- সেবন্তী ঘোষ
১
চিন্তামণি কু ডাকল। তরুণ নিম গাছ থেকে কোকিল উত্তর দিল কু উ উ উ। চিন্তামণি উত্তর ফেরাল। সরল কোকিল চিন্তামণির নচ্ছার ঠকানি বোঝেনি, ফলে সে আরও কয়েকবার ডেকে গেল। অট্টালিকা আর গঙ্গার মাঝে কেবল নীচে গড়িয়ে যাওয়া ঢালু মাটি। ছাদে মেলা কাপড়গুলোর ভেতর দিয়ে হঠাৎ করে প্রবল বেগে হাওয়া বইতে শুরু করল। জোয়ার এসেছে গঙ্গায়। কোকিলের মনে বিধুর বিরহ এঁকে দিয়ে মোটা ঘুঙুর দুটো একদিকে ছুড়ে দিল চিন্তা। কামনা কাতর কোকিল ডাকতেই থাকল। ভ্রূক্ষেপহীন চিন্তা উঠে গেল চিলেকোঠার ঘরে। এখন সে দোয়াত কলম নিয়ে বসবে। তারপর সেই তুলোট কাগজগুলো ভারী যত্ন করে লাল সুতোয় বেঁধে বেনারসির ভেতর গুটিয়ে রাখবে। বিয়ের কাপড় পরা হবে না কখনও, তাই সে বেনারসি বড় ভালোবাসে।
ছেঁড়া, পিঁজে যাওয়া বেনারসির ভেতর চিন্তামণির লেখাগুলো পেলাম। লাল রংয়ের ফিতেটা ভারী এঁটে বসেছে। কাগজের মধ্যে ঝুরঝুরে ফুল বেল পাতা। তবে যে জানতে পারছি চিন্তা ছিল ভারী গোলমেলে, গৃহস্থ সমাজের বাইরের? বুবলাই বলে, সমাজ থেকে যারা ঠিকরে যায়, সমাজকে আঁকড়ে ধরতে চায় তারাই বেশি, তাই পুজো আচ্চা তারাই বেশি করে। তবে চিন্তার লেখায় ভক্তির লেশমাত্র নেই। গোল গোল মোটা অক্ষরে ফাজলামি আর আবোলতাবোল।
২
চিন্তামণি এই পুরোনো বাড়িটার শেষ দিকের বারান্দার পিছনে যে নিম গাছটার কথা লিখেছে, সেটা তখন বালিকা মাত্র। যেদিন ওই গাছের সরু অথচ দৃঢ় ডালে কোকিল দেখল, লিখল, ‘সে আসিয়াছে বক্ষ জুড়ে। কৃষ্ণ রঙে যেন ময়ূরকণ্ঠী রোদ ঝলসে উঠেছে। ওই পাখির অমন রঙ যেন ঠিকরোয়। ছাদে কাপড় শুকোতে আসা মদনার মা হাকুর পাড়ল, কোন মিনসে চোকে আলো ফেলতিছে, দেক তো মনা!’
ফোন বেজে ওঠায় চিঠি পড়া থামায় তরু। আবার বুবলাই! জেনএক্সদের এই এক বিপদ! লঘুগুরু জ্ঞান নেই। একটা ম্যাও লিখে বিল্লির ইমোজি পাঠিয়েছে তাকে। তরু, আদুরে ম্যাওকে একটা খেকুরে কুকুরের ইমোজি পাঠিয়ে দেয়। এখন চিন্তামণি তাকে ডাকছে। চিঠিগুলো যেন আচারের মতো। একটু একটু তারিয়ে তারিয়ে পড়বে। ওই তো এক গোছা মাত্র। ওটিটিতে সে বারো ঘণ্টাও সিরিজ দেখেছে। পারলে এক সিটিং-এ শেষ করে দিতে পারে। প্রথমে ভেবেছিল তাই, কিন্তু গত চার-পাঁচদিন সে এক প্যারাগ্রাফ করে পড়েছে আর বাদবাকি ছেড়ে রেখে গেছে। পোকা খাওয়া জায়গাগুলোর উপর রেখে পড়বে বলে আতশকাচ কিনে এনেছে। এই পুরোনো বাড়িটার পুরো গল্প একমাত্র চিন্তাই তাকে বলতে পারবে।
৩
মুক্তিপ্রসাদ আরাম কেদারায় বসেছিল। তার চোখ সুদূরে ছড়ানো গঙ্গার ওপারে। পাটের ব্যবসায় বড় লগ্নি করা হয়ে গেল। ফাটকা খেলার মতোই জীবন তার মতো চার প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের। এইসব কাজে পরিশ্রমের দাম আছে, সততার নেই। হ্যামিলটনকে উৎকোচ দিয়ে একচ্ছত্র রপ্তানির ব্যবস্থা করছে। আর সেই কাজের রফা সামগ্রী? দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুক্তিপ্রসাদ। কী মরতে সে পাইকপাড়ার বাগানবাড়িতে হ্যামিলটন আর ম্যাক সাহেবকে ডেকেছিল! কোকিল ডেকে চলে তীব্র স্বরে। এমন অলস সময়ে ঝিম ধরে আসে। কোকিলের স্বরে বেদম রাগ হল তার। উত্তর প্রত্যুত্তর সহ কোকিল ডাকল এবং ডাকতেই থাকল। পাকপাড়ার চিড়িয়াঘরে সে হরেক বিদেশি পাখি এনেছে। হরবোলার মতো এক পাখি নচ্ছার চিন্তামণির পাল্লায় পড়ে সাহেবকে গালি দিয়ে ফেলেছিল। নচ্ছারই বটে, মুক্তি তাকে বারোভাতারির জীবন থেকে মুক্তি দিল, তাকেই কি না অপদস্থ করা! ছটফট করে মুক্তিপ্রসাদ। চৌখুপি কাটা মেঝে পেরিয়ে শ্যামলা দীর্ঘাঙ্গী কোঁকড়া এলো চুলের চিন্তাকে আসতে দেখে তার খানিক পূর্বের রাগ গলে জল হয়ে যায়। চিন্তার হাতে ঘরে তৈরি ঘিয়ে ভাজা ছাতুর পরোটা। সঙ্গে আলু বেগুন চোখা। ঠিক যেমনটি তার দ্বারভাঙ্গায় থাকা পরিবার এনে দেয়। চিন্তার পিছনে দাসীর হাতে খাঁচা খাঁটি সোনায় তৈরি মুক্তি তাকে দিয়েছে। তার ভিতর সেই শয়তান হরবোলা পাখিটা।
মুক্তি ভ্রূ কোঁচকায়, বলে, তুই বাগানবাড়ি থেকে এটাকে কখন আনলি? আমাকে না বলে গেছিলি? চিন্তার দীর্ঘ আঁখিপল্লব বিষয়ে বিস্ফারিত হয়। ও মা সে কী? আপনি তো ম্যাক সাহেবের ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন আমাকে। আপনি দিলেন সোনার খাঁচা। মেকুর এনে দিল পাখি। চম্পক অঙ্গুলি দু’পাশের দীর্ঘ দুটি হাত ডানার মতো ছড়িয়ে দেয় চিন্তা। বলে, এই, এই হুই, উড়ে যাব আমার পাখির সঙ্গে।
মুক্তি খপ করে তার চুলের মুঠি ধরে। হিসহিস করে, বলে, ভুলে যাস না এখনও তোর মালিক আমি। সবিতাকে ছেড়ে তোর কাছে পড়ে থাকি বলে নিজেকে নবাবজাদি ভাবিস তুই?
আলগোছে মুক্তির বাহুতে হাত রেখে ঝটকা দিয়ে চুল ছাড়ায় চিন্তা। ঠোঁটের কোণে বিষণ্ণ এক হাসি খেলা করে। পায়ের কাছ থেকে উঠে বাহারি দোলনায় গিয়ে বসে। দাসী মুক্তির সামনে খাবার সাজিয়ে দেয়। কোলের উপর পানের বাটা খুলে পান সাজতে থাকে চিন্তা। খাঁচা থেকে পাখি চ্যাঁচায়, ‘মাগির বড় দেমাক, মুখ পুড়ি মর মর!’
৪
বুবলাই যে এমন প্রস্তাব দেবে ভাবতেই পারছে না তরু। বলে কিনা প্রেমের সম্পর্কের নতুন নাম এখন এখন ‘প্যান!’, সবকিছু চলে সেখানে! প্রেমের আবার প্রথম দ্বিতীয় তৃতীয় লিঙ্গ বলে কী আছে? যে কেউ যে কারও প্রেমে পড়তে পারে।
তরু বলে, তোদের যে কী সাহস! একসময় তোকে আমি পড়িয়েছি সেটা ভুলে গেলি! তাও ছেলে হলে বুঝতাম। না, আমার তেমন কোনও ট্যাবু নেই। কিন্তু তুই কিছুদিন আগে মাধবের সঙ্গে ঘুরছিলি।
বুবলাই বলে, ট্রু। ওটাও অ্যাফেয়ার ছিল কিন্তু শেষ এখন। মাঝে তুমি এসে গেলে।
তরু চোখ পাকায়, আমি এসে গেলাম মানে?
বুবলাই তার কোঁকড়া চুলে ঘেরা শ্যামলবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, চিন্তামণির কথাগুলো তুমি তো আমাকেই বলছ। সেই প্রথম দিন থেকে। নিজেকে জিজ্ঞেস করো।
তরু ঘাড় ঝেড়ে বলে, সম্পর্ক মানেই প্রেম নয়, বুবলাই তিতাস সান্যাল! সবকিছুর উপর একটা করে সংজ্ঞা বসাস না। দেখ চিন্তা শয়তান কেমন ময়না কোকিলের ডাক অব্দি নকল করে! ওই নাকি মুক্তি বাবুকে বিরক্ত করার জন্যে মাঝে মাঝে ডাক নকল করত!
বুবলাই বলে, তুমি প্লিজ ওকে শয়তান বোলো না।
এক তাড়া ঝুরঝুরে পাতা সামনে নিয়ে বসে আছে তরু। গঙ্গা আগের মতোই বারান্দা থেকে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। মাঝে নোংরা ধুলো পড়া ঝোপড়া, চায়ের দোকান। আর নীচের তলার সামনের অংশ দখল হয়ে গেছে। দোতলাটি হাতে পাওয়ার পর বসবাসযোগ্য করে তুলছে তরু। বন্ধ ঘর থেকে ভাঙাচোরা পুরোনো আসবাবপত্রের মধ্যেই এই তোরঙ্গ পেয়ে গেল। দোতলার ছাদ বারান্দায় একটা শেড ছাড়া কিছুই বদলায়নি সে। সেই বারান্দায় একটা পুরোনো আরামকেদারা সারিয়ে সুরিয়ে পেতেছে। চৌখুপি মেঝে একটু পালিশ করতেই ম্যাট ফিনিশে ঝলমলিয়ে উঠেছে। তরুর পায়ের কাছে থেবড়ে বসেছে বুবলাই। প্রথম দিন থেকেই তোরঙ্গ অভিযানে তরুর সঙ্গী সে। সেখানে বসেই দেখা যায় লম্বা করিডরের শেষ প্রান্ত ঢেকে আছে এক ঝাঁকড়া নিম গাছে। তার কালচে ছেড়ে ছেড়ে যাওয়া বাকলে বয়সের ছাপ। বারান্দায় নিম ফুল পড়ে থাকে অজস্র। তার ওপরেও মৌমাছি ভনভন করে। চিঠি পড়তে থাকে তরু।
৫
আমার বদলে মুক্তিবাবু পেল দেওয়ানি। মেকুর সাহেব কেন যে আমারে কিনে নিল তখনও বুঝিনি মাইরি। আমার পাখি গালি দিল আর ওর নজর পড়ল আমার দিকে। তবে সে পুরুষের নজর ছিল না। ও মেয়েরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝে যায়। তা দেখবে কী করে? সারাক্ষণ হ্যামিল সাহেব এঁটুলির মতো গায়ে লেগে থাকে। দুজনে ঘুমোতে যায় এক ঘরে। মেকুর সাহেব বলে, মুক্তিবাবু আমাকে মানুষ মনে করেনি। কী যে বলে ওই গোরা সাহেবরা! মেয়েরা কবে থেকে মানুষ হল! তাদের তো শুধু আস্ত একটা শরীর। বিছানার কাজ, খাটার জন্য দুটো হাত, বনবন করে হাঁটার জন্য দুটো পা। মেকুর নাকি আমাকে মানুষের জীবন দেবে। বদলে ওর সঙ্গে ইস্তিরি সেজে থাকতে হবে। যা মজার কথা বলে! সবার সামনে ওর ঘরে ঢুকে দোর দিতে হবে, তারপর পাশের দরজা দিয়ে ছোট ঘরে গিয়ে ঘুমোতে হবে। ওই ঘরে থাকবে ম্যাক আর হ্যামিল সাহেব। মাগো গো মা! দুই পুরুষের যা রঙঢঙ! আমার মা রাইমনি থেটার করত। বেপাড়া থেকে তার বাঁধা বাবু গেরস্ত ঘরে তুলেছিল। কানাঘুষো বলে ওই দুর্গামোহন রায় চৌধুরী। আমার বাপ। মায়ের গলায় পান্নার লকেটে সাহেবপাড়া থেকে লিখে নিয়ে এসেছিল নামটা। লোকটা মরল কোন একটা রোগে। ফলে আমাকে নামতে হল পেশায়।
হাত থেকে কাগজ খসে গেল তরুর।
বুবলাই নিজের হাতের কাগজে রেখে সাগ্রহে খসে যাওয়া কাগজ তুলে নেয়। একটা হাত আশ্বাসের ভঙ্গিতে রাখে তরুর কোলে। রুদ্ধশ্বাসে সেই পৃষ্ঠা পড়ে। মাথা তুলে বলে, দুর্গামোহনকে চেনো তুমি?
তরু বলে, এবারে পরিষ্কার হল। এই বাড়ি কেন তরঙ্গলতা ম্যাকেঞ্জি আমাদের পরিবারে দিয়ে গেছিল। দুর্গামোহন আমার ঠাকুরদার ঠাকুরদা। থাকতেন বর্ধমানে। পরিবারে এই বাড়ির কথা সবাই জানত কিন্তু কেউ থাকতে আসেনি। বাড়ির সবাই এই বাড়ি নিয়ে কথা তুললে আশ্চর্য রকম নীরব হয়ে যেত। ওদের আরও অনেক সম্পত্তি আছে। ফলে গঙ্গার ঘাটের ধারে এমন ঘিঞ্জি এলাকায় ভেঙে পড়া, আধা দখল হওয়া একটা বাড়ি নিয়ে কারও তেমন মাথাব্যথা হল না।
বুবলাই তখন তোরঙ্গে রাখা ছেঁড়া বেনারসি টুকরোর ভিতর কাগজপত্র ঘাঁটছে। উত্তেজিত রক্তবর্ণ মুখ তার। সিপিয়া টোনের একগাদা ঝাপসা ছবির মধ্যে থেকে একটা অস্পষ্ট প্রায় ছবি তুলে আনে। ঘনিষ্ঠভাবে উপবিষ্ট দুটি পুরুষের ছবির নীচে লেখা আর্থার হ্যামিলটন, জন ম্যাকেঞ্জি। হালকা হয়ে আসা ছবিতে এক পুরুষের নরম মেয়েলি চেহারা, কামানো গাল। অন্যজনের জাঁকালো গোঁফ, শক্ত চৌকো মুখ।
বুবলাই উত্তেজিত স্বরে বলে, ভেবে দেখো,ওই, ওই সময়টা রক্ষণশীল ইংল্যান্ডে জানাজানি হয়ে গেলে এরা খুন হয়ে যেতে পারত। অস্কার ওয়াইল্ডের ঠিক এই কারণে যে ট্রায়াল হয়েছিল, সেটা ভাবো তুমি। তবে, এখনই বা কোথায় এগোলাম আমরা, বিশ্ব উদার আমেরিকার নতুন নীতি দেখছ না? সমপ্রেমের বিয়ের আইনি অধিকার থাকছে না?
তরু বলে, তাই চিন্তার মতো মেয়েকে নির্বাচন করা হয়েছিল। বিয়ের মোড়কে তাকে রক্ষিতার অবস্থান থেকে উদ্ধার করা হল। আবার অন্যদিকে হ্যামিলটন আর ম্যাকেঞ্জির নিজেদের সম্পর্ক বজায় থাকল। অন্য মেমসাহেব এসব সহ্য করত না। চিন্তা তো প্রতিবাদ করার জায়গায় ছিল না। হয়তো শরীর নামে নরকের দ্বারে তার ঘেন্নাও ধরে গেছিল। মানসম্মান পেয়ে বেঁচে গেছিল সে। আর দেখ, উত্তরাধিকার যে ছিল না তা স্পষ্ট। না হলে চিন্তামণি ওরফে তরঙ্গলতা ম্যাকেঞ্জির প্রাসাদ দুর্গামোহন রায়চৌধুরীর পরিবারে এল কীভাবে?
কাগজপত্র বেনারসির ঢিপি সরিয়ে বুবলাই হাত ঝাড়ে। ঝুরঝুরে কাগজ থেকে অক্ষর গুঁড়ো হয়ে ঝরে ঝরে পড়ে। সে বলে, এত কিছু কিউব মেলাতে যেও না। বেশি খুঁজলে ঠিক দেখবে এ বাড়ির কোনও কোনা খামচি থেকে চিন্তামণি দাসীর অয়েল পেইন্টিং বেরোবে, আর সেটি তোমার আদি কোঁকড়া চুল আর থুতনির তলার ভাঁজের সঙ্গে অবিকল মিলে যাবে! ফ্রেম টু ফ্রেম।
এতক্ষণে তরু বা তরঙ্গলতা রায়চৌধুরী হেসে ওঠে। বলে, ঠাকুরদা এই নামটা না দিলে আমি কিন্তু চিন্তামণির খোঁজখবরই করতাম না। এই বাড়ির গেটে এখনও লেখা আছে তরঙ্গলতা ম্যাকেঞ্জি। ওটা বেশ স্পষ্ট করে আবার লিখতে হবে নেমপ্লেটে।
গ্রীষ্ম দুপুরের গঙ্গার দমকা বাতাসে তখন ঘূর্ণিঝড়ে নিম ফুল আর পাতা উড়তে থাকে। ঝাঁকড়া গাছ থেকে কোকিল তখনো কু ডাকে, কু কু উউউ, কুউউ।