এক নেতা পবন খেরা বলেন, ‘প্রথমে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মুখে আমরা সংঘর্ষ বিরতির কথা শুনলাম, এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদির ভাষণ এল। এটা প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে অস্বস্তিকর। ট্রাম্প যদি বলেন, বাণিজ্যিক চাপের কারণেই ভারত যুদ্ধ থামিয়েছে, তাহলে সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও লজ্জার বিষয়।’ থারুরের বক্তব্য একদিকে যখন বিজেপির বিদেশনীতি ও সামরিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশংসাসূচক, অন্যদিকে সেটিই তাঁর নিজের দলের মধ্যে প্রশ্ন ও অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে।