শিবশংকর সূত্রধর, কোচবিহার: কথিত রয়েছে, মহারাজাদের আমলে বড়োদেবীর পুজোয় নরবলি দেওয়া হত। পরবর্তীতে সেই প্রথা বিলুপ্ত হলেও অষ্টমী তিথিতে বড়োদেবীকে মানুষের রক্ত উৎসর্গ করা হয় আজও। এতদিন রাজ আমলের সেই রীতিকে ধরে রেখেছিলেন কালজানির বাসিন্দা শিবেন্দ্রনাথ রায়। নিজের আঙুল চিরে তিনি বড়োদেবীকে রক্ত উৎসর্গ করতেন বছরের পর বছর। আর তা হবে না। শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন তিনি।
প্রায় তিন দশক ধরে বড়োদেবীর পুজোর সেই প্রথাকে ধরে রেখেছিলেন শিবেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে, এরপর পুজোয় কে রক্ত উৎসর্গ করবেন, আপাতত সেই চিন্তায় দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড। বোর্ডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, শিবেনবাবু অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বংশে কারা রক্ত উৎসর্গ করতে ইচ্ছুক সেব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে। সেই হিসেবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।
কোচবিহার-২ ব্লকের খাপাইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের কালজানি এলাকায় থাকতেন শিবেনবাবু। দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের অধীনে থাকা কোচবিহার-২ ব্লকের বাণেশ্বর কালী মন্দিরে দেউরি হিসেবে (পুরোহিতের সহযোগী) কাজ করতেন তিনি। সারাবছর সেখানে কাজ করলেও বড়োদেবীর পুজো এলেই গুরুদায়িত্ব থাকত তাঁর উপরেই। বরাবরই তিনি বলতেন, বড়োদেবীকে রক্ত উৎসর্গ করে তিনি নাকি তৃপ্তি পান। যতদিন বাঁচবেন, নিয়মিত সেই দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন তিনি। হলও তাই। গতবারের পুজোতেও বড়োদেবীকে নিজের আঙুল চিরে রক্ত দিয়েছেন তিনি।
ষাটোর্ধ্ব শিবেনবাবু কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর কোচবিহার শহরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। সেদিনই তাঁকে ফের বাড়িতে নেওয়া হয়। বাড়িতেই তিনি প্রয়াত হন বলে দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড সূত্রে জানানো হয়েছে।
বোর্ডের প্রবীণ কর্মীরা জানিয়েছেন, বংশপরম্পরায় শিবেনবাবুরা বড়োদেবীকে রক্ত উৎসর্গ করেছেন। আগে তাঁর বাবা, ঠাকুরদা এই কাজ করতেন। তবে পরবর্তীতে এই গুরুদায়িত্ব কে পাবেন এখন তা নিয়েই চর্চা চলছে।
কোচবিহার বিষয়ক গবেষকরা জানিয়েছেন, বড়োদেবীর পুজো পাঁচশো বছরের প্রাচীন। সাধারণ দুর্গাপুজোর থেকে এই পুজো অনেকটা আলাদা। বড়োদেবীর মূর্তিতেও অনেক বদল রয়েছে। সাধারণ দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ থাকেন। তবে কোচবিহারে বড়োদেবীর সঙ্গে তাঁদের দেখা যায় না। তার বদলে থাকেন জয়া ও বিজয়া। পুজোর নিয়মকানুনেও অনেক বদল দেখা যায়। কথিত রয়েছে, মহারাজা বিশ্বসিংহ ছোটবেলায় ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে বনে খেলার ছলে একটি ময়নাকাঠকে দেবীরূপে পুজো করেছিলেন। সেখানে কুশ দিয়ে তৈরি একটি খড়গ দিয়ে এক বন্ধুকে বলি দিলে তার গলা কেটে যায়। সেই মুণ্ডু দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। ক্লান্ত হয়ে বনেই যখন ছোট্ট বিশ্বসিংহ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তখন দেবীর স্বপ্নাদেশ পান তিনি। তখন থেকেই বড়োদেবীর পুজোর সূচনা। সেই সময় নরবলি দিয়ে পুজো হত বলে কথিত রয়েছে।
বড়োদেবীর পুজোর সঙ্গে এখানকার মানুষের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সেই আবেগেরই একটি অংশ ছিলেন শিবেন। কোচবিহারের বাসিন্দা, পেশায় আইনজীবী রঞ্জিত ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘আমাদের কাছে রাজ আমলের পুজো বা ধর্মীয় রীতিগুলির বিশেষ এক মর্যাদা রয়েছে। এই নিয়নকানুনগুলি ধরে রাখতে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের আমরা সম্মান করি। শিবেন্দ্রনাথ রায় তেমনই একজন মানুষ ছিলেন।’
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ঘরের মাঠে জয় দিয়ে আইপিএলের গ্রুপ লিগের যাত্রা শেষ করল দিল্লি…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ মঙ্গলবার বারাণসীর বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আর…
উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পিএসজি ছেড়ে এবার কিলিয়ান এমবাপে পাড়ি দিচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদে। গত সাত…
দার্জিলিং: দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) পথে মৃত্যু হল এক বাংলাদেশি পর্যটকের (Bangladeshi tourist dead)। মৃতের নাম শেখ…
গাজোলঃ জল জীবন মিশন প্রকল্পের পাইপ চুরি করতে এসে হাতেনাতে পাকড়াও হল সাত দুষ্কৃতী। দুষ্কৃতী…
চোপড়া: সম্প্রতি জল জীবন মিশন প্রকল্পের অন্তর্গত একটি পাইপ খনন করা হয়। পাইপ পাতার সেই…
This website uses cookies.