রাহুল মজুমদার, শিলিগুড়ি: একই বাড়িতে নয়জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, সবকিছু জেনেও মুখ বুজে ছিল স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। বুধবার রাতে এলাকায় হইচই হতেই তড়িঘড়ি নয়জনকে তুলে নিয়ে যায় শিলিগুড়ি (Siliguri) আশিঘর ফাঁড়ির পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাড়ির মালিক নির্মল মজুমদারকে।
নয় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতরা হল যতীন্দ্রচন্দ্র রায়, বাউল রানি, বালুচন্দ্র রায়, গোলাপি রানি, ঝর্ণা রানি, সঞ্জীব রায়। বাকি তিনজন নাবালককে জুভেনাইল আদালতে পাঠানো হবে। এতজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী গ্রেপ্তার হলেও পুলিশ অভিযুক্তদের হেপাজতে না নেওয়ায় উঠছে প্রশ্ন। যাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও শহরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলছেন ওই অনুপ্রবেশকারীদের পুলিশ হেপাজতে নেওয়া হবে। থানা এবং পুলিশকর্তার কথার মিল না থাকায় পুরো বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। তবে কি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের অন্ধকারে রেখেই অভিযুক্তদের আদালতে পাঠিয়েছে ভক্তিনগর থানার পুলিশ? এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সরকারি আইনজীবী মৃন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘পুলিশ হেপাজতের আবেদন জানায়নি। ধৃতদের বিরুদ্ধে ১৪ এ এবং ১৪ বি বিদেশি আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। তাই বিচারক অভিযুক্তদের ১৪ দিনের জেল হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’ শিলিগুড়ি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার রাকেশ সিং বলেন, ‘অভিযুক্তদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার ফকদইবাড়ির বাসিন্দা নির্মল তাঁর বাড়িতে নয়জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। অভিযুক্তরা সকলেই বাংলাদেশের রংপুরের বাসিন্দা। ইসলামপুরের কাছে সীমান্ত দিয়ে মাস দুয়েক আগে ভারতে প্রবেশ করে বলে খবর। এরপর এক মাস ইসলামপুরেই ছিল। মাসখানেক আগে ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়িতে আসে। অভিযুক্ত নির্মল তাঁর বাড়িতে মোটা টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেন বলে খবর। ধৃতদের কারও কাছেই কোনও পাসপোর্ট বা ভিসা নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তরা রংপুরের এক মহিলা এজেন্টকে মাথা পিছু ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা করে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, শিলিগুড়িতে এসে গা-ঢাকা দেওয়া এবং ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার জন্য বাড়ির মালিককে মাথা পিছু ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে বাড়ির মালিক সামলে নেবেন বলে অনুপ্রবেশকারীদের জানানো হয়েছিল। বুধবার রাতে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। স্থানীয়রা ভিড় জমাতেই এলাকায় সাময়িক উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই সময় আশিঘর ফাঁড়ি থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে থাকায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান আশিঘর ফাঁড়ির ওসি পাপ্পু সিং। ওসি পৌঁছেই ওই বাড়ির মোট ১৯ জন ভাড়াটে এবং মালিককে তুলে নিয়ে যান। সেখানে প্রত্যেকের নাম এবং পরিচয় জানা হয়। আইডি কার্ড দেখে ১০ জন ভাড়াটেকে ছেড়ে দিলেও বাকি ৯ জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং বাড়ির মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, বাড়ির মালিক ওই এলাকায় এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেন। এর আগেও একাধিক বাংলাদেশিকে অভিযুক্ত এপারে নিয়ে এসে আশ্রয় দিয়ে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড তৈরি করে দিতে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ। তার বিনিময়ে অভিযুক্তদের কাছ থেকে মোটা টাকা নেওয়া হয়েছে বলে খবর। ওই এলাকায় একটি চক্র দীর্ঘদিন করে এই কাজ করছে বলে খবর রয়েছে।