- ছন্দা বিশ্বাস
বদরতলা কোর্ট চত্বরে আজ মাছি থিকথিকে ভিড়। বিচারক সরিৎশেখর ব্যানার্জীর এজলাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রমজান, আজান, রফিকুল, বসিরেরা মিলে অন্তত পঁচিশ-ছাব্বিশ জন মউলি। নীচে আরও ত্রিশ-চল্লিশজন অপেক্ষা করছে। ভোরবেলা রওনা দিয়েছে। কত নদী গাঙ হাওড়- বাওড় পেরিয়ে প্রথমে হিঙ্গলগঞ্জ, সেখান থেকে বাস ধরে তবে বদরতলা আদালতে আসতে হয়েছে।
গফুরচাচার শুনানি আছে। আজই বিচারক রায় দেবেন। সকলেই উন্মুখ হয়ে আছে এই রায় শোনার জন্যে। বিচারে গফুরচাচার কী সাজা হবে সকলের ভিতরে দারুণ উদ্বেগ। নিজেদের ভিতরে জোর জল্পনাকল্পনা চলছে।
বড্ড ভালো মানুষ এই গফুরচাচা। বিশ-পঁচিশ বছর ধরে তাদের দলটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। পেশায় তারা মউলি। সুন্দরবনকে বলে ‘বাদাবন’। সেই বাদাবনে মধু সংগ্রহ করতে যায় গফুরচাচার সঙ্গে। গফুরচাচা হল দলের মাথা। দিব্যি শান্ত মাথার মানুষটা সেদিন কেন যে অমন খেপে গেল কে জানে। গফুরচাচার এই জাতীয় আচরণ তারা বিশ্বাস করতে পারছে না।
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে অপরাধী।
নাম : গফুর আলি
বয়স : পঞ্চাশ
ঠিকানা : কালীতলা গ্রাম, কুলতলি ব্লক, হিঙ্গলগঞ্জ থানা
পেশা : মউলি।
নদীর ধারে গফুরের ঘর। নদী পেরোলোই সুন্দরবন। খুব ছোট বয়েস থেকে গফুর সুন্দরবন থেকে মধু, মোম সংগ্রহ করে। অসময়ে নদী থেকে মাছ, কাঁকড়া ধরে। এই বন গফুরের হাতের তালুর মতো চেনা। জঙ্গলের কোন অংশে সবচেয়ে বেশি মৌমাছিরা চাক বাঁধে, কোথায় সুন্দরী-গরান গেঁওয়া-খলসে গাছ বেশি জন্মায়, কোন নদীতে কী কী মাছ পাওয়া যায় তার মতো আর কেউ জানে না। জঙ্গলের কোন দিকে লুকিয়ে থাকে হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কোন অঞ্চলে বাঘের থেকেও ভয়ংকর জলদস্যুদের আস্তানা -সব তার নখদর্পণে। গাছের পাতার আওয়াজ শুনলে বুঝতে পারে গফুর ‘সে’ অর্থাৎ ‘দক্ষিণরায়’ আসছে। জঙ্গলের ভিতরে শিসের ধ্বনি কানে এলে গফুরের চোখ বিস্ফারিত হয় জলদস্যুদের কথা ভেবে। এই শিস ওর চেনা!
সঙ্গে সঙ্গে দলের সকলকে সতর্ক করে দেয়। কত দিন কত বিপদ থেকে গফুর দলের ছেলেদের বাঁচিয়ে এনেছে। বাঘ, জলদস্যু কিংবা ভয়ংকর শঙ্খচূড়ের ছোবল থেকে।
গফুরচাচা তাই সকলের বল, ভরসার স্থল।
বনে প্রবেশ করে গফুর থাকে সকলের সামনে। তার সঙ্গে থাকে সেই ব্যক্তি জঙ্গলের লতাপাতা, কাঁটা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। গফুরের চোখ থাকে উপরের দিকে। সে খুঁজে বেড়ায় মধুর চাক। পিছনের একজন থাকে ‘কারু’ হাতে। হেঁতাল গাছের লাঠির আগায় কাঁচা গোলপাতা বেঁধে বানাতে হয় এই কারু। চাক দেখলে কারুতে আগুন দেয়। সঙ্গে থাকে ধুনো। ধোঁয়ায় মৌমাছি উড়ে পালায়। ধুনোর গন্ধ পেলে বাঘ চুপি চুপি হানা দেয়। বুঝতে পারে মানুষ ঢুকেছে বনে। গফুর তাই চারিদিকে কড়া নজর রাখে। চাক কাটার সময়ে গফুর নির্দেশ দেয় কীভাবে চাকের পিছনের অংশের বেশ কিছুটা রেখে সামনের অংশ কাটতে হবে। যাতে পরেরবার সেই চাক পুনর্গঠন করতে পারে মৌমাছিরা।
বন দপ্তরের সকলেই গফুরচাচাকে চেনে, জানে। খুব খাতির করে সকলে, রেঞ্জারসাহেব পর্যন্ত গফুর আলিকে ‘চাচা’ সম্বোধন করেন। এটাই গফুরের গর্ব।
সেদিন হাওড়া থেকে বলাই, নিমু, বিন্দু, অর্থিতরা গিয়েছিল সুন্দরবন ভ্রমণে। একটা নৌকা ভাড়া করেছিল ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মধু সংগ্রহের সময়। বাকি সময়টা মউলিরা মাছ ধরে নয়তো অন্যান্য কাজ করে। পেটের টান বলে কথা। নোনা মাটিতে ভালো ফসল জন্মে না। জীবিকার জন্যে তাই হরেক রকমের কাজের সন্ধান করতে হয়। কেউ ট্যুরিস্টদের নৌকায় করে নদী জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখায়।
জলে কুমির, জঙ্গলে বাঘের ভয়। তার থেকেও বড় ভয় মহাজনদের দেনা। ঋণ শোধ হয় না কিছুতেই। তার উপরে জলদস্যুরা জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করত কিছুদিন আগে পর্যন্ত।
গফুরচাচা নৌকায় সেদিন চারজন উৎসাহী পর্যটককে নদী-জঙ্গল ঘুরিয়ে দেখাবেন ঠিক হয়।
বলাই, নিমু, বিন্দু, অর্থিতরা চার বন্ধু বন দপ্তরের অফিস থেকে পাস নিয়েই গফুরের সঙ্গে এগিয়ে গেল।
নিমু দুই হাজার টাকায় গফুরকে রাজি করাল। আজ সারাটা দিন গফুর নদী-জঙ্গল-খাঁড়ি ইত্যাদি ঘুরিয়ে দেখাবে।
নৌকায় পা দিতেই জোর ধমক খেল নিমু।
গফুর শুরুতেই সকলকে দেখিয়ে বলল এই, এই দিক থেকে ওঠো বাপুরা।
নিমু সেদিকে কান না দিয়ে অন্য জায়গা দিয়ে উঠতে গিয়েই ধমকটা খেল।
একজন অশিক্ষিত গরিব মাঝির কাছে ধমকটা ঠিক হজম করতে পারছিল না। আবার কিছু বলতেও পারছে না। নৌকা ভাড়া করা হয়ে গেছে।
ধমক খেয়ে সেও পালটা কিছু কথা বলল। বিন্দু ওকে থামাল, ‘এই থাম না, যা বলছে শোন।’
গজ গজ করতে করতে নিমু নৌকোর একপ্রান্তে গিয়ে বসল।
শান্ত নদীবক্ষে ভেসে চলেছে নৌকা। দুইধারে সুন্দরী-গরানের জঙ্গল। গফুর দাঁড় টানছে আর গল্প করছে। বলাই গফুরের মুখ থেকে জেনে নিচ্ছে কোনটা সুন্দরী, কোনটা গেঁওয়া, পশুর আর হরিণআড়ু গাছ। নীচে বেশ কতকগুলো চিতল হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। গেঁওয়া, পশুর আর হেন্তাল গাছের পাতা খাচ্ছে। শীতের শুরু তাই বনতল বেশ ফাঁকা। হরিণগুলোর ভীতসন্ত্রস্ত চাহনি। নদীর দুই পাশে ঘন বন, অন্ধকারাচ্ছন্ন। সেই অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে নিমুর মনের ভিতরে অন্য এক আঁধার জমাট বাঁধছে।
গদাই ফোটো তোলায় ব্যস্ত। সামনেই নদীটা বাঁক নিয়েছে। গফুরের ভাষায়, ‘হুলো’। কিছুটা চলার পরে অন্য একটা নদীতে গিয়ে পড়ল। এদিকের বন আরও ঘন। জমাটবদ্ধ অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। গফুরচাচা দাঁড়টা সজোরে টেনে বলেন, বাবারা এট্টু সাবধানে থাকপেন। জায়গাটা বিশেষ সুবিধের না।
সকলে দেখল এদিকের বনের চেহারা আলাদা। শীতের শুরু, প্রচুর পাখি আসতে শুরু করেছে। হর্নবিল, খোন্তা বক, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, ধনেশ পাখিরা গাছের ডালে বসে আছে। গদাই ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা একটা গ্রিনবিল্ড মালকোয়া পাখিকে ফ্রেমবন্দি করল। গফুর দেখাল কোনটা বামুনি মাছরাঙা, কালো টুপি মাছরাঙা, সাদা ঘাড় মাছরাঙা এবং লাল মাছরাঙা। আর দেখাল সিন্দুরে মৌটুসিকে। চলতে চলতে কত মাছের নাম শোনাল। নামানুসারে জায়গার নাম হয়েছে দাঁতনে খালি, পারশে খালি ইত্যাদি। শোনাল এক ধরনের উড়ন্ত মাছের কথা। বাঙ্গশ মাছ শীতকালে বাদা থেকে উড়ে গিয়ে চাষিদের গোলা থেকে ধান খেয়ে আবার উড়ে চলে আসে।
গদাই-বলাই-বিন্দুরা হাঁ হয়ে গেছে গফুরচাচার গল্প শুনে।
পাঙ্গাশ মাছের আকার দেখে গফুর বুঝতে পারে বনে মধুর চাক কেমন হয়েছে।
বলাই বলল, ‘কীরকম?’
গফুরের মাথায় বটের ঝুরির মতো চুল, ঝুলকালো দাড়ি, উলুখাগড়া গোঁফের ভিতরে পান-দোক্তায় রাঙানো দাঁত বের করে হেসে বলে, ‘কেওড়া আর বাইন গাছের ফল নদীতে ঝরি পড়লি পরে সেই ফল খাতি আসে পাঙ্গাশ মাছ। সেই ফল খেয়ে তারা বেশ নাদুসনুদুস হয়। তহন বুঝতি পারি ফল যখন হয়ছে তখন ধরে নিতি হবে অনেক ফুল ফুটিছে এবং পরাগায়ন ভালোই হয়ছে।’
গদাই ছবি তোলা বন্ধ রেখে বলল, ‘চাচা, তুমি তো ভারী জ্ঞানী আর মজার মানুষ দেখছি।’
ওরা যখন বাদাবন নিয়ে চর্চা করছে সেই সময়ে নিমু ঢোলা প্যান্টের ভিতরের চোরাই পকেট থেকে চুপি চুপি এক পাইট বের করে দুই ঢোক খেয়ে নিল।
গদাই চোখ বড় করল। গফুর শুরুতেই বলে দিয়েছিল মদ নিয়ে নৌকোয় ওঠা নিষেধ আছে।
ওরা তখন কেউ স্বীকার করেনি।
গফুর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে। বিপক্ষের উকিল কথার প্যাঁচে আটকে ফেলেছে গফুরকে। সরলমনা নিরক্ষর মানুষটা বড্ড অসহায় বোধ করছে।
বিচারক জানতে চেলেন, ‘আপনি নিমুর গায়ে ওভাবে হাত তুললেন কেন বলুন তো?’
গফুর বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘হুজুর, ছাওলডা আমার আম্মারে অপমান করিছেল, তাই,’-
‘আম্মা?’
দুঁদে উকিল হোহো করে হেসে ওঠেন। বলেন, ‘স্যর শোনেন ওর কথা। এখানে আম্মা আসে কোত্থেকে, শুনি?’
বিচারক অবাক চোখে দেখছেন গফুরকে। বোঝার চেষ্টা করছেন, নদীতে নৌকোয় ভ্রমণ করতে গেছে। সেখানে আম্মা আসবে কোত্থেকে যে মায়ের অপমানের জন্যে গফুর ছেলেটাকে পালটা আঘাত করল?
উকিল ধমকে বললেন, ‘কী বলছ? পরিষ্কার করে জবাব দাও? আবোল-তাবোল বলে পার পাবে না, বলে দিচ্ছি।’
গফুর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দেখে গফুরের পক্ষের উকিল বিচারকের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমি কিছু বলতে পারি স্যর?’
‘বলুন?’
‘স্যর, বাদাবনের মাঝিরা তাদের নৌকাকে মাতৃজ্ঞান করে। মায়ের মতো সম্মান করে এই নৌকাকে। বাদাবনের নৌকায় দুটি পবিত্র দিক আছে। একটি হল নৌকার সামনের দিক আর অন্যটি হল নৌকার মাঝের অংশ। মাঝিরা এই অংশটিকে নৌকোর নাভিদেশ কল্পনা করে। তাই ওঠবার সময়ে এই দুই অংশে পা দিতে বারণ করেন।’
সামান্য দম নিয়ে বলেন, ‘হুজুর, দারুশিল্পীরা যখন নৌকা বানায় তখন নৌকার মাঝখানের যে লম্বা মজবুত তক্তা, যাকে ওরা মানুষের শিরদাঁড়া কল্পনা করে সেখানে তুলসী, সোনা, রুপো, তামা ইত্যাদি দিয়ে পুজো করে।
সুন্দরবনে জালের মতো বিছিয়ে আছে অসংখ্য নদী। নদীই ওদের জীবিকা, জীবন। বাদাবনের মানুষ এই নৌকাগুলোকে মায়ের গর্ভ হিসাবে দেখে। নৌকার মাঝের নাভি নীচের অংশকে মায়ের যোনি কল্পনা করে। তাই যখন বাইরের কেউ নৌকায় ওঠে তখন তাকে বলে দেয় এই দুই জায়গায় যেন সে পা না দেয়।
আর নৌকার উপরে কখনও কেউ উপুড় হয়ে না শোয়।
গফুর নিমুকে কয়েকবার সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল।
কিন্তু নিমু সেটা তোয়াক্কাই করেনি। ও মদ খেয়ে জামা খুলে এক সময়ে সেই জায়গায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়েছিল।
সেই দৃশ্য দেখে গফুরের মাথা গরম হয়ে যায়। গফুর রেগে গিয়ে নিমুকে ধমকে দিলে তখনি গফুরের সঙ্গে ওর তর্কাতর্কি শুরু হয়।
নিমুই প্রথমে ওর হাতের পাইট দিয়ে গফুরের মাথায় সজোরে আঘাত করে এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়।
হাঁটুর বয়সি ছেলেটার ঔদ্ধত্য আর অসভ্যতা দেখে গফুর বইঠা দিয়ে নিমুকে পালটা আঘাত করে।
সেদিন উপস্থিত বন্ধুরা স্বীকার করেছে কী ঘটেছিল। তাছাড়া সেসময়ে নদীতে আরও কয়েকটা নৌকা ছিল। মাঝিরা সকলে একজোট হয়ে নিমুর উপরে চড়াও হয়। এত বড় স্পর্দ্ধা? গফুরচাচার গায়ে হাত তুলেছে!
পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে গদাই-বিন্দুরা সেদিন কোনওরকমে হাতে-পায়ে ধরে ওখান থেকে পালিয়ে আসে।
নিমু এই অপমান ভুলতে পারল না।
বদরহাটে এসে নিমু বাবাকে ফোন করল। নিমুর বাবা প্রভাবশালী মানুষ। তিনি গফুরের নামে এফআইআর করলে পুলিশ গফুরকে অ্যারেস্ট করে।
বাদাবনের মাঝিরা এটাকে ঘোর অন্যায় বলে মনে করল। ওরা বনধ ডাকল। এর একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। গফুরের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সুন্দরবন ভ্রমণ। শুধু তাই-ই নয়, সরকার থেকে যদি ওদের প্রোটেকশন না দেয় ওরা জঙ্গলে মধু আনতেও যাবে না।
সকলেই এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয় হয় এই বন থেকে। তাই জেলে-মউলিদের চটালে বিপদ আছে মনে করে ওদের সঙ্গে একটা রফা করে।
এদিকে জেলে-মউলি ইউনিয়নের লিডার সামসুদ্দিন ব্যাপারটা দেখছে।
নিমুর পক্ষে একজন দুঁদে উকিল লড়ছেন। সুন্দরভাবে তিনি যুক্তির ঘুঁটি সাজিয়েছেন। কী করবে গরিব হতভাগা গফুর মিয়াঁ? কী ক্ষমতা আছে ওর?
সকলেই চুপ করে অপেক্ষা করছে। থমথম করছে এজলাস। বিচারক মন দিয়ে দুই পক্ষের কথা শুনলেন।
আপাতত এটুকুই।
দ্বিতীয়ার্ধে রায় ঘোষণা করা হবে।
সকলে উৎকণ্ঠিত চিত্তে অপেক্ষা করছে।
বিচারক সমস্ত কিছু শুনে রায় ঘোষণা করলেন। সব কিছু শোনার পরে গফুরের তিন বছর জেল এবং দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হল। বিচারক চেয়ার ছাড়লেন।
নিমুর উকিল সন্তুষ্ট নন। নিদেনপক্ষে ছয় বছর হাজতবাস দেওয়া উচিত ছিল।
গফুর নিষ্পলক চোখে তাকিয়েছিল বিচারকের চেয়ারের দিকে।
গফুরের পাংশুটে মুখের দিকে তাকিয়ে সামসুদ্দিন বলল, এই তিনটে বছর আমি তোমার পরিবারকে দেখে রাখব, চাচা। আমরা উচ্চতর আদালতে যাব। বাদাবনের মাঝিদের বিশ্বাসবোধকে আঘাত করেছে নিমু। তারও যোগ্য সাজা হওয়া দরকার।
নিমুর আঘাত তেমন কিছুই নয় সকলেই জানে। কিন্তু ক্ষমতার কাছে হার মানতে হয়।
বাইরে বেরিয়ে নিমুর উকিল গফুরের উকিলকে চোখ মেরে বললেন, অল্পেতেই রক্ষে পেলে, এমন কেস দিতাম গফুরকে দশ বছর জেলের ঘানি টানতে হত। কেউ বাঁচাতে পারত না।
হতবাক গফুর ধীর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে প্রিজন ভ্যানের দিকে। তার পিছনে আসছে দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা জেলে, মউলি, বাউলির দল।
গারদে ঢোকার মুহূর্তে গফুর ভাবছিল সুন্দরবনের বাঘকেও কোনও কোনও সময় হার মানতে হয় মানুষের বন্যতার কাছে।