শমিদীপ দত্ত, শিলিগুড়ি: রাত তখন অনেক। টহলদারি ভ্যানে এলাকায় ঘুরছিলেন শিলিগুড়ি (Siliguri) থানার আইসি (IC) প্রসেনজিৎ বিশ্বাস। জলপাই মোড়ে এক চায়ের দোকানে থামলেন। চা খাওয়ার সময় হঠাৎ করেই দোকানের তরুণী জানতে চান, ‘থানায় আইসি একজন না দুজন?’
প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যান আইসি। বললেন, ‘একজনই। সেটা আমি। কিন্তু কেন?’ ওই তরুণী এরপর হোয়াটসঅ্যাপে থাকা একটি নম্বর দেখিয়ে বললেন, ‘উনিও তো নিজেকে আইসি পরিচয়ই দিয়েছেন।’ শহরে থানার আইসির ডামি ঘুরে বেড়াচ্ছেন শুনে আকাশ থেকে পড়লেন প্রসেনজিৎবাবু। জানতে পারলেন ওই ‘আইসি’ নাকি নিয়মিত হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগও রাখেন ওই তরুণীর সঙ্গে।
নম্বর দেখে তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ওই নম্বর এক পুলিশকর্মীরই। এখানেই শেষ নয়, কিছুদিন আগে এক ব্যক্তি থানায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। থানায় এসে তিনি তঁার নাম করে খোঁজ করেন। পরে জানান, ১০০ ডায়ালের পর তাঁর সঙ্গেই নাকি ওই ব্যক্তির কথা হয়েছে। তিনিও নাকি নিজেকে আইসি শিলিগুড়ি থানা হিসেবেই পরিচয় দিয়েছেন।
একটা-দুটো নয়, পুলিশকর্মীদের একটা অংশের এ ধরনের কার্যকলাপে রীতিমতো বিব্রত থানার আসল আইসি। বাদ যাচ্ছেন না থানার সেকেন্ড অফিসার দীপ্তজিৎ ধরও। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ওসি বেশিরভাগ সময় থানার মূল গেট দিয়ে ঢোকার পরেই একপাশে থাকা পিসি পার্টি রুমের সামনে থাকা টেবিলে বসে থাকছেন। সাধারণ মানুষ থানায় ঢোকার পরেই যাতে তিনি সমস্যার কথা শুনতে পারেন সেটাই মূল উদ্দেশ্য মনে হলেও, নিজের আসল পরিচিতি বাড়ানোর কারণও এর পেছনে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে থাকায় প্রসেনজিৎবাবু ঘনিষ্ঠমহলে অনুরোধও করেছেন, কেউ যদি বাইরের থেকে এসে আইসির সঙ্গে আগাম কথা হয়েছে বলে জানান, তাহলে প্রথমেই যেন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আইসিকে দেখতে কেমন? তাঁর ফোন নম্বর কী? প্রয়োজনে কমিশনারেটের ওয়েবসাইটে ছবি দেখিয়ে দেওয়ারও অনুরোধ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি আসল আইসি। পুলিশ মহলের একটা অংশের মত, কন্ট্রোল রুমেও আইসি-ওসি রয়েছেন। শিলিগুড়ি থানার ওপরেই সেই কন্ট্রোল রুম থাকায় হয়তো সেখান থেকেই কোনও বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি ওই কন্ট্রোল রুম পুলিশলাইনে চলে গিয়েছে। শুধু কন্ট্রোল রুমই নয়, শিলিগুড়ি থানার ওপরে একাধিক বিভাগই এতদিন থাকলেও সেটা পুলিশলাইনে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই বিভ্রান্তি সচেতনভাবে একটা অংশ তৈরি করছে কি না, তা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটান পুলিশের ডিসিপি (ইস্ট) রাকেশ সিং বলেন, ‘এধরনের কোনও বিভ্রান্তির কথা এখনও শুনিনি। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’