সাগর বাগচী, শিলিগুড়ি: উড়ালপুল থেকে দ্রুতগতিতে নামছে একের পর এক ছোট-বড় গাড়ি। কিন্তু তাদের সামনে তখন বিপজ্জনকভাবে পথ আটকে চালকদের থেকে চলছে জোর করে চাঁদা আদায়। কিছু বেপরোয়া তরুণের দাবি কার্যত বাধ্য হয়ে মেটালেন সিটি অটো, অটো, টোটো থেকে বিভিন্ন গাড়ির মালিক সহ চালকরা। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ির (Siliguri) টিকিয়াপাড়ার উড়ালপুলে নামার মুখে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে মহরম কমিটির নামে চাঁদা তোলা হলেও তা রুখতে পুলিশকে (Siliguri Police) দেখা গেল না। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ মাথাচাড়া দিচ্ছে। রাস্তা আটকে চাঁদার জুলুম হলে কোথাও জানিয়ে কোনও লাভ হয় না বলে অনেক ভুক্তভোগীই জানিয়েছেন।
শিলিগুড়ির শুধু টিকিয়াপাড়াই নয়, মহাবীরস্থান থেকে ঝংকার মোড় অবধি বিবেকানন্দ রোডেও দেদারে চলছে যানবাহন দাঁড় করিয়ে টাকা আদায়। ‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে’ বলে দায়িত্ব সেরেছেন শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের (Siliguri Police Commissionerate) ডিসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বচাঁদ ঠাকুর।
কিন্তু শহরের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে যখন জুলুমবাজি চালিয়ে টাকা আদায় হচ্ছে তখন কেন পুলিশের দেখা মিলল না- এমন প্রশ্ন উঠছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবিকা নন্দী এদিন টোটোয় উড়ালপুল হয়ে দেশবন্ধুপাড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন। ঘটনার সময় টোটোয় তিনি একাই যাত্রী। টিকিয়াপাড়া সবজি বাজারের কাছে স্পিডব্রেকার পার করতেই জনা দশেক তরুণ টোটো আগলে দাঁড়ায়। এক তরুণ টোটোয় চেপে বসে। আচমকা টোটো আটকানোয় ঘাবড়ে যান দেবিকা। তখনই একজন মহরমের চাঁদার রসিদ দিয়ে চালকের কাছ থেকে টাকা দাবি করতে থাকে। ওই টোটোর পিছনে তখন দাঁড়িয়ে গিয়েছে আরও কিছু চার চাকার গাড়ি, বাইক, স্কুটি। ওই তরুণরা চালককে টোটোটি রাস্তার পাশে নিয়ে আসতে বাধ্য করে। বাকিরা পিছন থেকে আসা টোটো, অটোগুলিকে তখন টার্গেট করে দাঁড়িয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দেবিকার কথায়, ‘শহরের মাঝে এভাবে অতীতে কখনও টাকা তুলতে দেখিনি। এ যেন একাবারে দাদাগিরি। এমনটা চললে, মর্জিমাফিক যে কেউ রসিদ বানিয়ে টাকা তুলতে নেমে পড়বেন। সবকিছুর একটা নিয়ম রয়েছে। শহরের রাস্তায় এমন জিনিস কেন পুলিশ প্রশাসন দেখছে না জানি না।’ পণ্যবোঝাই এক ম্যাটাডোর থামিয়ে একইভাবে টাকা তোলা হচ্ছিল। প্রথমে আপত্তি জানালেও পরে চাঁদা দিতে বাধ্য হন ম্যাটাডোরের চালক বিক্রম দাস। তাঁর কথায়, ‘যেভাবে ব্যস্ত রাস্তার মাঝে ওরা ঝাপিয়ে পড়ে টাকা তুলছে তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কারা টাকা তুলছে, সেই টাকা আদৌ ভালো কাজে ব্যবহৃত হবে কি না কেউ কিছুই জানে না। এখানে পুলিশের উপস্থিতি খুবই জরুরি।’
শুধু শিলিগুড়ি শহরই নয়, শহর লাগায়ো সাউথ কলোনি, ফুলবাড়ির মতো জায়গাতেও দেদারে রাস্তা আটকে একইভাবে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ।