শিলিগুড়ি: সেবক রোডের পাঞ্জাবিপাড়ার শিব মন্দির মোড়ে এসে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন বাইকচালক অসিত রায়। তিন মাথার ওই মোড়ে লাগানো ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে তখন জ্বলছে–নিভছে হলুদ বাতি। গাড়ি নিয়ে যাবেন কি যাবেন না সেটা বুঝতে পারছিলেন না অসিত। এদিকে তখন তিন মাথার ওই মোড় দিয়ে যে যার মতো গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চলছে। কিছুটা অবাক হয়েই অসিত বললেন, ‘দিনের পর দিন এরকম চলছে। একটা ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত নেই। এসব কারণে তো রাস্তা দিয়ে চলাটা আরও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’ শুধু এই মোড়ই নয়, টিকিয়াপাড়া মোড়, মিলনপল্লি মোড়, এমনকি থানা মোড়েও এ ধরনের বাতি বিভ্রাট রীতিমতো নাজেহাল হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। ট্রাফিক পয়েন্টে ব্লিংকার বাতি নেই, নেই ট্রাফিক পুলিশও। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ট্রাফিক পয়েন্টের যৌক্তিকতা কোথায়?
এই সমস্যার বিষয়ে কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দা মুকেশ চৌধুরীর সঙ্গে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকার পর ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, ‘এগোব নাকি পেছব, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। এই মুহূর্তে অনেক স্কুল পড়ুয়াও রাস্তা পারাপার করে। তাহলে তাদের কী পরিস্থিতি হয় ভাবুন।’ টিকিয়াপাড়া মোড়ে দুর্ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। ওই মোড়ের এক ব্যবসায়ী বিজন রায় বললেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মোড়ে যদি ট্রাফিকের এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক পরিস্থিতি থাকে, তা হলে কী বলা যায়? ভাগ্য ভালো এখনও বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা হয়নি।’ শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর অবশ্য বলছেন, ‘কিছু কিছু ট্রাফিক পয়েন্টে আমরা এই ধরনের ব্লিংকার ব্যবহার করছি, যাতে সাবধানভাবে মানুষ চলাফেরা করেন। কোনও সমস্যার সৃষ্টি হলে ট্রাফিক পুলিশরাও যাচ্ছেন, তবে সেখানে স্থায়ীভাবে ট্রাফিক পুলিশ রাখারও ব্যবস্থা করা হবে।’
শহর শিলিগুড়িতে একসময় শহরের মূল রাস্তার প্রতিটি মোড়েই ট্রাফিক সিগন্যাল বসানো হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে প্রয়োজনে বিষয়টা মাথায় রেখে বেশ কিছু মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল খুলেও দেওয়া হয়েছিল। এদিন এব্যাপারে কথা হচ্ছিল, শহরের বাসিন্দা শুভঙ্কর রায়ের সঙ্গে। বললেন, ‘প্রথমত বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে যে সিগন্যাল সবুজ হবে, নাকি লাল হবে। গাড়ি স্লো করার কারণে দুর্ঘটনার মুখে পড়ার সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে।’ আসলে এই ধরনের ট্রাফিক পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক পুলিশেরও না পাওয়াটা আরও সমস্যার, বলছিলেন শহরের আরেক বাসিন্দা সুনীল মাহাতো। বাইকচালক উপেন্দ্র সিংয়ের কথায়, ‘আসলে প্রশাসন এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন না থাকলে আমাদের আরও সমস্যার মুখেই পড়তে হবে।’ সব মিলিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, রাস্তার একাংশে ট্রাফিক সিগন্যালের হলুদ বাতি বিভ্রাটে জেরবার সাধারণ মানুষ।