রণজিৎ ঘোষ, শিলিগুড়ি: পুরনিগমের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি জমিকে ব্যক্তিগত বলে দেখিয়ে প্লটিং করে বিক্রির ছক ভেস্তে গেল। উত্তরবঙ্গ সংবাদে খবরের জেরে পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব (Goutam Deb) ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরকে দিয়ে ওই জমির সমীক্ষা করান। সেই সমীক্ষার রিপোর্টে জানা গিয়েছে, জমিটি সরকারি। সঙ্গে সঙ্গে মেয়র সেখান থেকে সমস্ত অস্থায়ী নির্মাণ ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলার তথা পুরনিগমের মেয়র পারিষদ দিলীপ বর্মনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা দিলীপই এই জমিটি প্রথমে সরকারি বলে সেখানে সাইনবোর্ড বসিয়েছিলেন। আবার প্লটিং করে বিক্রির সময় তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘ওটা সরকারি জমি না। এক ব্যক্তির জমি। তিনি হয়তো বিক্রি করে দিচ্ছেন।’ কিন্তু স্থানীয় মানুষের বক্তব্য ছিল, নদী সংলগ্ন এই জমি সরকারি। জমি মাফিয়ারা এটা প্লটিং করে বিক্রি করে দিচ্ছে। মেয়র গৌতম দেব বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েই আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের দিয়ে এলাকায় সমীক্ষা করিয়েছি। সেখান থেকে বলা হয়েছে যে, ওটা সরকারি জমি। এর পরেই আমি সমস্ত অবৈধ নির্মাণ ভেঙে দিয়ে জমিটি সুরক্ষিত রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’
শিলিগুড়ির (Siliguri) বিভিন্ন এলাকায় পরিত্যক্ত এবং বিতর্কিত জমি দেখলেই সেখানে একাংশ জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে প্রথমে সরকারি জমি বলে সাইনবোর্ড বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন এভাবে অপেক্ষার পরও কোনও দাবিদার না এলে সেই জমি প্লটিং করে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের চম্পাসারির ঢাকনিকাটা এলাকার মহিষমারি নদী সংলগ্ন এক বিঘার কিছু বেশি জমি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কয়েকমাস আগে জমিটি দখলের খবর পেয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলার দিলীপ বর্মন সেখানে পৌঁছে ‘সরকারি জমি’ লেখা সাইনবোর্ড বসিয়ে দেন। তারপর থেকে জমিটি ফাঁকাই পড়ে ছিল।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় কিছু লোকজনকে জমিটি মাপজোখ করতে দেখেন স্থানীয়রা। কয়েকদিনের মধ্যেই সেখানে প্লটিংয়ের কাজ শুরু হয়ে যায়। ২৭ মার্চ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সরকারি সাইনবোর্ড লাগানো জায়গায় প্লট করে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেখানে একাধিক অস্থায়ী ছাউনিও তৈরি হয়েছে। প্লট করে প্রায় দেড় কোটি টাকায় ওই জমি বিক্রি হচ্ছিল বলে জানা যায়। যদিও স্থানীয় কাউন্সিলারের বক্তব্য ছিল, ‘ওটা হাকিমপাড়ার ঘোষ পরিবারের জমি। আমি ভুল করে সেখানে সরকারি বোর্ড বসিয়েছিলাম।’
২৮ মার্চ উত্তরবঙ্গ সংবাদে সেই খবর প্রকাশিত হয়। তার পরেই মেয়র তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার মেয়র স্পষ্ট জানিয়েছেন, ওটা সরকারি জমি। রিপোর্ট পেয়েই সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ওই জমি থেকে সমস্ত অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। দিলীপ অবশ্য এদিন এই ইস্যুতে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।